প্রযুক্তির খবর (ডিসেম্বর, ২০২১)

(চলছে)

১ ডিসেম্বর : কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য ভিড়ের মধ্যে মানুষকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করছে মোবাইল রোবট

একটি মোবাইল রোবট তৈরি করা হয়েছে যা মানুষদের মধ্যকার দূরত্ব পরিমাপ করতে পারে ও রোল করে মানুষের কাছে গিয়ে তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে পারে যে তারা বেশি কাছাকাছি আছে। এটি এক্স্যাক্টলি রোবোকপ না, কিন্তু বলতে পারেন এর মাধ্যমে অটোমেটেড রুল এনফোর্সমেন্টের যুগে আমরা পা রাখলাম।

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র আদর্শ জগন সত্যমূর্তি প্লস ওয়ানে লেখেন, এই রোবটে ডেপ্‌থ পারসেপশন আছে যা দিয়ে অবজেক্ট বা মানুষদের মধ্যকার দূরত্ব পরিমাপ করা যায়। এই রোবটটি একই সাথে মোবাইল বলে, এটি একই সাথে ক্রাউডেড স্পেসে মানুষের কাছে যেতে পারে ও তাদেরকে সেইফ ডিস্টেন্স মেইন্টেইনের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারে।।” পেপারটিতে বলা হয়েছে, এটি একটি “মাউন্টেড ডিসপ্লে” এর সাহায্যে করা হয়। পেপারটির লেখকগণ সিডিসি রিকমেন্ডেড দুই মিটার দুরত্বকে সেইফ ডিস্টেন্স হিসেবে সেট করেছে। অবশ্য পলিসি চেঞ্জ করা হলে রোবটকে রিপ্রোগ্রাম করা যাবে। দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের দূরত্ব সম্পর্কে সতর্ক করা রোবট বানানো এমন কঠিন কিছু না, কিন্তু এই রোবটের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট আছে। মানুষের মধ্যকার দূরত্ব কতটা তার ভিত্তিতে এটি তার কাজকে প্রায়োরিটাইজও করতে পারে, মানে যারা বেশি কাছে এটি তাদের কাছে আগে যাবে।

এই রোবটটি এর নিজস্ব ক্যামেরা ও LiDAR সিস্টেম দিয়ে ক্রাউড সিনগুলো ইমিটেট করে। এটি সিসিটিভি ক্যামেরার সাথেও যুক্ত করা যেতে পারে। সেই সাথে এটিতে থার্মাল ক্যামেরাও যুক্ত আছে, যার সাহায্যে সম্ভাব্য জরে আক্রান্ত লোকদেরকেও এটি চিহ্নিত করতে পারে। এর মাধ্যমে এটি সেই লোকগুলোকে পুলিসের কাছে ধরিয়ে দিতে পারে, সেই সাথে কন্টাক্ট ট্রেসিং এর ক্ষেত্রেও এই তথ্য ব্যবহার করতে পারে। পেপারটির লেখকগণ দাবি করেছেন যে, এটিকে ডি-আইডেন্টিফিকেশনের সাথে কম্বাইন করা হবে, যাতে প্রাইভেসি প্রোটেক্ট করা যায়, তবে এই ফিচারটি যে পরিবর্তিত হবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই। পেপারে স্বীকার করা হয়েছে যে, রোবটটি দুজন লোক স্ট্রেঞ্জার নাকি পরিচিত বা একই পরিবারের কিনা তা বুঝতে পারেনা। এই দিকটা সেই সব স্থানে রোবটটির কার্যকারিতার একটি সীমাবদ্ধতা হতে পারে, যেখানে ভিড়ের মধ্যে একই পরিবারের অনেক লোক আছে।

তবে কার্যকারিতা যাই হোক, রোবটটি অনেক মানুষকেই নিয়ম মানতে বাধ্য করবে এমনটা আশা করা যায়। এরা কাজ করছে এই ভেবেই হয়তো অনেকে বাড়ির বাইরে বের হবেনা, যা এই কোভিড কন্ট্রোলের একটা ভাল পদ্ধতি! আপনাদের এই রোবটের অস্তিত্বকে কোন ডিস্টোপিয়ান সায়েন্স ফিকশন নোভেলের কাহিনীর মত মনে হতে পারে, কিন্তু পেপারে এও সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, সেই সব স্বাস্থ্যকর্মীর কথা ভাবুন, যারা তাদের হেলথ রিস্ক জেনে বাড়ির বাইরে বের হয়ে ভিড়ের মধ্যে কাজ করছে আপনাদের সতর্ক করার জন্য। এই রোবটটি তাদের কাজ লাঘব করবে, এবং তারা যাদের কমিউনিটিকে আরও কার্যকরীভাবে সেবা প্রদান করতে পারে তা নিশ্চিত করবে, সেই সাথে তাদের হেলথরিস্কও কমিয়ে দেবে।

তথ্যসূত্র
1. https://journals.plos.org/plosone/article?id=10.1371/journal.pone.0259713
2. https://www.eurekalert.org/news-releases/935940

২ ডিসেম্বর : ২.৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে প্রথম ভার্চুয়াল রিয়াল এস্টেট ক্রয় করল মেটাভার্স, ব্যবহার হবে ফ্যাশন শো হস্টিং এর কাজে

সম্প্রতি একটি ফার্ম নিজেদেরকে “বিশ্বের প্রথম ভারচুয়াল রিয়াল এস্টেট কোম্পানি” বলে দাবি করেছে, এবং এটি থ্রিডি ভারচুউয়াল রিয়ালিটি প্লাটফর্ম ডিসেন্ট্রাল্যান্ডে (Decentraland) একটি ৫০০ বর্গমিটার (৫,৩৮২ বর্গফুট) জমি কিনেছে, আর এর মধ্য দিয়ে এমন একটি প্রোপার্টি বিক্রির রেকর্ড স্থাপন হয়েছে যার কোন ফিজিকাল অস্তিত্ব নেই। ডিসেন্ট্রাল্যান্ড হচ্ছে একটি মেটাভার্স যেখানে মানুষ জমি কিনতে পারে, দালানকোঠা, পার্ক ইত্যাদি তৈরি করতে ও ভিসিট করতে পারে, তাদের বন্ধু বা বন্ধুদের অ্যাভাটারের সাথে সাক্ষাত করতে পারে।

তবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে জায়গা কেনার জন্য পে করা আসলে নতুন কিছু নয়। গেমাররা ভার্চুয়াল আইটেম কেনার জন্য অর্থ পরিষোধ করে আসছে, যেমনটা ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফটের মত গেইমগুলোতে দেখা যায়। কিন্তু এখন যেটা হলো সেটা একটি কোম্পানির জন্য বড় রকমের একটা বিনিয়োগ, এবং তারা মনে করছে যে এখান থেকে তারা লাভবান হবে। এই ব্যাপারটাই প্রথম ঘটল।

এই প্রোপার্টিটা যারা কিনেছে তাদের নাম মেটাভার্স গ্রুপ। তারা তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, “আমরা বিশ্বাস করি Ready Player One হবে আমাদের ব্যবসা ও রিয়াল এস্টেটের প্রতিনিধি। … এবং এভাবে মেটাভার্স প্রোপার্টির উদ্ভাবন ভার্চুয়াল রিয়ালিটির নতুন পরিসরকে উন্মোচন করল।” এদিকে মেটাভার্স গ্রুপ হলো টোকেন্স ডট কমের সাবসিডারি, এর সিইও অ্যান্ড্রু কিগুয়েল বলছেন, “আমরা বৃহত্তম পাবলিক মেটাভার্স ল্যান্ড একুইজিশনের মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করতে পেরে খুশি।… মেটাভার্স গ্রুপে ইতিমধ্যেই যে রিয়াল এস্টেট রয়েছে, এটি তার সাথে যুক্ত হবে।”

মেটাভার্স গ্রুপ তাদের ওয়েবসাইটে দাবি করছে যে, এর গ্লোবাল হেডকোয়ার্টার অবস্থিত ডিসেন্ট্রাল্যান্ডের ক্রিপ্টোভ্যালেতে, যদিও এর ফোন নাম্বারের এরিয়া কোডটি কানাডার অন্টারিও। এরা “first virtual real estate company in the world, offering exposure to the burgeoning industry of virtual land via the metaverses” বিজ্ঞাপন দিয়ে ভারচুয়াল রিয়াল এস্টেট এর কেনা বেচা ও ভাড়া নেয়ার সারভিস দিচ্ছে। যে জায়গাটি তারা ২.৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়ে কিনেছে তা অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবহারকারীদের জন্য ফ্যাশন শো হস্ট করার জন্য ব্যবহৃত হবে। ডিসেন্ট্রাল্যান্ড ফাউন্ডেশনের হেড অফ কন্টেন্ট স্যাম হ্যামিলটন বলেন, “মেটাভার্সের বৃদ্ধির পরবর্তী মেসিভ এরিয়া হচ্ছে ফ্যাশন।… তাই ডিসেন্ট্রাল্যান্ডের ফ্যাশন প্রিসিংক্টের কেন্দ্রে জমি কিনে মেটাভার্স খুবই সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে।”

তথ্যসূত্র
1. https://metaverse.properties/
2. https://www.independent.co.uk/life-style/gadgets-and-tech/metaverse-property-decentraland-nft-decentraland-b1965973.html
3. https://metaverse.properties/about/
4. https://www.businesswire.com/news/home/20211123005825/en/Tokens.com%E2%80%99s-Subsidiary-Closes-the-Largest-Metaverse-Land-Acquisition-in-History
5. https://twitter.com/tokens_com/status/1463189948153176071?ref_src=twsrc%5Etfw

৬ ডিসেম্বর : তৈরি করা হলো মানুষের মত ফেশিয়াল এক্সপ্রেশন দিতে সক্ষম রোবট আমেকা

যুক্তরাজ্যের রোবটিক্স কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারড আর্টস একটি ভিডিওতে “বিশ্বের সবচেয়ে এডভান্সড হিউম্যান শেপড রোবট”‘ আমাদের সামনে এসেছে, এবং এটি আসলেই অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার। রোবটটির নাম Ameca. রোবটটি অনেকগুলো ফেশিয়াল এক্সপ্রেশন দেখিয়েছে যেগুলো আমাদের মত মানুষের কাছে খুবই বিশ্বাসযোগ্য। রোবটটি তার সিন্থেটিক মাসল মুভমেন্ট ও ফাইন মোটর কন্ট্রোল দিয়ে মানুষের মত এই মুখভঙ্গিগুলো করে দেখিয়েছে যেগুলো এতদিন কেবল মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব ছিল।

বর্তমানে আমেকা হচ্ছে এক্সপ্রেশনের আবিষ্কারের জন্য একটি টেস্ট প্লাটফর্ম, কিন্তু গবেষকদের লক্ষ্য হচ্ছে এই রোবটটির সাথে একটি অনবোর্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত করে দেয়া, যাতে এটি মানুষের সাথে কথা বলার সময় ইন্টারেক্ট করতে ও জবাব দিতে পারে, সেই সাথে মানুষের ফেশিয়াল এক্সপ্রেশন বুঝতে ও নিজে ফেশিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করতে পারে। এই হিউম্যানয়েড রোবটটিকে একটি ওপেন প্লাটফর্ম হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছিল, উদ্দেশ্য ছিল সফটঅয়ার ডেভলপমেন্ট, হার্ডঅয়ার আপগ্রেড, এবং ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের পর্দার বাইরে একটি “অলটার্নেটিভ ইন্টারফেস” প্রদান। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বলা হচ্ছে, “স্ক্রিনে তাকিয়ে ও কিবোর্ডে টাইপ করার বদলে এখন আমরা মেশিনের সাথে আরও বেশি মানবিকভাবে কথা বলতে পারব, যেমনটা একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সাথে কথা বলে। মেশিনের উচিৎ মানুষের হাসি, মাথার নড়নচড়ন, বা হাতের নড়াচড়া বুঝতে পারা। … মেশিনেরও আমাদের সাথে কমিউনিকেট করার জন্য মুখমণ্ডল ও হাত দরকার, কারণ তাতে সেটা আরও বেশি প্রাকৃতিক হবে ও তাকে বেশি করে বুঝতে পারা যাবে।”

হ্যাঁ, এই রকম রোবট দেখে আপনি একে টার্মিনেটর বা আইরোবটের সাথে তুলনা করে উদ্বিগ্ন হতেই পারেন, কিন্তু কোম্পানিটি বলছে আপনাদের চিন্তার কিছু নেই, কারণ এটি “মানুষ মারার কাজে খুবই কাঁচা”, এর চেয়ে বরং আপনাদের অটোমেটেড ড্রোন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ যা ইতিমধ্যেই পুরোপরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষকে গুপ্তহত্যা শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে আমেকাকে একদিন হয়তো বাসায় রোবটিক এমপ্লয়ি হিসেবে কাজ দেয়া যাবে, বা কোন ইভেন্টে তাকে গেস্টদের সাথে ইন্টারেক্ট করার কাজ দেয়া যাবে। আমেকা নিয়ে কাজ চলছে, কিন্তু এখনই একে কেনা সম্ভব বা ভাড়ায় নেয়া সম্ভব।

আমেকার ভিডিওটি দেখে মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। কেউ কেউ তাদের ভয় ও উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে, আবার কেউ কেউ খুব ইমপ্রেসড হয়ে প্রশংসা করেছে। যাই হোক, ইঞ্জিনিয়ারড আর্টস এখানেই থেমে যাচ্ছে না। আমেকা তাদের তৈরি করা অনেকগুলো রোবটের মধ্যে একটি মাত্র, যে রোবটগুলোকে তারা বিভিন্ন কাজের জন্য তৈরি করেছে। যেমন Mesmer রোবটটি অসাধারণ সঠিকতার সাথে আপনার নড়াচড়াকে নকল করতে পারে, Quinn হলো একটি কথা বলা মাথা যা কাস্টোমারদেরকে পেশাদারভাবে হ্যান্ডল করতে পারে, Robothespian রোবটটি অনেক ভাষায় কথা বলতে পারে, সেই সাথে তাকে কোন ইভেন্টে কাস্টোমারদেরকে চার্ম করার জন্য কাস্টোমাইজও করা যায়। এরা বিভিন্ন চলচ্চিত্রের জন্যেও কাস্টোম রোবট তৈরি করে থাকে।

তথ্যসূত্র
1. https://youtu.be/IPukuYb9xWw
2. https://www.engineeredarts.co.uk/robot/ameca/

৭ ডিসেম্বর : আগামী বছর মানুষের মস্তিষ্কে নিউরালিংক প্রথম ব্রেইন চিপ ইমপ্ল্যান্ট করতে যাচ্ছে, বলছেন মাস্ক

হিউম্যান ব্রেইন ইন্টারফেইস টেকনোলজি কোম্পানি নিউরালিংক এর কো-ফাউন্ডার ইলন মাস্ক বলেছেন, তার কোম্পানি আগামী বছরে মানুষের মস্তিষ্কে কম্পিউটার চিপ ইমপ্ল্যান্ট করার আশা করছে, আর সেটা শুরু হবে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির রোগীদের দিয়ে। কোম্পানিটি এই কাজটির জন্য আগে যে সময়ের কথা বলছিল, তার থেকেও ২ বছর পূর্বে ২০২২ সালেই এখন এই ইমপ্ল্যান্টেশন হবার কথা জানানো হলো। নিজেদের অঙ্গসমূহের ওপর যে সকল মানুষের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই তারা এই যন্ত্রটির সাহায্যে ডিজিটাল ডিভাইসসমূহের সাথে ইন্টারফেস করতে পারবে, এবং তার দ্বারা ব্রেইন ওয়েভ ব্যবহার করে তারা সরাসরি শপিং অর্ডার করা, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা এবং ইন্টারনেটে ব্রাউজ করার মত কাজ করতে পারবে।

এই বছরের প্রথম দিকে নিউরালিংক একটি বানরকে কেবল তার ব্রেইন ওয়েভ দিয়ে একটি ভিডিও গেইম খেলার ঘটনা দেখিয়েছিল, কিন্তু তখন মাস্ক বলেছিলেন মানুষের ক্ষেত্রে এটি করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সিইও কাউন্সিল সামিটে মাস্ক বলেন, “বানরদের মধ্যে নিউরালিংক ভালই কাজ করছে, এব্বং আমরা অনেক টেস্ট করছি, যাতে এটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য হয়, এবং নিরাপদে এটি খুলেও ফেলা যায়। … আমরা আশা করি পরের বছর এফডিএ এপ্রুভালের পর আমরা এটি স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত টেট্রাপ্লেজিক্স, কোয়াড্রিপ্লেজিক্স রোগীদের ওপর এটি ব্যবহার করতে পারব, যা মানুষের ওপর এর প্রথম ব্যবহার হবে।”

এই চিপটিকে মস্তিষ্কের সেই অংশে ইমপ্ল্যান্ট করা হয় যা ভলান্টারি মুভমেন্ট বা ঐচ্ছিক সরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা এরপর লিংক নামক একটি বৃহত্তর অ্যারেতে সংযুক্ত হয়, যা নিউরাল সিগনালগুলোকে প্রোসেস, স্টিমুলেট ও ট্রান্সমিট করতে পারে। মাথার বাইরে থেকে অয়ারলেস চার্জিং এর মাধ্যমে একে চার্জ দেয়া যায়, এবং অয়ারলেসভাবে বিভিন্ন ডিভাইসের সাথে এটি সংযুক্ত হতে পারে যার ফলে ট্রেডিশনাল টাচ ইনপুট না দিয়েই সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিউরালিংক দাবি করে যে, এই ইলেক্ট্রোড সিস্টেম এতটাই সূক্ষ্ম যে মানুষ একে ইমপ্ল্যান্ট করতে পারবে না, আর তাই তারা একটি রোবট সিস্টেম ডেভলপ করছে যা এই টেকনোলজিতে ঠিক সেই স্থানেই প্রবেশ করাবে যেখানে করা লাগবে। মাস্ক বলেন, “আমি মনে করি, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে ভুক্তভোগী কোন মানুষের ফুল-বডি ফাংশনালিটি রিস্টোর করার সুযোগ আমাদের আছে। মানে আমি মনে করি আমাদের একটা চান্স আছে, আর আমি সেই চান্সেই জোর দিচ্ছি, যার ফলে যে ব্যক্তি হাঁটতে পারে না বা তার হাত ব্যবহার করতে পারে না সে আবার হাঁটতে সক্ষম হবে।”

যাই হোক, এখন এই বিষয়ে কেবল নিউরালিংক এর কথাই জোরের সাথে শোনা গেলেও তারাই যে কেবল ব্রেইন-ইন্টারফেইস ডিভাইস তৈরি করছে তেমনটা নয়। গত এপ্রিলে ব্রেইনগেট একটি ডিভাইস তৈরি করেছিল যা দিয়ে একজন প্যারালাইজড মানুষ তার মস্তিষ্ক দিয়ে একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল, এবং এই রেজাল্ট খুবই প্রমিসিং ছিল। এর আগে বেশিরভাগ ইলেকট্রোড অ্যারে কম্পিউটারের সাথে কানেকশনের জন্য অনেক তারের জঞ্জালের ওপর নির্ভর করত, কিন্তু ব্রেইনগেট ও নিউরালিংক উভয়ই অয়ারলেস কানেকশনের ভিত্তিতে কাজ করে যার ফলে এটি প্রাত্যহিক জীবনের জন্য উপযোগী হবে।

তথ্যসূত্র
1. https://www.theverge.com/2019/7/16/20697123/elon-musk-neuralink-brain-reading-thread-robot
2. https://youtu.be/rsCul1sp4hQ
3. https://www.youtube.com/watch?v=lSD_vpfikbE&t=1362s

৮ ডিসেম্বর : শূন্য-কার্বন নিঃসরণের বিমান ভ্রমনের আশা দেখাচ্ছে হাইড্রোজেন এয়ারলাইনের ধারণা

সোমবারে একটি নতুন হাইড্রোজেন চালিত বিমানের ধারণা উন্মোচিত হয়েছে, যাতে কার্বন নিঃসরণ হবে শূন্য (zero carbon emissions)। শুধু তাই নয়, এটির দ্বারা বিশ্বের যে কোন জায়গায় সরাসরি যাওয়া যাবে, যার ফলে যাত্রীদের ভ্রমণের সময়কালও কমে যাবে, আর অবশ্যই এই পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা এটি কমিয়ে দেবে। এটি ট্রেডিশনাল এয়ারলাইনারের গতিতেই চলবে, কিন্তু এর রেঞ্জ হবে সেগুলোর চেয়ে বেশি। আশা করা হচ্ছে ২০৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এর যাত্রা শুরু হবে। এই প্রোজেক্টটির নাম হচ্ছে ফ্লাইজিরো (FlyZero). জেট জিরো এর সিইও এমা গিলথর্প বলছেন, “অ্যারোস্পেস টেকনোলজি ইনস্টিটিউট জিরো কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। জেট জিরো কাউন্সিলের মাধ্যমে এটি এই গ্রাউন্ড-ব্রেকিং গ্রিন টেকনোলজি ফ্লাইটের ডিকার্বনাইজিং এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মে কার্বন কস্ট কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের এভিয়েশন সেক্টর সব রকম উপায়ের অনুসন্ধান করছে।”

এই বিমানে লিকুইড হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হবে। গাড়ি ও বিমানের ক্ষেত্রে ফুয়েল হিসেবে হাইড্রোজেন নিয়ে সম্প্রতি অনেক গবেষণা চলছে, এবং দেখা যাচ্ছে এটি এভিয়েশন কেরোসিন ফুয়েলের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি শক্তি তৈরি করে, কিন্তু কোন CO2 গ্যাস নিঃসরণ করেনা। জলবায়ুর এই উপকার ছাড়াও দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট জার্নিতে প্রয়োজনীয় লিকুইড হাইড্রোজেনের ওজনও একই জার্নির জন্য প্রয়োজনীয় কেরোসিনের ওজনের এক তৃতীয়াংশ, যার ফলে বিমানের ফ্লাইট রেঞ্জও অনেক বেড়ে যায়, ফলে দূরবর্তী কোন স্থানে গমনের ক্ষেত্রে মাঝখানে কোথায় মিড-ফ্লাইট স্টপ ওভারসে না থেমেই গন্তব্য স্থলে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।

এই বিমানগুলোর প্রতিটিতের পেছনে দুটো বড় ক্রায়োজেনিকালি স্টোরড লিকুইড হাইড্রোজেন ট্যাংক থাকবে, সেই সাথে এর ভর ব্যালেন্স করার জন্য বিমানের সামনের দিকেও লিকুইড হাইড্রোজেনের দুটো ছোট ট্যাংক থাকবে। ট্রেডিশনাল এয়ারলাইনারে ফুয়েল উইংস বা পাখার দিকে স্টোর করা হয়, কিন্তু পাখার বদলে সামনে-পেছনে ফুয়েল রাখায় বিমানটিকে উড্ডীন রাখতে অতিরিক্ত অ্যারোডাইনামিক স্ট্রাকচারের প্রয়োজন হবে না।

যুক্তরাজ্যের অ্যারোস্পেস টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে এটিকে ডিজাইন করা হয়েছে। ডিজাইনারদের দলটি মনে করে এটি ভোক্তাদের জন্য ও সরকারের জন্য ভ্রমণের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করবে, সেই সাথে এটি অনেক নতুন চাকরিরও সৃষ্টি করবে। ফ্লাইজিরো প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ক্রিস গিয়ার বলেন, “জলবায়ুর পরিবর্তন ট্যাকল করার ক্ষেত্রে বিশ্ব যে মনোযোগ দিচ্ছে সেক্ষেত্রে আমাদের এই কনসেপ্টটা ভবিষ্যতের গ্লোবাল এয়ার ট্রাভেলে বিপ্লব এনে দেবে, এর দ্বারা পরিবারসমূহ, ব্যবসাসমূহ ও রাষ্ট্রগুলো কোন কার্বন ফুটপ্রিন্ট ছাড়াই যোগাযোগ করতে পারবে।… এই নতুন আবিষ্কার ইউকে অ্যারোস্পেস সেক্টরকে মার্কেট শেয়ার, উচ্চ দক্ষতার চাকরি ও আভ্যন্তরীন বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য বাস্তব সুযোগ সৃষ্টি করেছে, সেই সাথে এটি জলবায়ু পরিবর্তনে যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি পালন করতেও সাহায্য করবে।”

যাই হোক, ল্যান্ড, এয়ার ও সি ট্রাভেলের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন অনেক সম্ভাবনার সৃষ্টি করলেও এটি অনেক চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসছে। যেমন বলা যায়, একে অবশ্যই ক্রায়োজেনিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে, যার ফলে যানবাহনটির ডিজাইন করা বেশ কঠিন হয়ে যায়। এটা ছাড়াও, দহনের সময় যেখানে হাইড্রোজেন কার্বন নিউট্রাল থাকে, কিন্তু এটি উৎপাদনের পদ্ধতি অনেক কঠিন। পৃথিবীতে তৈরিকৃত সকল হাইড্রোজেনের ৯৫% তৈরি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টিম-মিথেন রিফর্মিং পদ্ধতিতে, যা ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করে, এবং কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে। হাইড্রোজেন প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাবার অন্যান্য উপায় নিয়েও গবেষণা করা হচ্ছে, কিন্তু এখনও তা নিয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। তাই বলা যায়, একা শূন্য কার্বন-নিঃসরণ বিমান দিয়ে তেমন উপকার হবেনা যদিনা হাইড্রোজেন প্রস্তুতের শূন্য-কার্বন নিঃসরণের উপায় বের করা না যায়। তবে ২০৩৫ সাল আসতে আস্তে অনেক দেরি, এর মধ্যে ভাল কিছু ঘটে যেতেও পারে…

তথ্যসূত্র

1. https://www.ati.org.uk/flyzero/
2. https://www.ati.org.uk/wp-content/uploads/2021/12/FlyZero-one-stop-global-connectivity-FINAL-3.12.21.pdf

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.