মানুষকে যেকারণগুলোর জন্য পৃথিবীর অন্যান্য সকল প্রাণীদের চেয়ে উন্নত তার একটি হল তার সূক্ষ মোটর কনট্রোল স্কিল। মোটর কনট্রোল স্কিল বা ডেক্সটারিটি হল শরীরের সূক্ষ্ম মাংশপেশিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ বিশেষ করে হাত ও আঙ্গুল নড়ানোর ক্ষমতা। আমরা সূক্ষভাবে হাতের আঙ্গুলগুলোকে ব্যবহার করতে পারি বলেই আমরা হাত দিয়ে লেখালেখি, ছবি আঁকাআঁকি, টাইপিং, মোবাইলে টেপাটিপি, বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি ইত্যাদি যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারি যা প্রাণীজগতের অন্য কোন প্রাণী এত সহজে করতে পারে না। আর এই ফাইন মোটর কন্ট্রোল স্কিল আমরা রাতারতি অর্জন করিনি, অর্জন করেছি দীর্ঘদিনের বিবর্তনের ধারায়। কিন্তু ঠিক কিভাবে আমরা এই বিশেষ গুণটি অর্জন করলাম সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা অন্ধকারে ছিলেন। কিন্তু এখন একটি নতুন গবেষণা তাদেরকে আশার আলো দেখাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা যে জিনিসটাকে খুঁজে পেয়ে নতুন আশার আলো দেখছেন তা হল “শিম্পাঞ্জিদের ডুমুর চয়ন করার কৌশল”। শিম্পাঞ্জিদের ডুমুর বাছাই প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের কিভাবে আলোকিত করেছে সেটা বলার পূর্বে আমার মনে হয় ডুমুর ফলের গুরুত্ব সকলের কাছে তুলে ধরা উচিৎ। ডুমুর হল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ১,২০০ বিভিন্ন প্রজাতির মেরুদণ্ডী প্রাণীর জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আহার্য। ডুমুর প্রাণীদের মধ্যে উচ্চমাত্রার শক্তি প্রদান করে এবং এটা সারা বছরই পাওয়া যায়। ডুমুর গাছ অনেক বনাঞ্চলের জন্যই প্রধান গাছগুলোর মধ্যে একটি। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে এটাও প্রস্তাব করে ফেলেছেন যে, প্রাইমেটদের দৃষ্টিশক্তি বিকাশের জন্য এই ডুমুরই ছিল অন্যতম চালিকাশক্তি! কারণ ডুমুরের অনেক প্রজাতি পেকে গিয়ে সবুজ থেকে লাল বা হলুদ হয়ে যায়, কোন ফল পাকা এটা বোঝার জন্য প্রাইমেটদের লাল হলুদ সবুজের পার্থক্য বোঝা জরুরি। যদিও ডুমুরের অনেক প্রজাতিই পাকলেও সবসময়ের মত সবুজই থেকে যায়। আর অনেক ডুমুর প্রজাতি পেকে গেলেও সবুজ থেকে যায় বলে প্রাণীদেরকে দৃষ্টিশক্তি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরশীল হতেই হয়।
এক্ষেত্রে প্রাইমেটদের অনেক প্রজাতি তাদের ঘ্রাণশক্তির আশ্রয় নেয়, আবার অনেক প্রজাতি ডুমুরে হালকা কামড়ে স্বাদও গ্রহণ করে। শিম্পাঞ্জিরা এক্ষেত্রে একটু বেশিই এগিয়ে। তারা এই দুটো কৌশল তো প্রয়োগ করেই, তার উপর তারা আরেকটি জিনিস করে। তারা আবার ফলটাকে একটু টিপ দিয়েও দেখে।
এবার আসল কথায় আসি। গবেষকদের একটি দল বলছে, শিম্পাঞ্জিরা ডুমুরের পরিপক্কতা বিচার করার জন্য যে ডেক্সটারিটির প্রয়োগ করে তার মধ্যেই রয়েছে আমাদের ফাইন মোটোর স্কিল এর উদ্ভব যার সাহায্যে মানুষেরা বিভিন্ন টুলস, হাতিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। পাখি থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রাইমেট পর্যন্ত কেউই এই ডেক্সটারিটি ব্যবহার করতে পারে না। তারা কেবল দৃষ্টি এবং ঘ্রাণের উপরেই নির্ভরশীল।
গবেষণাটি ইন্টারফেস ফোকাস নামে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি বলে, শিম্পাঞ্জিদের এই বিশেষ কৌশলটি তাদেরকে অন্যান্য প্রাইমেট ও পাখি যারা ডুমুরকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তাদের তুলনায় বেশি সুবিধা দেয়। আর শিম্পাঞ্জিদের এই বিশেষ গুণটিই ব্যাখ্যা করে কেন আমরা অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় ফাইন মোটর স্কিলকে বেশি রপ্ত করেছি, কেন আমরা এত সূক্ষ যন্ত্রপাতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি আর কেন আমরা তাদের চেয়ে এত আলাদা।
http://rsfs.royalsocietypublishing.org/content/6/3/20160001
– বুনোস্টেগস
Leave a Reply