সমকামীদের মধ্যে “গে জিন” বলে একরকম জিন আছে এটা নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে। কিন্তু ২০১৪ সালের একটি নতুন গবেষণা দুই দশক পর এই দাবীকে সমর্থন জানায় আর এই গে জিনের সাথে আরও একটি নতুন ক্যান্ডিডেটকে যোগ করে। আর তারপর ২০১৫ সালে হওয়া সমকামিতায় এপিজেনেটিক্স এর প্রভাব নিয়ে গবেষণার ফলে বিষয়টি আরেকদিকে মোর নেয়। এখানে সমকামিতার সাথে বংশগতির সম্পর্ক জানার জন্য এবং “গে জিন” এর খোঁজে যে গবেষণাগুলো চালানো হয় আর যে ফলাফল পাওয়া যায় সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে।
কোন ব্যক্তির জেনেটিক মেকাপ যে তার মেটিং প্রিফারেন্সে ভূমিকা রাখে এটা অবাক করার মত কিছু না। প্রাণীজগতে এটা আমরা সবসময়ই দেখি। সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশনকে প্রভাবিত করে এরকম হয়তো অনেক জিনই আছে।
কিন্তু এদেরকে “গে জিন” না বলে আমাদের একে বরং “মেল-লাভিং জিন” নাম দেয়া উচিৎ। এই জিনগুলো কমন হতে পারে কারণ নারীদের ক্ষেত্রে এই জিনগুলো সঠিক সময়ের পূর্বেই যৌনতায় এবং অধিক সন্তান নেবার প্রবণতার সৃষ্টি করে। একইভাবে লেসবিয়ানদের ক্ষেত্রেও “ফিমেল লাভিং জিন” পাওয়া যাবার কথা।
গে জিনের প্রমাণ
বিভিন্ন ট্রেইট বা বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে আমরা আমরা জেনেটিক ভেরিয়েন্টসগুলো সনাক্ত করতে পারি যেগুলো বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ভিন্নতা সৃষ্টি করে। ইনহেরিটেন্স বা বংশগতির ধরণ থেকে জেনেটিক ভেরিয়েন্টস বা এলিল সম্পর্কে জানা যায় যেগুলো কিছু সাধারণ পার্থক্য তৈরি করে যেমন চুলের রঙ, সিকল সেল এনিমিয়ার মত রোগ ইত্যাদি। কোয়ান্টিটেটিভ বা পরিমাণগত ট্রেইটগুলো যেমন উচ্চতার জন্য অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন জিন এবং সেই সাথে পরিবেশও জড়িত থাকে।
এই টেকনিক ব্যবহার করে পুরুষ সমকামিতার সাথে সম্পর্কিত জেনেটিক ভেরিয়েন্টস সনাক্ত করা খুন কঠিন। কারণ সমকামীরা সমাজে তাদের সমকামিতার ব্যাপার প্রকাশ করতে চান না। এদিকে যমজদের নিয়ে গবেষণাগুলো আমাদের বলছে জিন এক্ষেত্রে কেবল একটি অংশ মাত্র। এক্ষেত্রে হরমোন, বার্থ অর্ডার এবং পরিবেশেরও যথেষ্ট প্রভাব আছে, যেকারণে এটা আরও কঠিন হয়ে যায়।
১৯৯৩ সালে আমেরিকান জেনেটিসিস্ট ডিন হ্যামার কিছু পরিবার পেয়েছিলেন যেখানে মায়ের বংশের দিকে কয়েকজন সমকামী পুরুষ ছিল। এটা পুরুষ সমকামীতার জন্য এক্স ক্রোমোজোমের কোন জিনকে নির্দেশ করে। তিনি দেখান সমকামী ভাইরা এক্স ক্রোমোজোমের একটি ছোট অংশ একে অপরের সাথে শেয়ার করে। তিনি বলেন এই এক্স ক্রোমোজোমের অংশটিতেই (এক্স ক্রোমোজোমের Xq28 মার্কার) এমন কোন জিন আছে যা পুরুষকে সমকামিতার দিকে নিয়ে যায়। তার এই গবেষণাটি NCBI জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এটা এখানে পাবেন :
http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/8332896
হ্যামারের এই কাজটি সমাজে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করে। তার এই গবেষণাটি দেখায় সমকামিতা “লাইফস্টাইল চয়েজ” নয় বরং এটা অন্ততপক্ষে আংশিকভাবে জিনগত। আর এটা যারা মানতে পারছিল না তারা ডিন হ্যামারের জীবনের পদে পদে বাঁধার সৃষ্টি করতে থাকে।
এই ভিডিওটিতে ডিন হ্যামার গে জিন এবং তার গবেষণা নিয়ে কিছু কথা বলেছেন:
https://youtu.be/9zno8e4R6gA
সমকামীরা সেই সময় বিভক্ত হয়ে যায়। এটা তাদের মধ্যে বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয় উক্তি “I was born this way” এর সত্যতা দান করে। কিন্তু একই সাথে তাদের সনাক্তকরণ ও বৈষম্যের নতুন সম্ভাবনা তাদেরকে ভীত করে তোলে।
পরবর্তীতে ১৯৯৫ ও ১৯৯৯ সালে এরকম আরও দুটি গবেষণা চালানো হয় যা একটি অপরটির সাথে এক্স ক্রোমোজোমের সাথে জিনের সম্পর্কের ব্যাপারে সাংঘার্ষিক ছিল। এগুলো এখানে দেখতে পারেন:
http://www.nature.com/ng/journal/v11/n3/abs/ng1195-248.html
http://science.sciencemag.org/content/284/5414/665
এরপর ২০০৫ সালের একটি গবেষণায় জিনোমওয়াইড স্ক্যানের মাধ্যমে দেখা যায় যে পুরুষের সমকামিতা আরও তিনটি ক্রোমোজোমের জিনের সাথে সম্পর্কিত।
http://link.springer.com/article/10.1007%2Fs00439-004-1241-4#page-1
২০১৪ সালে হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্ট দ্বারা প্রাপ্ত জেনেটিক মার্কারগুলো ব্যবহার করে সমকামী ভাইদের নিয়ে একটি বড় গবেষণা চালানো হয়। এই গবেষণাটি পূর্বের এক্স ক্রোমোজোমে থাকা গে জিনকে নিশ্চিন্ত করে। আবার গবেষণাটিতে ক্রোমোজোম ৮ এরও একটি জিনকে গে জিন হিসেবে সনাক্ত করা হয়। এই গবেষণাটি সমাজে আবার নতুন করে হৈচৈ এর জন্ম দেয়। গবেষণাটি সাইকোলজিকাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত হয়:
http://journals.cambridge.org/action/displayAbstract?fromPage=online&aid=9625997&fileId=S0033291714002451
হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্ট সম্পর্কে কেউ জানতে চাইলে এখানে দেখতে পারেন:
https://theconversation.com/explainer-what-is-the-human-genome-project-7559
(চলবে)
(সম্পাদিত হতে পারে)
-Sumit Roy
Leave a Reply