জো বাইডেনের পররাষ্ট্র ও সামরিক নীতি

ভূমিকা

বাইডেন বলেছিলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজেকে এবং তার মিত্রদের রক্ষা করার অধিকার যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সংরক্ষণ করবে, প্রয়োজনে তারা সেটা বলপূর্বকভাবে করবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের এই বল প্রয়োগ হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র যখন বল প্রয়োগের উদ্দেশ্য পরিষ্কার এবং অর্জনযোগ্য তখনই জনগণের সম্মতি নিয়ে তা বলপ্রয়োগ করবে, এজন্য কোথাও কংগ্রেসের অনুমোদন লাগলে সেই অনুমোদন নেয়া হবে।” তিনি “গণতন্ত্র, বহুপাক্ষিকতা, জোট গঠন এবং কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার উপর ভিত্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব-ব্যবস্থার নেতা হিসেবে তার ঐতিহ্যগত অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার” উপর জোর দেন, এবং ২০২০ সালে তিনি অঙ্গীকার করেন যে নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।

বাইডেন সরকার পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে গোপন বা সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু তিনি বলেছেন, “সার্বজনীন মানবাধিকার এবং আরো প্রতিনিধিত্বমূলক এবং জবাবদিহিতামূলক শাসনের জন্য সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য বেসামরিক সমর্থন প্রদান করা আমাদের জন্য যথাযথ।” মানবিক হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে বাইডেন বলেছেন , “গণহত্যা বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাড়া দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৈতিক কর্তব্য এবং একই সাথে নিরাপত্তা স্বার্থ রয়েছে।”

বাইডেন বলেছেন যে, ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা যেমন জাতিসংঘ শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) এবং সম্ভবত মানবাধিকার কাউন্সিলে যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করবেন।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তান

২০০৮ সালে পাকিস্তান জো বাইডেন এবং সিনেটর রিচার্ড লুগারকে হিলাল-ই-পাকিস্তান (ক্রিসেন্ট অফ পাকিস্তান) প্রদান করে। এর পর বাইডেন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে পাকিস্তানকে ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেসামরিক সাহায্য প্রদানের একটি বিল পাশ করেন।

২০০৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রাথমিক স্থান হিসেবে ইরাককে উপস্থাপন করার জন্য বুশের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইরাক থেকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে মনোযোগ স্থাপন করা, কারণ এটাই হল “তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের (war on terrorism) কেন্দ্রীয় যুদ্ধক্ষেত্র”। তিনি বলেন, এখানেই ৯/১১ এর পরিকল্পনা করা হয়…, ৯/১১ এর পর থেকে ইউরোপে এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ ঘটেছে, এখানেই ওসামা বিন লাদেন ও তার শীর্ষ বাহিনী এখনও নিরাপদ আশ্রয় উপভোগ করে, নতুন হামলার পরিকল্পনা করে। বাইডেন বলেন যে “এই যুদ্ধের ফলাফল বুলেটের চাইতে ডলার এবং দৃঢ়সংকল্পের দ্বারাই নির্ধারিত হতে চলেছে”, এবং যুক্তরাষ্ট্রের “আসল পাপাচার ছিল প্রয়োজনীয় যুদ্ধ (আফগানিস্তানে যুদ্ধ) শেষ করার আগেই পছন্দের যুদ্ধ (ইরাকে হস্তক্ষেপ) শুরু করা।

ওবামা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বিতর্কের সময়, বাইডেন আফগানিস্তানে ২০০৯ সালের সৈন্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে জোরালো যুক্তি দেখান, এবং প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট গেটসের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। বাইডেন যুক্তি দেখান যে, আফগানিস্তানের সরকার, সামরিক বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি এবং অকার্যকারিতা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলকে অকার্যকর করে তুলেছে এবং কাবুলভিত্তিক সরকারের টিকে থাকার ব্যাপারে “অজ্ঞেয়বাদী” ছিলেন। ২০১২ সালে ওয়েস্ট পয়েন্ট গ্র্যাজুয়েটদের সাথে কথা বলার সময় বাইডেন যুক্তি দেখান যে, ওবামা প্রশাসন আফগানিস্তান এবং ইরাক থেকে সৈন্যদেরকে প্রত্যাহার শুরু করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র “আমাদের পররাষ্ট্র নীতিকে প্রতিস্থাপিত করতে এবং এতে পুনরায় ভারসাম্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে”। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময় বাইডেন তার প্রথম মেয়াদে আফগানিস্তানে অবশিষ্ট মার্কিন কমব্যাট ফোর্সকে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন এবং তিনি বলেন, “আফগানিস্তানে অবশিষ্ট মার্কিন সামরিক বাহিনী শুধুমাত্র সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের উপর মনোযোগ প্রদান করবে।”

পূর্ব এশিয়া এবং চীন ও উত্তর কোরিয়া

এশিয়ার ক্ষেত্রে, বাইডেন জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় আমেরিকান সৈন্যদের উপস্থিতি সমর্থন করে ঐতিহ্যবাহী মার্কিন অবস্থান পুনরুদ্ধারের পক্ষপাতী।

২০১৬ সালে বাইডেন ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপকে একটি চুক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন যা অর্থনীতির ও ভূ-রাজনীতি উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত ছিল। ওবামা প্রশাসনের অংশ হিসেবে তিনি এই অঞ্চলের শক্তিশালী এবং সাহসী চীনা পররাষ্ট্র নীতির বিরুদ্ধে “এশিয়ার প্রতি ভারসাম্য বজায় রাখার” প্রচেষ্টায় এই চুক্তিকে সমর্থন করেন।

বাইডেন ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে প্রথম চীন সফর করেন, যেখানে ১৯৪৯ এর বিপ্লবের পর চীনে প্রথম মার্কিন কংগ্রেশনাল প্রতিনিধি দল ডেং জিয়াওপিং এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বছরের পর বছর ধরে বাইডেন প্রায়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চীনা সরকারের সমালোচনা করেছেন, একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার মত বিষয়ে চীনের সহযোগিতা লাভের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন। ১৯৮৯ সালের তিয়ানআনমেন স্কোয়ার বিক্ষোভে চীনা সরকারের সহিংস নিপীড়নের কারণে বাইডেন ক্ষুব্ধ হন এবং সিনেটে গণতন্ত্র-প্রচারকারী রেডিও ফ্রি এশিয়া তৈরির জন্য আইন প্রবর্তন করেন, যা ১৯৯৬ সালে খোলা হয় এবং চলতে থাকে। ২০১৯ সালের জুন মাসে বাইডেন লিখেছেন “চীনের নিজের জনগণের উপর ক্রমাগত নিপীড়ন, বিশেষ করে ১০ লক্ষেরও বেশি উইঘুরকে অত্যাচার এবং হস্তক্ষেপ আজকের বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবাধিকার সংকটের একটি। এটা উপেক্ষা করা যায় না।” বাইডেন জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীনা পদক্ষেপকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়াও ২০২০ সালে বাইডেন হংকং-এর বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।

২০১৮ সালে বাইডেন বলেন যে তিনি অন্য যে কোন বিশ্ব নেতার চেয়ে চীনা নেতা শি জিনপিং-এর সাথে ব্যক্তিগত বৈঠকে বেশি সময় কাটিয়েছেন। তিনি শি-এর সমালোচনা করে বলেছেন, “তিনি এমন একজন মানুষ যার শরীরের মধ্যে ডেমোক্রেসির ডি-ও নেই”। এই লোকটি একটা গুণ্ডা।” বাইডেন অঙ্গীকার করেছেন যে তিনি নির্বাচিত হলে, যেসব চীনা সরকারী কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠান নিপীড়ন চালায় তাদের উপর স্যাংকশন এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করবেন।

২০০৬ সালে বাইডেন উত্তর কোরিয়াকে একটি কাগজের বাঘ হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে তারা সরাসরি আমেরিকার ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষাকে “ইচ্ছাকৃত এবং বিপজ্জনক প্ররোচনা” বলে তিনি নিন্দা জানান। তিনি ২০০৭ সালের জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনে একটি প্রয়োজনীয়তা (requirement) প্রস্তাব করেন, যার মধ্যে বুশ প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার উপর একটি বিশেষ সমন্বয়কারী নিয়োগ করে, এবং কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনাকে “পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি” হিসেবে বর্ণনা করেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে, বাইডেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাই এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং কোরিয়ান ডিমিলিটারাইজড জোন পরিদর্শন করেন। ২০১৩ সালে সিউলে এক ভাষণে বাইডেন বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বকে কিম জং-উনের কাছে পরিষ্কার করে দিতে হবে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র মেনে নেবে না বা সহ্য করবে না। সহজ বাস্তবতা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া কখনই নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ না তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বন্ধ না করে। যখন উত্তর কোরিয়া একটি সম্পূর্ণ, যাচাইযোগ্য এবং অপরিবর্তনীয় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রতি তার পূর্ণ অঙ্গীকার প্রদর্শন করবে তখন আমরা ছয় দলীয় আলোচনায় ফিরে যেতে প্রস্তুত থাকব।

বাইডেন কিমের সাথে ট্রাম্পের উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমালোচনা করে বলেছেন, “আমরা কি এমন এক জাতি যারা পুতিন এবং কিম জং-উনের মত স্বৈরশাসক এবং একনায়কদের আলিঙ্গন করে?” এছাড়াও বাইডেন “থ্রি মেড-ফর-টিভি সামিট্‌সে” (three made-for-TV summits) জড়িত থাকার জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন, যে সামিট্‌স থেকে উত্তর কোরিয়ার কোন সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। বাইডেন অঙ্গীকার করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে কিমের সাথে ট্রাম্পের সরাসরি ব্যক্তিগত কূটনীতি বন্ধ করবেন এবং উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে চাপ দেবার জন্য “যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং অন্যদের সাথে টেকসই ও সমন্বিত প্রচারাভিযান” শুরু করবেন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম ২০১৯ সালে বাইডেনকে “নির্বোধ” বলে আক্রমণ করে; বাইডেনের প্রচারণার একজন মুখপাত্র তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, “পিয়ংইয়ং-এর খুনী সরকারের দ্বারা ট্রাম্প বারবার প্রতাড়িত হয়েছেন যার ফলে তিনি তাদেরকে বড় বড় ছাড় (concession) দিয়েছেন, কিন্তু বিনিময়ে তিনি কিছুই পাননি। এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, আমেরিকার মূল্যবোধ এবং স্বার্থের পক্ষে ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দাঁড়ানোর রেকর্ড দেখে উত্তর কোরিয়া চাইবে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে থাকুন।”

ইজরায়েল এবং ইজরায়েল-আরব দ্বন্দ্ব

সিনেটে বাইডেন ১৯৭৩ সালে বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটিতে (Foreign Relations Committee) কাজ করা শুরু করেন, এবং তখন সেখানে তিনি তার কাজের মাধ্যমে গোল্ডা মীরকে (Golda Meir) দিয়ে শুরু করে ইজরায়েলি কর্মকর্তাদের সাথে আজীবন সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বাইডেন ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের প্রাক্কালে একজন তরুণ সিনেটর হিসেবে মেয়ারের সাথে তার সাক্ষাৎকে “আমার জীবনের সবচেয়ে ফলপ্রসূ মিটিং” বলে অভিহিত করেন। তিনি নিয়মিত নিজেকে একজন ইহুদীবাদী বা জায়োনিস্ট হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি ইজরায়েলের দীর্ঘদিনের সমর্থক, বাইডেন ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করেন। ওবামা বিডেনকে রানিং মেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করলে তখন ন্যাশনাল জিউইশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিলের (National Jewish Democratic Council) চেয়ারম্যান ইরা ফরম্যান ওবামার এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেন, “আপনি সম্ভবত আর এমন কাউকেই নির্বাচিত করতে পারতেন না যিনি বাইডেনের মতো ইসরায়েলের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইসরায়েলী নেতৃত্বদের ব্যাপারে জ্ঞাত।” ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় বাইডেন ফ্লোরিডার এক প্রচারাভিযান অনুষ্ঠানে জোর দিয়ে বলেন, তিনি এবং ওবামা উভয়েই ইজরায়েলপন্থী ছিলেন এবং ইজরায়েলকে আরো নিরাপদ করে তুলতে ইচ্ছুক। বাইডেন আরও বলেন, “একটি শক্তিশালী আমেরিকার অর্থ হচ্ছে একটি শক্তিশালী ইজরায়েল। আমার কাছে ইজরায়েলকে সমর্থন করার ৩৫ বছরের রেকর্ড আছে, আর আমেরিকা শক্তিশালী হলে ইজরায়েল আরও শক্তিশালী হবে। ২০০৮ সালের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিতর্কে বাইডেন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে জো বাইডেনের চেয়ে ইজরায়েলের চেয়ে ভালো বন্ধু কেউ নেই। আমি কখনোই এই টিকিটে যোগ দিতাম না যদি আমি নিশ্চিত না হতাম যে বারাক ওবামা আমার আবেগ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।”

২০০৮ সালে বাইডেন জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন এবং জন ম্যাককেইনের সমালোচনা করে যুক্তি দেখান, “ইসরায়েল আগে যতটা নিরাপদ ছিল জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যে কোন এম্পিরিকাল স্ট্যান্টার্ড অনুযায়ী ইসরায়েল তার চেয়ে কম নিরাপদ হয়েছে। জন বুশকে সমর্থন দানের পর থেকে বুশ একের পর এক ভুল করে গেছেন। বাইডেন ইজরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়ায় একটি সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানান, এবং বলেন যুক্তরাষ্ট্র যদি “বিশ্বের সম্মান পুনরুদ্ধারের” পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে সেই শান্তি প্রক্রিয়া উন্নত হবে। তিনি গোলান হাইটস বিতর্ক, হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ এবং লেবাননে সিরিয়ার প্রভাব নিয়ে সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। ২০০৮ সালে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইজরায়েলি সামরিক হামলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাইডেন বলেন, “ইজরায়েলিরা কী করবে না করবে তাতে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারেনা।” কিন্তু তিনি “ইজরায়েলের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা” এবং সামরিক সংঘাত প্রতিরোধে অতিরিক্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে বাইডেন আবার বলেন যে ইজরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে একতরফা হামলা চালাবে না। তিনি বলেন, “আমি মনে করি ইজরায়েল ভুল পরামর্শের দ্বারা চালিত হয়ে এই কাজ করেছে। আর তাই আমার উদ্বেগের মাত্রা এক বছর আগের চেয়ে ভিন্ন নয়।”

বাইডেন তার কর্মজীবন জুড়ে আমেরিকান ইজরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এআইপিএসি) সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তিনি সেই দলের অনুষ্ঠান এবং তহবিল সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলেন; বাইডেন এবং এআইপিএসি একে অপরের প্রশংসা করে। তা সত্ত্বেও, বাইডেন সবসময় এই দলের অবস্থানের সাথে একমত হননি, ২০০৮ সালে তিনি বলেন, “এআইপিএসি সমগ্র আমেরিকান ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য কথা বলে না। অন্যান্য আরও সংগঠন আচ্ছে যেগুলো এআইপিএসি এর মতো শক্তিশালী এবং ফলপ্রদায়ী”। এর সাথে যোগ করেন “আমি লক্ষ্যের ক্ষেত্রে এআইপিএসি’র সাথে কখনো দ্বিমত পোষণ করিনি। যখনই আমি এআইপিএসি’র সাথে মতানৈক্য পোষণ করেছি, সেটা কখনও তাদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে মতানৈক্য ছিল না, বরং সেই লক্ষ্য অর্জনে তাদের কৌশল নিয়ে মতানৈক্য ছিল।” বাইডেন ইজরায়েলের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত জোনাথন পোলার্ডকে নির্বাহী ক্ষমা (executive clemency) প্রদানের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, “যদি এটা আমার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করতো তাহলে তিনি আজীবন কারাগারে থাকতেন।”

বাইডেন ধারাবাহিকভাবে ইজরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে সমর্থন করে বলেছেন যে এটি –
(১) “ইজরায়েলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার একমাত্র পথ, যখন এটি একটি ইহুদী এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তার পরিচয় বজায় রাখদছে”;
(২) “ফিলিস্তিনি মর্যাদা এবং জাতীয় আত্মসংকল্পের প্রতি তাদের বৈধ আগ্রহ নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়”; এবং
(৩) “ইজরায়েল এবং তার আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার জন্য বিদ্যমান উদ্বোধনের পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় শর্ত।
(দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমধান বা টু স্টেট সল্যুশন বলতে বোঝায় ইসরায়েল ও ফিলিস্থিন দুটো আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্ববান থাকবে)।

তিনি ২০০৬ সালের ফিলিস্তিনি সন্ত্রাস বিরোধী আইনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন যা একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রকাশ করে। ২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে যখন তাকে ইজরায়েলি-ফিলিস্তিনি শান্তি অর্জনে ব্যর্থতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন বাইডেন বলেন যে ইজরায়েল একটি গণতন্ত্র এবং তারা ভুল করে। কিন্তু কোনভাবে যদি ইজরায়েল সঠিক কাজটি করে, তাহলে শান্তি প্রক্রিয়া কাজ করবে… আমাকে একটু বিশ্রাম দিন।” তিনি আরো বলেন যে “এখানে তাদের উপর দায়িত্ব বর্তাবে যারা ইজরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করবে না, ন্যায্যভাবে কাজ করবে না, চুক্তি করবে না, সন্ত্রাসবাদ ত্যাগ করবে না।” ২০০৮ সালের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিতর্কের সময় বাইডেন বলেন যে মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে বুশ প্রশাসনের নীতি “অপমানজনক ব্যর্থতা” ছিল এবং তিনি অঙ্গীকার করেন যে নির্বাচিত হলে তিনি এবং বারাক ওবামা “চিন্তাশীল, বাস্তব, সরাসরি কূটনীতির মাধ্যমে এই নীতি পরিবর্তন করবেন, যেখানে এই অনুধাবন থাকবে যে, আপনাকে অবশ্যই ইজরায়েলকে সমর্থন করতে হবে, তাদের আলোচনাকে সমর্থন করতে হবে, এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, এর বদলে বুশ প্রশাসন যেমনটা করেছে সেভাবে তাদের উপর পলিসি চাপিয়ে দেয়া যাবেনা। উত্তর আমেরিকার ইহুদি ফেডারেশনকে দেয়া ২০১০ সালের এক ভাষণে বাইডেন বলেন, “ইজরায়েলের ইহুদি রাষ্ট্র এবং ফিলিস্তিনের কার্যকর স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সরাসরি মুখোমুখি আলোচনার কোন বিকল্প নেই। এটাই ইজরায়েলী জনগণের দশকের পর দশক ধরে চলা নিরাপত্তা অভিযানের একমাত্র পথ, এবং জাতির জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ আকাঙ্ক্ষার একমাত্র পথ। ২০১৯ সালে কথা বলতে গিয়ে বাইডেন বলেন, “বর্তমানে ইজরায়েলি বা ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব কেউই সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে রাজি নয়” এবং বলেন যে যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি “দুই রাষ্ট্রের সম্ভাবনা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষকে পদক্ষেপ নিতে” আহ্বান জানান। ইজরায়েলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে ট্রাম্পের বিতর্কিত পদক্ষেপের পর বাইডেন বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি তেল আবিবে দূতাবাস ফেরত দেবেন না, কিন্তু তিনি ফিলিস্তিনিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য পূর্ব জেরুজালেমে মার্কিন কনস্যুলেট পুনরায় খুলবেন।

বাইডেন ধারাবাহিকভাবে ইজরায়েলি বসতি নীতির (Israeli settlement policy) সমালোচনা করেছেন। ২০০৯ সালে এআইপিএসি সম্মেলনে দেয়া এক ভাষণে বাইডেন বিদ্যমান ইজরায়েলি বসতি ভেঙ্গে ফেলা, নতুন বসতি নির্মাণ বন্ধ করা এবং ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের স্বাধীনতা প্রদানের মাধ্যমে “দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করার” আহ্বান জানান এবং ফিলিস্তিনিদের “সন্ত্রাস ও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্ররোচনা মোকাবেলার” আহ্বান জানান। ২০১৬ সালে জে স্ট্রিটকে দেওয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন যে সরকারের পদোন্নতি এবং জনবসতির সম্প্রসারণ, আউটপোস্ট বৈধকরণ এবং জমি দখল নিয়ে ইজরায়েলি সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি তার “প্রচণ্ড হতাশা” রয়েছে। তিনি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইজরায়েলি বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছেন উল্লেখ করে বাইডেন বলেন যে তারা ইজরায়েলের নিরাপত্তার পরিপন্থী। একই ভাষণে বাইডেন ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী হামলা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ফিলিস্তিনি দের আশ্রয়ের সমালোচনা করেন, যাকে তিনি “ক্ষতিকর পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেন, যা আমাদের কে শান্তির পথ থেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়, এবং প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলের সাথে সমঝোতা করা একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পর্কে বাইডেন বলেন, “ইজরায়েল যা চায় তা পাবে না, কিন্তু তারা তার প্রয়োজনীয় সব কিছু পাবে” এবং তিনি বলেন, ” এখন আমাদের রাজনৈতিক মতানৈক্য আছে, কিন্তু ইজরায়েলের সাথে আমাদের রাজনৈতিক মতানৈক্য যাই হোক না কেন, ইজরায়েলের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই।” ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে পরবর্তী এক ভাষণে বাইডেন নেতানিয়াহুকে “তার দলে তার চরম দক্ষিণপন্থায় সরে আসার” জন্য সমালোচনা করেন, এবং এই পদক্ষেপকে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা এবং একটি “গুরুতর ভুল” বলে অভিহিত করেন।

বাইডেন পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কিছু অংশ দখল করার জন্য ইজরায়েলের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা টনি ব্লিকেন বলেন যে বাইডেন “ইজরায়েলি সরকারের বিভিন্ন অঞ্চল দখল সহ আমরা যেসব বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি সেসব ক্ষেত্রে ইজরায়েলকে সামরিক সহায়তা দান করবেন না।” বাইডেন বলেছেন যে যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে তিনি দৃঢ়ভাবে বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট এবং স্যাংকশন (বিডিএস) প্রচারাভিযান প্রত্যাখ্যান করবেন “যা ইজরায়েলকে এককভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং প্রাযই ইহুদিবিদ্বেষে পরিণত হয়, সেই সাথে তিনি বিশ্বমঞ্চে ইজরায়েলকে অবৈধ করার অন্যান্য প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।

বাইডেন ২০২০ সালের আগস্ট মাসে একটি স্বাভাবিককরণ চুক্তিতে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রস্তাবের প্রশংসা করেছেন। তিনি এই চুক্তিকে “স্বাগত, সাহসী এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীনায়কোচিত পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

ইরান

সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বাইডেন ইরানের সাথে “কঠোর কূটনৈতিক” (“hard-headed diplomacy”) আহ্বান জানিয়ে একটি বিশিষ্ট কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ইরানের উপর “সমন্বিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা” (“coordinated international sanctions”) বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, “ইরান যদি সঠিক কাজ করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্কের জন্য একটি বিস্তারিত, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে আমাদের এই চাপ প্রয়োগের বদলে তাদেরকে বরং প্রশংসা করা উচিৎ হবে।”

২০০৭ সালে বাইডেন ইরানী রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসকে (Iranian Revolutionary Guard Corps) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার একটি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভোট দেন। তিনি ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে লিখেছেন যে “ইরানের সাথে যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি বাজে বিকল্প নয়। এটা একটা বিপর্যয় হবে।” বাইডেন হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, যদি প্রেসিডেন্ট বুশ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন তাহলে তিনি তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করবেন। কিন্তু ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন যে ইরানী রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং অলরেডি বুশ প্রশাসনের একে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন যে তিনি এই উদ্বেগের কারণে বুশ প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন যে বুশ প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য এই পদক্ষেপের অপব্যবহার করবে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে, বাইডেন ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তির মধ্যে ওবামা প্রশাসনের মাধ্যমে সমঝোতা করা যৌথ ব্যাপক কর্ম পরিকল্পনা (Joint Comprehensive Plan of Action) বা ইরান নিউক্লিয়ার ডিলকে জোরালোভাবে সমর্থন করেন। বাইডেন এই চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে যাওয়া এবং ট্রাম্প প্রশাসনের এই ইরান স্ট্র্যাটেজিকে “স্ব-নিপীড়িত বিপর্যয়” (“a self-inflicted disaster”) বলে সমালোচনা করে বলেছিলেন, ট্রাম্প “একতরফাভাবে ওবামা-বাইডেন প্রশাসনের কষ্টার্জিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে ইরান আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে”। বাইডেন বলেন, “ইরান সম্পর্কে আমার কোন ভ্রম নেই। শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং আমাদের স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এটা আমেরিকার নাগরিকদের আটকে রেখেছে। তারা শত শত বিক্ষোভকারীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, এবং তাদের কাজের জন্য তাদের দায়ী করা উচিত। কিন্তু তাদের মোকাবেলা করার দুটি উপায় আছে – একটি বুদ্ধিমান উপায়, এবং একটি আত্মঘাতি উপায়। ট্রাম্প ২য় উপায় গ্রহণ করেছেন। এই সংকট থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে কূটনীতি – পরিষ্কার চোখ, কঠোর কূটনীতি, যা কোন একতরফা সিদ্ধান্ত থেকে নয়, বরং স্ট্র্যাটেজির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।” বাইডেন বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে আবার ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি শক্তিশালী করবেন যা ইরান পূর্বে মেনে নিয়েছিল।

সৌদি আরব, সিরিয়া ও তুরস্ক

বাইডেন ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, “আমি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই, তাহলে আমি ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ইতি টানব এবং সৌদি আরবের সাথে আমাদের সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়নের আদেশ প্রদান করব।” তিনি সৌদি আরবের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের অস্ত্র বিক্রি সহ বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছেন।

২০১৮ সালে পররাষ্ট্র বিষয়ক এক কথোপকথনে বাইডেন সিরিয়াকে “আমাদের সবচেয়ে বড় জটিলতার একটি চিরায়ত উদাহরণ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সিরিয়ায় আমেরিকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেছেন, “আমাদের ইউরোপীয় বন্ধুদের মধ্যে একসময় ধারণা ছিল যে আমরা জানি আমরা কী করছি, আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। কিন্তু এখন আমরা সেটা হারিয়ে ফেলেছি।” তিনি সিরিয়াকে, বিশেষ করে রাক্কার মত প্রধান শহরগুলোকে স্থিতিশীল করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের সহায়তায় আইএসআইএল এবং কুর্দি বাহিনী এসডিএফ-এর মধ্যে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রাক্কা ধ্বংস হয়ে গেছে। বাইডেন বলেন শহর পুনর্নির্মাণের জন্য একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বিশ্বাস করেন যে সিরিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে রয়ে গেলে রাশিয়া নয়, বরং ইরানই স্বল্প মেয়াদে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে। তার মতে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকেও ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে, অন্যথায় সিরিয়ায় কখনোই শান্তি বা নিরাপত্তা থাকবে না। বাইডেন বলেন, ইরাকের মতো সিরিয়ায় কোন ঐক্যবদ্ধ নীতি নেই, তাই বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে এই অঞ্চলে শুধুমাত্র কিছু নিরাপদ বন্দর স্থাপন করা যেতে পারে।

২০১৪ সালে বাইডেন বলেন যে, যারাই আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদেরকেই তুরস্ক, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত শত শত মিলিয়ন ডলার এবং হাজার হাজার টন অস্ত্র দান করেছে, কিন্তু এই সাপ্লাইগুলো গেছে আল-নুসরা, আল-কায়দার মতো অন্য জিহাদি চরমপন্থী দলগুলোর কাছে। পরবর্তীতে বাইডেন তুরস্ক সিরিয়ার জেহাদি বিদ্রোহীদেরকে সমর্থন প্রদান করছে – এই মন্তব্যের তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের কাছে, ক্ষমা চান। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে বাইডেন “স্বৈরশাসক” প্রেসিডেন্ট এরদোযানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং তুরস্কের বিরোধী দলের প্রতি সমর্থনের আহ্বান জানান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাইডেন আজারবাইযান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাত (Nagorno-Karabakh conflict) থেকে তুরস্ককে “দূরে থাকুন” বলে দাবি করেন, যেখানে তুরস্ক আজেরিদেরকে সমর্থন দান করেছিল।

রাশিয়া

১৯৯৯ সালে বাইডেন একটি চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহকে গুঁড়িয়ে দিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযান, রুশ সেনাবাহিনীর দ্বারা বেসামরিকদের উপর বাছবিচারহীনভাবে বলপ্রয়োগ, জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেন, এবং এই সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চান।

২০০৫ সালে বাইডেন ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতার জন্য ১৯৯৯ সালের অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন (ওএসসিই) শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার সমালোচনা করে একটি সিনেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যার মধ্যে রাশিয়া থেকে বের হয়ে যাওয়া রাষ্ট্র মলদোভার থেকে রাশিয়াপন্থী অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ রাশিয়ান সামরিক প্রত্যাহারের চুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওএসসিই বর্ডার মনিটরিং অপারেশন (বিএমও) জর্জিয়া এবং চেচনিয়া, দাগেস্তান এবং ইঙ্গোশেতিয়ার মধ্যে সীমান্ত পারাপার পর্যবেক্ষণের জন্য কাজ করে চলছিল। রাশিয়া এই বিএমও-কে বন্ধ করার দাবি জানায়। এই প্রস্তাবে রাশিয়ার এই দাবির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছিল, বিলটি সিনেটে পাশ করেছিল।

বাইডেন ২০০৮ সালের জুলাই মাসে একটি আইন প্রবর্তন করেন, যেখানে তিনি “রাশিয়ার সাথে আরো গঠনমূলক সম্পর্কের জন্য কাজ করার” আহ্বান জানান এবং জি-৮এর “বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্র রক্ষার উদ্দেশ্য” অনুযায়ী আচরণ করতে রাশিয়াকে উৎসাহিত করেন। এই প্রস্তাবে রুশ এবং মার্কিন নেতাদের নুন-লুগার কর্মসূচী (Nunn-Lugar program) এবং অন্যান্য অসম্প্রসারণ (nonproliferation) উদ্যোগের জন্য সহযোগিতা এবং তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি ১৯৯১ কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস চুক্তির (1991 Strategic Arms Reductions Treaty) একটি উত্তরাধিকার চুক্তির প্রয়োজনের উপর জোর দেয়। রেজোলিউশনটি পাশ করেছিল।

বাইডেন গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে বাইডেন দক্ষিণ ওসেতিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে জর্জিয়ায় রাশিয়ার সামরিক অভিযানের সমালোচনা করে বলেন, “জর্জিয়ার উপর পূর্ণ মাত্রার হামলা এবং জর্জিয়ার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মিকিল সাকাশভিলিকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে মস্কো ইউরোপ এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থানকে বিপন্ন করছে এবং সত্যিকারের ব্যবহারিক এবং রাজনৈতিক ফলাফলের ঝুঁকি নিচ্ছে”। বাইডেন রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৮ সালে মাইকেল কার্পেন্টারের সাথে লেখা “কিভাবে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়” (“How to Stand Up to the Kremlin”) নামক পররাষ্ট্র বিষয়ক অপ-এড-এ বাইডেন রাশিয়াকে একটি ক্লেপ্টোক্র্যাটিক, জাতীয়তাবাদী-জনপ্রিয় রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন যা পশ্চিমা গণতন্ত্রকে তার অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। তিনি স্বীকার করেছেন যে ক্রেমলিন বিভিন্ন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশের বিরুদ্ধে অনেক ডোমেইন জুড়ে ( সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, তথ্যমূলক) সমন্বিত হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ২০১৭ সালের ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাইবার হামলা। রাশিয়ার হুমকির ফলে বাইডেন একটি “শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া” সমর্থন করেন, যেখানে আমেরিকার মিত্রদের সহযোগিতা থাকবে এবং আর্থিক সংস্কারের (Finance reform) প্রচারাভিযান করা হবে যা অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে বিদেশী অনুদানের প্রবাহকে আটকাবে। সেই প্রবন্ধটিতে জো বাইডেন ও মাইকেল কার্পেন্টার লিখেছিলেন, “পশ্চিমা গণতন্ত্রকে অবশ্যই তাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা, আর্থিক খাত, সাইবার অবকাঠামো এবং মিডিয়া বাস্তুতন্ত্রের উজ্জ্বল দুর্বলতার মোকাবেলা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়া এবং অন্যান্য স্থান থেকে বিদেশী অ্যাক্টরদেরকে আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতাকে রদ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পেইন ফাইনান্স ব্যবস্থার সংস্কার করা প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ আর এই অনুদানের গোপন বান্ডিলের দিকে চোখ বুজে থাকতে পারেনা, যারা বিদেশী অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠনগুলোর (যেমন “ঘোস্ট কর্পোরেশন”) কাছে প্রবাহিত হতে দেয়, যা super PAC ও অন্যান্য স্বাধীন রাজনৈতিক সংগঠন, যেমন ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন এবং তথাকথিত 501(c)(4) গ্রুপে কনট্রিবিউট করে। কংগ্রেসকে এখন ক্যাম্পেইন ফাইনান্স রিফর্মের ব্যাপারে সিরিয়াস হতে হবে; এটাকে দ্বিপক্ষীয় ঐকমত্যের বিষয় হওয়া উচিৎ, কারণ এই দুর্বলতা ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের সমানভাবে প্রভাবিত করে।২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে কিনা এই বিষয়ে দ্ব্যর্থকতা প্রকাশ বা বাকচাতুরি করার জন্য, এমনকি মস্কো কিভাবে তা করেছে সে বিষয়ে শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্রিফিং পাওয়ার পরেও, এই বিষয়ে দ্ব্যর্থকতা প্রকাশ অব্যাহত রাখার জন্য বাইডেন ট্রাম্পের নিন্দা করেন।

২০১৯ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বাইডেন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে তাদের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেন, “আমাদের আমাদের প্রতিক্রিয়ায় সুস্পষ্ট হতে হবে এবং রাশিয়াকে পরিষ্কার করতে হবে যে তাদেরকে আন্তর্জাতিক আদর্শের এই লঙ্ঘনের মূল্য দিতে হবে”, এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তার ন্যাটো মিত্রদের সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আমেরিকার রাজনীতিকে লক্ষ্য করে রাশিয়ার প্রভাব কার্য (influence operations) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ইরাক

১৯৯০ সালে সাদ্দাম হুসেনের অধীনে ইরাক কুয়েত আক্রমণকরার পর বাইডেন প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ভোট দেন। তিনি প্রশ্ন করেন, “আমেরিকানদের সৌদি আরবের বালিতে তাদের মৃত্যুর জন্য পাঠানোর মাধ্যমে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের যৌক্তিকতা সিদ্ধ হয়?” ১৯৯৮ সালে বাইডেন ইরাকের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য একটি স্থায়ী প্রচেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান। ২০০২ সালে সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বলেন যে সাদ্দাম “একটি দীর্ঘমেয়াদী হুমকি এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি স্বল্পমেয়াদী হুমকি” এবং “এই হুমকি দূর করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। তিনি এমন একজন লোক, যিনি পৃথিবীর জন্য এক চরম বিপদ। তাকে অবশ্যই তার অস্ত্র থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে অথবা ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে হবে।” বাইডেন রেজোলিউশনকে সমর্থন করেছিলেন যেখানে প্রস্তাব করা হয়েছিল, শুধুমাত্র সমস্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমাপ্তির পরেই ইরাকে সামরিক অভিযানের অনুমোদন দেয়া উচিৎ। কিন্তু তার এই রিজোলিউশন ব্যর্থ হয়। বাইডেন পরবর্তীতে ২০০২ সালের রেজোলিউশনের পক্ষে ভোট দেন, যেখানে ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, “আমি এর পক্ষে ভোট দেব, কারণ ইরাককে জাতিসংঘের বাধ্যবাধকতাগুলো মানতে বাধ্য করানো উচিত। কারণ ইরাকের গণবিধ্বংসী কর্মসূচির (mass destruction program) অবৈধ অস্ত্রসমূহ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আসন্ন হুমকি হয়ে না দাঁড়ালেও, আমার মতে যদি তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে এই কাজ করতে থাকে তাহলে তা একসময় আমাদের জন্য হুমকিতে পরিণত হবে। এবং কংগ্রেসের একটি শক্তিশালী ভোট ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের উপর জাতিসংঘের সেখানে অস্ত্র পরিদর্শকদেরকে পাঠানোর একটি কঠিন, নতুন প্রস্তাবের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে এটি আমার মতে যুদ্ধের সম্ভাবনাকেও কমিয়ে দিয়েছে।”

ইরাক যুদ্ধের সময় “কূটনৈতিক সমাধান করার ব্যর্থতা, যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য মিত্রদের আরো শক্তিশালী দলকে তালিকাভুক্ত করার ব্যর্থতা এবং ইরাক পুনর্গঠনের পরিকল্পনার অভাব”-এর কারণে বাইডেন ধারাবাহিকভাবে জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের সমালোচনা করেন। তিনি ২০০৩ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে যুদ্ধ প্রতিরোধে শক্তিশালী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য বুশের সমালোচনা করেন, কিন্তু সে সময় তিনি বলেন যে সাদ্দাম হুসেইনকে তার অস্ত্রসমূহের থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং/অথবা তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া একটি “সঠিক সিদ্ধান্ত”। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে মিট দ্যা প্রেসকে (Meet the Press) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বল প্রয়োগের অনুমোদন দিতে তার ২০০২ সালের ভোট সম্পর্কে বলেন, “এটি একটি ভুল ছিল। এটা ধরে নেওয়া ভুল ছিল যে আমরা প্রেসিডেন্টের হাতে যে কর্তৃত্ব আরোপ করেছিলাম তা তিনি সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। … আমরা প্রেসিডেন্টকে এই ক্ষমতা দিয়েছিলাম যাতে তিনি সাদ্দামকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সমগ্র বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন। কিন্তু যেটা ঘটল তা হল পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি ছাড়াই আমরা খুব দ্রুতই ইরাক আক্রমণ করতে চলে গেলাম। আর আমরা কোন পরিকল্পনা ছাড়াই সেই দিকে গিয়েছিলাম।” ২০০৭ সালে বাইডেন ইরাকে বুশের সৈন্য বৃদ্ধির (“troop surge”) তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি এটিকে “বেদনাদায়ক ভুল” বলে অভিহিত করেন। তিনি ২০০২ সালের প্রস্তাব বাতিল এবং প্রতিস্থাপনের আইনের (লেজিসলেশন) জন্য প্রচার করেন। তার যুক্তি ছিল, সাদ্দাম হুসেইনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়েছে, তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, এবং ইরাকে কোন গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি বলে ২০০২ সালের রেজোলিউশনের এখন আর কোনও প্রয়োজন নেই। বাইডেন সেটাকে প্রতিস্থাপিত করে যে নতুন রেজোলিউশনকে সমর্থন করেছিলেন তাতে প্রস্তাব করা হয়, মার্কিন সৈন্যরা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে এবং ইরাকি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, কিন্তু মার্কিন সৈন্যদের একটি “দায়িত্বশীল সৈন্য-প্রত্যাহার” (“responsible drawdown”) শুরু করা হবে যার মাধ্যমে ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্যদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসা হবে।

২০০৬ সালের মে মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসে বাইডেন এবং বৈদেশিক সম্পর্ক কাউন্সিলের (Council on Foreign Relations) প্রেসিডেন্ট এমেরিটাস লেসলি এইচ জেলব একটি বিকেন্দ্রীভূত ফেডারেল ইরাকের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যেখানে সুন্নি, শিয়া এবং কুর্দিদের আলাদা আলাদাভাবে শক্তিশালী আঞ্চলিক প্রশাসন ও তুলনামূলকভাবে দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে। এই পরিকল্পনার অধীনে দেশটিতে কোন বিভাজন বা পার্টিশন ঘটবে না, আর কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব কিছু সাধারণ উদ্বেগের জায়গাগুলোতে যেমন “সীমান্ত প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র নীতি এবং তেল উৎপাদন এবং রাজস্ব ভাগাভাগির” ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল সুন্নি, শিয়া এবং কুর্দিদের মধ্যে ইরাকে উচ্চ পর্যায়ের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করা। বাইডেন এই পরিকল্পনাকে ১৯৯৫ সালের ডেয়টন চুক্তির (1995 Dayton Agreement) সাথে তুলনা করেন, যা বসনিয়ান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল। এই পরিকল্পনা একটি মিশ্র অভ্যর্থনা লাভ করেছিল। বাইডেন এবং সিনেটর স্যাম ব্রাউনব্যাকের (কানসাসের রিপাবলিকান) পৃষ্ঠপোষকতায় এই পরিকল্পনার সমর্থনে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি অ-বাধ্যতামূলক বা নন-বাইন্ডিং সেন্স অফ দ্য সেনেট রেজোলিউশন ৭৫-২৩ ভোটে সিনেটে পাশ করে। কিন্তু বুশ প্রশাসন এবং অনেক ইরাকি রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। এই রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির ইউনাইটেড ইরাকি অ্যালায়েন্স। স্বায়ত্তশাসন (autonomy) বা যুক্তরাষ্ট্রীয়তা (federalism) প্রস্তাব ইরাকি আরবদের মধ্যে ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় ছিল, কিন্তু ইরাকি কুর্দিরা, কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার এবং ইরাকের প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি (যিনি নিজে কুর্দ ছিলেন) এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

২০১৬ সালে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এন হাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন “মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে আমেরিকার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি” পরিবর্তনের কথা বলেন। তিনি আরও বলেন যে ইরাক থেকে যে শিক্ষা পাওয়া গেছে তা হল “বৃহৎ স্থায়ী সৈন্যদের সাথে বল প্রয়োগের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যয়বহুল, এবং মার্কিন সেনাদল সেখান থেকে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত এই ব্যয় বাড়তেই থাকবে।”

আফ্রিকা এবং লিবিয়া ও সুদান

বাইডেন আফ্রিকায় অ্যাবস্টিনেন্স-অনলি সেক্স এডুকেশন প্রোগ্রামে ফান্ডিং এর বিরোধিতা করেন (অ্যাবস্টিনেন্স-অনলি সেক্স এডুকেশন বলতে সেই সেক্স-এডুকেশন বোঝায় যা বিবাহ-পূর্ব যৌনতা না অনুসরণ করতে শেখায়, এবং অনেক ক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ যৌনতার মত অন্যান্য যৌন ও প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থশিক্ষার বিষয়গুলোকে শিক্ষাসূচী থেকে বাদ দিয়ে দেয়)। জর্জ ডব্লিউ বুশ একটি ম্যান্ডেট দিয়েছিলেন যেখানে এই অ্যাবস্টিনেন্স-অনলি সেক্স এডুকেশন প্রোগ্রামে আফ্রিকায় দেয়া ফান্ডের এক-তৃতীয়াংশ খরচ হতো। এর জায়গায় বাইডেন এইচআইভি প্রিভেনশন অ্যাক্টকে কোস্পনসর করেছিলেন, তা বুশের ম্যান্ডেটের পরিসমাপ্তি টেনেছিল। আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান চীনের প্রভাবকে দমন করার জন্য বাইডেন সেখানে অধিকতর মার্কিন সম্পৃক্ততার পক্ষপাতী।

২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে ওবামা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বিতর্কের সময় বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন। বাইডেন বলেছেন যে মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অস্থিতিশীলতার কারণে তিনি “জোরালোভাবে লিবিয়া যাওয়ার বিপক্ষে” ছিলেন। তিনি পরে চার্লি রোজকে বলেন, “আমার প্রশ্ন ছিল, ‘ঠিক আছে, আমাকে বলুন এর পর কী হবে।’ ও (গাদ্দাফি) চলে গেলো, কিন্তু তারপর কী হবে? এতে দেশটা কি ভেঙ্গে পড়বে না? তারপর কী হবে? তখন কি দেশটা এমন একটা জায়গায় চলে যাবে না যেটা চরমপন্থার বৃদ্ধির জন্য একটি পেট্রি ডিশ হয়ে উঠবে? আর ঠিক এটাই হয়েছে।” কিন্তু প্রকাশ্যে বাইডেন ওবামা প্রশাসনের লিবিয়ার হস্তক্ষেপে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “ন্যাটো এটা ঠিক করেছে। এই ক্ষেত্রে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে এবং একটিও প্রাণ হারায়নি। কিভাবে অতীতকে পেছনে ফেলে আমরা বিশ্বের সাথে ডিল করব তারই একটি প্রেসক্রিপশন”। বাইডেন সুদানের দারফুরে যুদ্ধের সময় দারফুরে মার্কিন সৈন্য মোতায়েনের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ২,৫০০ মার্কিন সৈন্য এই অঞ্চলে সহিংসতা থামাতে পারে।

বলকান, ন্যাটো ও পোল্যান্ড

১৯৯০ সালে, বাইডেন বসনিয়ান সার্ব বাহিনী দ্বারা বসনিয়ান গণহত্যা বন্ধ করার প্রচেষ্টায় জড়িত ছিলেন। তিনি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, বসনিয়ার মুসলমানদের প্রশিক্ষণ এবং ন্যাটোর বিমান হামলা এবং যুদ্ধাপরাধের তদন্তের “লিফট অ্যান্ড স্ট্রাইক” (বিল ক্লিন্টনের দ্বারা প্রস্তাবিত) নীতিকে সমর্থন করেন। বাইডেন ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বলকান নীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকাকে পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কিত “তার জনজীবনের সবচেয়ে গর্বিত মুহূর্ত” বলে অভিহিত করেছেন।

কসোভো যুদ্ধের (১৯৯৯০) সময়, বাইডেন ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়ার (সার্বিয়া এবং মন্টিনিগ্রো) বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ সমর্থন করেন। তিনি কসোভো আলবেনিয়ানদের প্রতি যুগোস্লাভ সামরিক অভিযান থামাতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বল প্রয়োগের জন্য জন ম্যাককেইনের সাথে একটি প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। বাইডেন নিখোঁজ ব্যক্তি এবং যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সার্বিয়াকে চাপ দিয়েছেন। তিনি কসোভোর স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন এবং এটিকে “অপরিবর্তনীয়” মনে করেন।

২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী প্রচারণায় বাইডেন কসোভো এবং সার্বিয়ার মধ্যে পারস্পরিক স্বীকৃতি এবং কসোভোর ইইউ ভিসা উদারীকরণ অর্জনের জন্য একটি চুক্তিকে সমর্থন করেন। তিনি আলবেনিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ ইইউ সদস্য হওয়ার লক্ষ্যে এর সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করেন। বাইডেন বসনিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব, এর বহুজাতিক সমাজ এবং ন্যাটো এবং ইইউ-এর ভবিষ্যৎ সদস্যপদ সমর্থন করেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় বাইডেন ন্যাটোর সহযোগী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মার্কিন সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন, যার কারণে তিনি ট্রাম্পের ইনসাল্ট ও শত্রুভাবাপন্নতার মুখে পড়েন, শুধু বাইডেনকেই নয়, একই সাথে ট্রাম্প ন্যাটো এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক জোটেরও সেবার সমালোচনা করেছিলেন। বাইডেন জার্মানিতে মোতায়েন হওয়া ৯,৫০০ মার্কিন সৈন্যের প্রত্যাহার সম্পর্কিত ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। ট্রাম্প ন্যাটোকে “বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক জোট” এর বদলে একটি “সুরক্ষা র‍্যাকেট” হিসেবে বিবেচনা করেন বলে বাইডেন তার সমালোচনা করেছেন এবং বাইডেনের উপদেষ্টারা মনে করেন, উদীয়মান চীনকে মোকাবেলা করার জন্য ন্যাটোর শক্তিশালী হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় কূটনীতিবিদ এবং বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইডেন প্রেসিডেন্সি যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটিশবিশেষ সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কার ভাঙ্গা জোটকে মেরামত করতে পারে, এবং একটি ট্রান্স-আটলান্টিক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে।

বাইডেন পোল্যান্ডে “এলজিবিটি মুক্ত অঞ্চল”-এর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা বিশ্বের কোথাও এইরকম অঞ্চলের কোন স্থান নেই।” ২০২০ সালে বাইডেন বেলারুশ এবং স্বৈরাচারী শাসকদের পাশাপাশি পোল্যান্ডকে স্থাপন করে বলেন, “আপনি দেখতে পারছেন বেলারুশ থেকে পোল্যান্ড হয়ে হাঙ্গেরি পর্যন্ত কী ঘটছে, আর দেখতে পাচ্ছেন বিশ্বে স্বৈরাচারী সরকারের উত্থান। আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) বিশ্বের সকল গুণ্ডাদের সমর্থন করেন।”

মধ্য আমেরিকা ও কিউবা

ওবামা প্রশাসনের অংশ হিসেবে বাইডেন মাদক ব্যবসায়ীদের মোকাবেলা এবং মধ্য আমেরিকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তিশালী করতে সেন্ট্রাল আমেরিকা রিজিওনাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (কারসি বা CARSI) সমর্থন করেন। ২০০৮ এবং ২০১১ সালের মধ্যে, ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট মধ্য আমেরিকার দেশগুলোকে ৩৬১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট কারসির কাছে পাঁচটি প্রধান লক্ষ্যের কথা বলেছিল –
(১) এই অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য নিরাপদ সড়ক তৈরি করা।
(২) মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অপরাধীদের যাতায়াত এবং অবৈধ বাণিজ্যে বিঘ্নিত করা।
(৩) শক্তিশালী, সক্ষম এবং জবাবদিহিতামূলক মধ্য আমেরিকান সরকারের উন্নয়ন সমর্থন।
(৪) ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়গুলোর কার্যকর রাষ্ট্রীয় উপস্থিতি এবং নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
(৫) এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা, আইন সমন্বয় এবং সহযোগিতার মাত্রা বৃদ্ধি করা।

২০১২ সালে যখন বাইডেন হন্ডুরাসের নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখন তিনি এই অঞ্চলের জন্য ওবামা প্রশাসনের ১০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন, এবং বলেন ওবামা প্রশাসন কার্সির অধীনে তহবিল সরবরাহ করার জন্য কংগ্রেসের সাথে কাজ করবে। এই উদ্যোগ মাদক পাচার প্রতিরোধে এই অঞ্চলের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ ছিল।

২০১৪ সালে মধ্য আমেরিকার শিশু-অভিবাসী সংকটের সময় বাইডেন ক্ষতিগ্রস্ত মধ্য আমেরিকার দেশগুলোকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক সাহায্য প্যাকেজ (aid package) সমর্থন করেন। দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি অপ-এড-এ তিনি লিখেছেন, “মধ্য আমেরিকার নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি আমাদের নিজেদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।” তিনি ঐ সব দেশের দুর্নীতি মোকাবেলায় আরো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে সমর্থন করেন, যাতে তারা তাদের জনগণকে নিরাপদ জীবনযাত্রার পরিবেশ প্রদান করতে পারে।

সিনেটে থাকাকালীন সময়ে বাইডেন হেলমস-বার্টন আইনের (Helms-Burton Act) পক্ষে ভোট দেন এবং কিউবার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেন। ২০০৬ সালে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান যে কাস্ত্রোরা চলে যাওয়ার পর আমরা কিভাবে গণতন্ত্রীকরণ এবং উদারীকরণের দিকে সে দেশকে অগ্রসর হতে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছি… । ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন ওবামার কিউবান থ (Cuban thaw, ৫৪ বছর শত্রুতার পর কিউবার-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নয়ন) এবং কিউবার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনকে সমর্থন করেন। বাইডেন বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার “পশ্চিম গোলার্ধের অন্যান্য জাতির সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অকার্যকর বাধা” দূর করে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্ত হওয়া সহজ করে দিয়েছে।

বাইডেন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিউবার মধ্যে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। তিনি একটি অপ-এড-এ লিখেছেন, ট্রাম্পের ভ্রমণ এবং বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় চালু করা কিউবানদের ক্ষতি করছে যারা “কমিউনিস্ট রাষ্ট্র থেকে বৃহত্তর স্বাধীনতা” খুঁজছে, সেই সাথে ট্রাম্পের পদক্ষেপটি পশ্চিম গোলার্ধের মিত্রদেরকে বিচ্ছিন্ন করেছে। বাইডেন আরও লিখেছেন যে “ট্রাম্পের… দ্বারা কিউবার আমেরিকানদের কিউবায় তাদের পরিবারের সাথে পুনর্মিলিত হওয়ার এবং তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতা সীমিতকরণ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ল্যাটিন আমেরিকার নীতি একটি ঠাণ্ডা যুদ্ধের যুগের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে এবং সবচেয়ে খারাপ যেটা হবে তা হল একটি অকার্যকর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।” বাইডেন অঙ্গীকার করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে কিউবার সাথে ওবামা আমলের মার্কিন সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করবেন।

তথ্যঋণ – উইকিপিডিয়া নিবন্ধ “Political positions of Joe Biden

1 Trackback / Pingback

  1. আউটলাইন – বিবর্তনপথ

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.