প্রাণীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ আমাদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় একটা ব্যাপার একই সাথে এটা একটি জটিল প্রক্রিয়া যা আমরা প্রায়শই বুঝতে সক্ষম হই না। মানুষ ইতিমধ্যে অন্যান্য কিছু প্রজাতির সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু এবার প্রথমবারের মত রোবটের সাহায্যে গবেষকরা দুটি ভিন্ন প্রাণীর মধ্যে যোগাযোগ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।
Science Robotics জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, গবেষকদের দলটি অস্ট্রিয়ায় থাকা কিছু মৌমাছির সাথে সুইজারল্যান্ডের কিছু মাছের সাথে যোগাযোগ করাতে সক্ষম হয়েছেন। প্রাণীদের প্রত্যেকটি গ্রুপের মধ্যে তাদের নিজস্ব প্রতিরূপ রোবট ছিল যা যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে, দুইটি গ্রুপকে সংযুক্ত করে এবং এর ফলে তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে।
প্রতিটি গ্রুপের রোবটগুলি সেই প্রজাতির নির্দিষ্ট সংকেত নির্গত করে। মৌমাছি রোবটগুলো কম্পন উৎপাদন, তাপমাত্রা পরিবর্তন, এবং বায়ু চলাচল তৈরি করে। মাছ রোবটগুলো নিজেদের রঙ, আকৃতি, এবং তাদের চলাচলের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারে। প্রতিটি রোবট তার নির্ধারিত প্রজাতির দ্বারা উত্পাদিত সংকেত রেকর্ড করে, এটি অন্য রোবটে প্রেরণ করে এবং তারপর সংকেতগুলো কে এমনভাবে অনুবাদ করে যাতে তা নির্দিষ্ট প্রজাতিগুলো বুঝতে পারে।
Ecole Polytechnique Federale de Lausanne ইনস্টিটিউটের Biorobotics Labratory (bioRob) এর প্রধান লেখক Frank Bonnet তার একটি বিবৃতিতে বলেন, “আমরা দুটি প্রজাতির মধ্যে একটি অভূতপূর্ব সেতু তৈরি করেছি, যা তাদের নিজেদের মধ্যে গতিশীলতা বিনিময় করাতে সক্ষম হয়েছে”। তিনি আরোও বলেন, “এমন কি প্রজাতিগুলি একে অপরের কিছু বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করতে শুরু করেছিল। মৌমাছিগুলি একটু বেশি অস্থির হয়ে উঠেছিল এবং ঝাঁকে চলার প্রবণতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম দেখা যাচ্ছিল, এবং মাছগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি একসাথে দল বেঁধে চলতে শুরু করেছিল।”
দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশের অভিজ্ঞতা এবং ৭০০ কিলোমিটারের দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় প্রযুক্তির কল্যাণে।
প্রথমে তাদের মধ্যকার মিথষ্ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়। গবেষকদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৫ মিনিটের মধ্যে দুটি প্রজাতির মধ্যে সামঞ্জস্যতা দেখা যায়। মাছগুলো ট্যাংকের মধ্যে কাউন্টারক্লকওয়াইজ ভাবে ঘুরতে থাকে। আর মৌমাছি গুলো তাদের একটি রোবোটিক টার্মিনালে ঝাঁক বেঁধে ঘুরতে থাকে।
BioRob এর অধ্যাপক Francesco Mondada ব্যাখ্যা করেন,” রোবটগুলো কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আলোচক ও দোভাষীদের মত কাজ করেছে।” তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে প্রাণীগুলো ধীরে ধীরে একটি সিদ্ধান্তে আসে।”
এই গবেষণাটির একাধিক প্রয়োগ রয়েছে। এই নতুন পদ্ধতি রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের জৈবিক সংকেত ধরতে, অনুবাদ, এবং বুঝতে সাহায্য করতে পারে। এদিকে, জীববিজ্ঞানীরা বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে প্রাণীদের আচরণ এবং মিথস্ক্রিয়া আরও ভালভাবে বোঝার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারে। ভবিষ্যতে, অনুরূপ পন্থা ব্যবহার করে প্রাণীদেরকে নিরাপদ স্থানে থাকতে উৎসাহিত করা অথবা পরিবেশকে নিরীক্ষণ করতে তাদের ব্যবহার করা যেতে পারে যা তাদের সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকে আরো গতিশীল করবে।
তথ্যসূত্র:
1. http://robotics.sciencemag.org/content/4/28/eaau7897
2. https://actu.epfl.ch/news/robots-enable-bees-and-fish-to-talk-to-each-other/
Leave a Reply