না, প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল থেকে ডার্ক ম্যাটার তৈরি হয়নি, ভুল ছিলেন হকিং

ভেরা রুবিন এবং কেন্ট ফোর্ডের প্রথম প্রস্তাবের কয়েক দশক পরেও ডার্ক ম্যাটার এখনও রহস্য হয়েই আছে। কিছু জিনিস যে ছায়াপথকে প্রভাবিত করে সেটা ঠিকই দেখা গেল, কিন্তু সেগুলো আলোর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে না। দেখা গেল ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কিত ব্যাখ্যাগুলো প্রমাণ করার চেয়ে সেগুলো বাতিল করাতেই বিজ্ঞানীরা বেশি পারদর্শী। আর সম্প্রতি জোতির্বিজ্ঞানীগণ এই বিষয়ে কিছু উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন যা বলছে, ডার্ক ম্যাটার ক্ষুদ্র প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল দ্বারা তৈরি নয়।

এই দুইয়ের মধ্যকার সংযোগ অবশ্যই আবেদনময়। প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল এর অস্তিত্ব বিষয়ে নিশ্চয়তা এখনও পাওয়া যায় নি। প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল আর ডার্ক ম্যাটার উভয়ই মহাকর্ষের সাথে একচেটিয়াভাবে মিথস্ক্রিয়া করে এবং আমরা কেবল তাদের প্রভাবগুলি দেখি। স্টিফেন হকিং এবং অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীগণ মনে করেছিলেন যে প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল হচ্ছে ডার্ক ম্যাটারের এর জন্য একটি অসাধারণ ব্যাখ্যা। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, পর্যবেক্ষণ এর সাথে এটি মিলছে না।

ব্ল্যাক হোল অত্যন্ত ঘন বস্তু, এত ঘন যে তারা তাদের সামনের বস্তু থেকে আসা আলো পর্যন্ত বাঁকিয়ে ফেলতে পারে। যদি বিগ ব্যাংয়ের পরে প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক হোল তৈরি হয় এবং এখন সেগুলো ডার্ক ম্যাটার তৈরি করে থাকে, তাহলে ছায়াপথগুউলোর চার পাশে যে আলো প্রদক্ষিণ করে, আমরা সেগুলোর সূক্ষ্ম পরিবর্তন সনাক্ত করতে পারতাম। এই ঘটনাটিকে মাইক্রোলেন্সিং বলা হয় কারণ এটি ব্যাকগ্রাউন্ড আলোকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃত করে না। এটা শুধু নক্ষত্রের আলোকে হালকা জোড়দার করে।

কাভলি ইনস্টিটিউট ফর দ্য ফিজিক্স এন্ড ম্যাথেমেটিক্স এর গবেষকগণ এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ করার জন্য সুবারু টেলিস্কোপ ব্যবহার করেন। একটি মাইক্রোলেন্সিং ঘটনা দেখার জন্য, একটি ব্ল্যাক হোল, একটি নক্ষত্র ও পর্যবেক্ষককে এক সরল রেখায় থাকতে হয়। তাদের মাইক্রোলেন্সিং ঘটনা দেখার সম্ভাবনা সর্বাধিক করতে, দলটি টেলিস্কোপে হাইপার সুপারাইম-ক্যাম ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করে, যা একটি শটে সমগ্র এন্ড্রোমিডার ছবি তুলতে পারে। তারা এন্ড্রোমিডার ১৯০টিরও বেশি ছবি সংগ্রহ করেছে।

যদি ডার্ক ম্যাটার ০.১ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের ব্ল্যাক হোল দ্বারা তৈরি হত (চাঁদের চেয়েও হালকা), তবে দলটির অনুমান অনুসারে তারা ১,০০০ টি মাইক্রোলেন্সিং ঘটনা দেখতে পারতেন। কিন্তু তারা শুধুমাত্র একটি মাইক্রোলেন্সিং ঘটনাই পর্যবেক্ষণ করেন।

নেচার এস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত এই আবিষ্কারটি বলছে, প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোলগুলো ০.১% এর বেশি ডার্ক ম্যাটার তৈরির জন্য দায়ী নয়। গত বছরের আরেকটি গবেষণা ইতিমধ্যে দেখিয়েছিল যে ব্ল্যাক হোল ৪০% এরও কম ডার্ক ম্যাটার তৈরির জন্য দায়ী। যাই হোক, ডার্ক ম্যাটারের সত্যিকার বৈশিষ্ট্য তাহলে এখনও রহস্যময় হয়েই থাকল।

তথ্যসূত্র:
1. জার্নালের লিংক – https://www.nature.com/articles/s41550-019-0723-1
2. https://www.ipmu.jp/en/20190402-PrimordialBlackHole
3. https://www.iflscience.com/space/black-holes-unlikely-to-be-the-universes-mysterious-missing-dark-matter/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.