ডিএনএ ও আরএনএ এর উদ্ভব হয়তো একই সাথে, নতুন আবিষ্কারটি চ্যালেঞ্জ করছে প্রাণ সৃষ্টি বিষয়ক বিজ্ঞানের পূর্ববর্তী ধারণাকে!

পৃথিবীর জীবনের উদ্ভব একটি রহস্য। পৃথিবীর উপরিভাগে উপস্থিত নির্জীব অণুগুলি কীভাবে “জীবিত” হয়ে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন অনুকল্পগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি প্রচলিত অনুমান প্রস্তাব করে যে, জেনেটিক তথ্য প্রেরণ করার জন্য কোষ দ্বারা ব্যবহৃত আরএনএ-এর অণু প্রথমে গঠিত হয় এবং পরবর্তীতে ডিএনএ এটি থেকে গঠিত হয়। একটি নতুন গবেষণা এখন এই অনুকল্পকে চ্যালেঞ্জ করছে।

নেচার কেমিস্ট্রি জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, আরএনএ এবং ডিএনএ একসঙ্গে গঠিত হতে পারে। দুটি অণু খুব অনুরূপ কিন্তু অভিন্ন নয়। ডিএনএ একটি ডাবল হেলিক্স বা দ্বিসূত্রক, আর আরএনএ একটি স্ট্র্যান্ড বা একক সূত্রক। আরএনএ-তে একটি ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার এর পরিবর্তে একটি রাইবোজ শ্যুগার আছে। তারা একে অপরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে, কিন্তু গবেষকগণ জীবিত প্রাণীর দ্বারা উত্পন্ন এনজাইমগুলি ব্যবহার না করে একটিকে আরেকটিতে রূপান্তরিত করার জন্য এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এই কারণে, “আরএনএ বিশ্ব” (“RNA world”) অনুকল্পটিকে সব থেকে বেশি প্রভাবশালী বলে মনে হয়েছিল: বিভিন্ন পরিবর্তন এবং জটিলতার বৃদ্ধির মাধ্যমে আরএনএ থেকে একপর্যায়ে ডিএনএ তৈরি হয়েছিল। যাই হোক, গবেষকগণ এখন আরএনএ এর কিছু সম্ভাব্য পূর্বপুরুষকে থেকে ডিএনএ এর কিছু সম্ভাব্য পুর্বপুরুষে রূপান্তরিত করবার কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার ধাপ আবিষ্কার করেছেন।

স্ক্রিপস রিসার্চ এর রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রামনারায়ণ কৃষ্ণমূর্তি তার এক বিবৃতিতে বলেন, “এই নতুন আবিষ্কারগুলো নির্দেশ করছে যে, পৃথিবীতে প্রাণের উৎস্যের অনুসন্ধানে আরএনএ বিশ্ব অনুকল্পের উপর রসায়নবিদদের এত বেশি নির্ভর করা উচিত নয়”।

ডিএনএ তুলনায় আরএনএ সরলতর এবং আরো বহুমুখী। অনেক ভাইরাস তাদের জেনেটিক তথ্য এনকোড করার জন্য এটি ব্যবহার করে, এবং সমস্ত জীব প্রোটিন উৎপাদনে এবং আরও স্থিতিশীল ডিএনএতে এনকোড করা নির্দেশাবলিকে প্রেরণ করতে এটাকে ব্যবহার করে। দলটি সন্দেহ করে যে, যদি ডিএনএ ও আরএনএ এর আবির্ভাব একসাথে হয়, তবে তারা আজ কঠোর ভূমিকা পালন করে চলেছে সেই ভূমিকাটি তারা খুব তাড়াতাড়িই গ্রহণ করেছে।

কৃষ্ণমূর্তি আরও বলেন, “এক্ষেত্রে একটি উপলব্ধির সূত্রপাত হয়েছে যে, আরএনএ এবং ডিএনএ প্রাথমিকভাবে একত্রিত হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু পরবর্তিতে তারা যে কাজে ভাল সেই অনুযায়ী পৃথক হয়ে যায়।”

তাদের গবেষণাটি থিওরিডাইন নামে পরিচিত একটি যৌগের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এই থিওরিডাইনকে দুটি অণুতে রূপান্তরিত করা যেতে পারে যা প্রাথমিক ডিএনএ বিল্ডিং ব্লকের পূর্বসূরী হতে পারে। যাই হোক এই গবেষণাটি অবশ্যই আরএনএ বিশ্ব অনুকল্পটির শেষ কথা নয়, তাই অন্যেরা সম্ভাব্য অন্যান্য পরিস্থিতির কথাও বিবেচনা করতে পারেন। ভবিষ্যতে হয়তো এটি সম্পর্কে আরও কিছু জানা যাবে।

তথ্যসূত্র:
1. জার্নাল লিংক – https://www.nature.com/articles/s41557-019-0225-x
2. https://www.scripps.edu/news-and-events/press-room/2019/20190401-krishnamurthy-origins-of-life.html

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.