photo credit: Teeth from this skeleton in Kotias rock shelter, western Georgia, held intact DNA almost 10,000 years old, revealing a missing piece of European and Indian ancestry. Credit Eppie Jones
মানুষের একটি দল আফ্রিকা থেকে ৪৫,০০০ বছর পূর্বে ব্ল্যাক সি ও কাস্পিয়ান সি এর মধ্য দিয়ে উত্তরের দিকে মাইগ্রেট বা ভ্রমণ করেছিল। এবং তারপর এরা ইউরোপে ও নর্দার্ন এশিয়ায় ছড়িয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি Nature Communications জার্নালে প্রকাশিত এই স্টাডিতে পাওয়া নতুন এভিডেন্সগুলো বলছে, ককেশাস মাউন্টেনে যে গ্রুপটা ছিল তা অন্যান্য মানুষের গ্রুপ থেকে একেবারেই ডিসকানেক্ট হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এরা এদের উত্তরে গমন করা সঙ্গীদের থেকে ডিসকানেক্ট হয়ে যায়, পরবর্তীতে তারা দক্ষিণ দিকের সমস্ত পপুলেশন থেকেও ডিসকানেক্ট হয়ে গিয়ে সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছিল। যে অংশটি ককেশাস পর্বতের দক্ষিণে আটকে যায় তাদের নামকরণ করা হয়েছে ককেশাস হান্টার গ্যাদারার (CHG) আর যে অংশটি ইউরোপের পশ্চিম দিকে চলে যায় তাদের নামকরণ করা হয়েছে ওয়েস্টার্ন হান্টার গ্যাদারার (WHG)। গবেষকগণ ককেশাস হান্টার গ্যাদারারদের জেনেটিক্স সম্পর্কে জানতে পেরেছেন Satsurblia গুহার একটি ১৩,৩০০ বছর পুরাতন হাড় ও Kotias গুহার ৯,৭০০ বছ পুরাতন দাঁত এর মাধ্যমে।নামকরণ ভিন্ন কারণ এদের জেনেটিক্স ভিন্ন। প্রশ্ন আসতে পারে, একই গ্রুপ থেকে তৈরি দুটো গ্রুপের মানুষ এর জেনেটিক্স ভিন্ন হয়ে কি করে? উত্তর খুব সরল। আর সেটা হল বিবর্তন। প্রশ্ন হচ্ছে কেন ও কিকরে এদের জেনেটিক্স ভিন্ন হয়ে গেল?
Cambridge University এর গবেষক এবং এই স্টাডির সিনিয়র অথর Dr. Andrea Manica জানান, “তখন থেকে শুরু করে হাজার হাজার বছর গ্লেশিয়াল ম্যাক্সিমাম (যখন শেষ আইস এজ সবচেয়ে বেশি ইনটেন্স ছিল। ১০,০০০বছর পূর্বে এটা পৃথিবীর উষ্ণ হবার ফলে শুরু হয়) এ নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের ফলে এই লোকদের মধ্যে আমাদের চেয়ে ভিন্ন ধরণের জেনেটিক্স তৈরি হয়।” ওয়েস্টার্ন হান্টার গ্যাদারারদের ইউরোপের মেইন ল্যান্ডে মাইগ্রেশনের পর তাদের সাথে অবশ্যই ককেশাস হান্টার গ্যাদারারদের কোন যৌন সম্পর্ক ছিল না। অন্য দিকে গবেষকগণ গ্লেসিয়াল ম্যাক্সিমাম শেষ হবার আগের ২০,০০০ বছর ধরে এদের সাথে দক্ষিণ দিকের পপুলেশন এর অবিরত ইন্টারচেঞ্জ এর চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু এর পর দক্ষিণের কারও সাথে এদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক হয় নি। এসবই ককেশাস হান্টার গ্যাদারারদের ভিন্ন জেনেটিক্স তৈরির কারণ।
তাহলে ভিন্ন জেনেটিক্স এর রহস্য জানা গেল। এখন প্রশ্ন হল কিকরে এই জেনেটিক্স ইউরোপে চলে আসল? Manica জানান, “যখন তারা অন্যান্য মানুষের সাথে পুনরায় কানেক্টেড হয়, এই ককেশাস হান্টার-গ্যাদারাররা ইয়ামনায়া লোকদের (Yamnaya people) এনসেস্ট্রির একটা পার্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ পরবর্তীতে এদের সাথে অন্য একটি গ্রুপের মানুষের মিশ্রণের ফলে ইয়ামনায়া পপুলেশন এর জন্ম। এই অন্য গ্রুপটি হল ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান হান্টার-গ্যাদারার পপুলেশন। ইয়ামনায়া পিপলরা কোথা থেকে এসেছে তা এতদিন রহস্যমণ্ডিত ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু আমরা জানতে পেরেছি যে তাদের জেনেটিক মেক-আপ ককেশাস হান্টার গ্যাদারারদের এই অংশ এবং ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান হান্টার গ্যাদারার পপুলেশনের মিশ্রণ তাই আমরা এখন জানি যে ইয়ামনায়া পিপল কোথা থেকে এসেছিল।”
পরিষ্কার হল না। তাই না? আমি পরিষ্কার করছি। আজ থেকে ৫,০০০ বছর পূর্বে ঘোড়ায় করে ইয়ামনায়ারা ইউরোপের মেইনল্যান্ডে প্রবেশ করে। সেখানে প্রবেশের পূর্বে তারা বর্তমান ইউক্রেন ও পশ্চিম রাশিয়ায় বসবাস করত। পরবর্তীতে এরা ইউরোপেই স্যাটল করে এবং এরা ইউরোপের জেনেটিক্স ও কালচারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল ভাষা। খুব সম্ভবত ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষার জন্ম এরাই দিয়েছে। কিন্তু ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষা এদের থেকে এসেছে এ ধারণা করা হচ্ছে কেন? একটু পরে এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। ইয়ামনায়ারা কি করে ইউরোপিয়ানদের জেনেটিক্সকে প্রভাবিত করেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
ইয়ামনায়া পিপলের জেনেটিক্স এবং তাদের মাধ্যমে মডার্ন ইউরোপিয়ানদের জেনেটিক্সে এই সামান্য পরিমাণ ককেশাস হান্টার গ্যাদারারের প্রভাব (যাদের কথা এতক্ষণ ধরে বললাম আর কি) এতটাই ছিল যে Manica ও তার কোঅথরেরা এদের কন্ট্রিবিউশনকে ইউরোপিয়ান হেরিটেজের ফোর্থ স্ট্র্যান্ড বা চার নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্য তিনটি হল ওয়েস্টার্ন ইউরোপের হান্টার-গ্যাদারারগণ (যারা ককেশাস এর দক্ষিণে আটকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান নি আর কি), মিডল ইস্ট এর ফারমার বা কৃষক (এরা মিডল ইস্ট থেকে ইউরোপে কৃষি নিয়ে আসে আর তার ফলে ইয়ামনায়া সহ ইউরোপের সমস্ত হান্টার গ্যাদারারগণ কৃষিকাজে অভ্যস্ত হতে শুরু করে) ও নর্থ ইউরেশিয়ানরা ( এরা ইয়ামনায়া এনসেস্ট্রির অন্যান্য কম্পোনেন্টগুলো দান করেছিল)। সমগ্র ইউরোপের মানুষের জেনেটিক্স এই চার রকম জিন এর বিভিন্ন রকম অনুপাতের ফল। আর আমাদের সাউদ এশিয়ানদের জেনেটিক্স হল এশিয়ান ও ককেশিয়ান হান্টার গ্যাদারারদের জেনেটিক্স এর মিশ্রণের ফল। তার মানে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের আর ইউরোপিয়ানদের মাঝে কমন এনসেস্ট্রি হল এই ককেশাস হান্টার গ্যাদারারদের জেনেটিক্স। এই ককেশাস হান্টার গ্যাদারারদের একটা অংশই ইস্টার্ন হান্টার গ্যাদারারদের সাথে না মিলিত হয়ে দক্ষিণ দিকে মাইগ্রেট করতে থাকে আর অনেক ঘাত অপঘাতের পরে শেষ পর্যন্ত ভারতের এসে পৌঁছায়। পরে এখাঙ্কার এশিয়ানদের সাথে মিলিত হয়ে আমাদের সাউদ এশিয়ান জেনেটিক্স তৈরি করে আর কী। তো ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষার কথা বলছিলাম। এই ককেশাস হান্টার গ্যাদারাররদের ভাষাই কিন্তু আমাদের উপমহাদেশের বাংলা, হিন্দী, সংস্কৃত সহ অন্যান্য সব ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষার জন্ম দিয়েছিল। এবার বুঝতে পারছেন তো কেন এদেরকেই ইউরোপ ও ইন্ডিয়ার সাথে সম্পর্কিত একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর ভাষা ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষাগোষ্ঠীর জনক বলে দাবী করা হয়েছে? ইস্টার্ন হান্টার গ্যাদারারদের সাথে এদের একটা অংশ মিলিত হয়ে তাদের মিলনের ফল ইয়ামনায়া পিপল ইউরোপে ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষা আনে আর অন্যদিকে এদের আরেকটি অংশ দক্ষিণ দিকে মাইগ্রেট করে দক্ষিণ এশিয়াতে ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষাগুলোর জন্ম দেয়।
The view from Satsurblia Cave, where the older DNA was found. For thousands of years this cave, and a few others like it, was home to a people entirely cut off from the rest of humanity. Credit: Eppie Jones.
বিস্তৃত দুনিয়ার সাথে পুনর্মিলন ঘটেছিল কেবল আইস এজ শেষ হবার পরেই। একবার এরা স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করার সক্ষমতা অর্জন করবার পর, প্রচুর সময় ধরে ইন্টারব্রিডিং এর ফলে যে জিনগুলো গটিত হয়েছিল সেগুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। ডাবলিনের Trinity College এর পিএইচডি স্টুডেন্ট Eppie Jones বলেন, “ইন্ডিয়া (গোটা উপমহাদেশ) হল এশিয়ান এবং ইউরোপিয়ান জেনেটিক কম্পোনেন্ট এর একটি পূর্ণাঙ্গ মিশ্রণ। মডার্ন ইন্ডিয়ান পপুলেশনে যে ইউরোপিয়ান জেনেটিক কম্পোনেন্ট পাওয়া গেছে তা ককেশাস হান্টার-গ্যাদারার এনসেস্ট্রি এর সাথেই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ করে।”
Leave a Reply