টাইপ-১ ডায়াবেটিস এর মত রোগ নিরাময় করতে এই আগস্ট মাসের শুরুর দিকে একটি যুগান্তকারী প্রচেষ্টা অবলম্বন করা হয়েছে ৷ উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আক্রান্ত দুজন রোগীকে এমব্রায়োনিক স্টেম সেল ইমপ্ল্যান্ট করা হয়েছে ; তাদের মধ্যে একজন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং অপরজন ছিলেন কানাডার নাগরিক৷ গবেষকগণ আশাবাদী যে, এটি তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে সহায়ক হবে৷
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হল অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়। শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। ১০-৩০ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। ইহা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হল HLADR 3 এবং HLADR 4 নামক দুটি জিন ।
টাইপ-১ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়৷
টাইপ-১-এ অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ।
টাইপ-১-বি এটিও বিটা কোষের ধংসের কারণে হয়ে থাকে, কিন্তু এর সঠিক কারণ জানা যায়নি ।
এই রোগে –
(1) রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (>130 mg/100ml)।
(2) রক্তে কিটোন বডির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।
(3) মুত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজ নির্গমন বা গ্লুকোসুরিয়া হয় ।
ভায়াসাইট নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই স্টেম কোষ গুলো উৎপাদন শুরু করেছে৷ এই কোষগুলো রোগীর হাতের চামড়ার নিচে বসানো হয়ে থাকে৷স্টেম সেল থেকে আইলেট সেল এ পরিণত হতে মোটামুটি তিন মাসের মত সময়ের প্রয়োজন হয় ৷
ভায়াসাইট প্রতিষ্ঠান এর পল লাইকিন্ড বলেছেন, এই স্টেম সেল গুলো যদি কাজ করে ,তাহলে তাকে আমরা সম্পূর্ণ নিরাময় না বলে বরং আপাত নিরাময় হিসেবে অভিহিত করতে পারি৷ যদিও এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা অটোইম্যিউন রোগগুলো কে সম্পূর্ণরুপে নিরাময় করতে সক্ষম নই; কিন্তু অটোইম্যিউন রোগের কারনে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষগুলো কে প্রতিস্থাপন করতে পারি ৷
ইতোমধ্যে এই ইমপ্ল্যান্ট গুলো ১৯ জন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর উপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে৷
এই পদ্ধতিটির কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরে আরো ৪০ জন রোগীর উপর ইমপ্ল্যান্ট টি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করতে আগ্রহী৷
ভায়াসাইট ২০১৮ এর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ইমপ্ল্যান্টটি সম্পর্কে যাবতীয় পরীক্ষার প্রাথমিক একটি ফলাফল এবং যথাক্রমে ছয় মাস এবং এক বছর পর এর কার্যক্ষমতা সম্পর্কে যাবতীয় গবেষণা সম্পাদন করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী৷
ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালবার্টা এর জেমস শাপিরো তাঁর একটি বক্তব্যে বলেছেন,উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে আইলেট ট্রান্সপ্ল্যান্ট একটি সফল চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়ার বিশেষ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে; যেমন – সীমিত অঙ্গদাতা,নির্ভরযোগ্য এবং সঙ্গতিপূর্ণ আইলেট সেল প্রিপারেশন তৈরি করার অনিশ্চয়তা৷ কার্যকরী স্টেম সেল প্রসূত আইলেট সেল প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে ৷
প্রক্রিয়াটি ফলপ্রসূ হলে প্রচুর ডায়াবেটিক রোগী উপকৃত হবে৷কারন,সেক্ষেত্রে তাদেরকে ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল মনিটর করা বা ইনসুলিন নেওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না৷ কিন্তু এর কিছু অসুবিধা ও রয়েছে৷ যেমন,তাদেরকে ইম্যিউনিটি দমনকারী ঔষধ এর দারস্থ হতে হবে যেনো তাদের নিজস্ব বডি ইম্যিউনিটি নতুন প্রতিস্থাপিত স্টেম সেলগুলোর প্রতি আক্রমণাত্মক হতে না পারে৷ একারনেই এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি শুধুমাত্র উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছে৷
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।
যেমন -কিডনি বা বৃক্কের অক্ষমতা,
অন্ধত্ব বা দৃষ্টিবিচ্যূতি,ব্রেইন স্ট্রোক,
বিনা দুর্ঘটনায় অঙ্গচ্ছেদের অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস।
তথ্যসূত্র:
- https://www.newscientist.com/article/2142976-first-implants-derived-from-stem-cells-to-cure-type-1-diabetes/
- http://viacyte.com/press-releases/viacyte-announces-first-patients-implanted-with-pec-direct-islet-cell-replacement-therapy-in-international-clinical-trial/
- http://www.diabetes.co.uk/type1-diabetes.html
Leave a Reply