গবেষকগণ আবিষ্কার করেছেন, মানুষেরা কুকুরের ডাকের শব্দের উপর ভিত্তি করে তার মুড বা মেজাজ বুঝতে পারার জন্য উপযুক্ত। তবে পুরুষের চেয়ে নারীরা এই কাজে বেশি পারদর্শী।
পূর্বের গবেষণায় দেখা যায়, কুকুরেরা তাদের মালিকের আবেগ বুঝতে পারার জন্য খুব দক্ষ হয়। কিন্তু মানুষেরা কুকুরের আবেগ, মেজাজ বুঝতে কতটা পারদর্শী? আমাদের সাথে কুকুরের সম্পর্কের ইতিহাস বহুদিনের, এই সম্পর্কের সাক্ষ্য হয়ে আছে আমাদেরই বিবর্তন (এই ব্যাপারে অন্য কোনদিন আলোচনা করব)। এই বিবর্তনের পথে ওদের সাথে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে হাঁটতে আমরা নিশ্চই আমাদের এই ক্যানাইন দাঁতের ঘনিষ্টতম সঙ্গীকে বোঝার কিছু ক্ষমতা আয়ত্ব করে নিয়েছি।
এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয় রয়াল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে। গবেষকদের দলটি তিনটি ভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে কুকুরের গ্রাওল বা গর্জনধ্বনি রেকর্ড করেন। এই তিনটি পরিস্থিতি ছিল অন্য কুকুরদের বিরুদ্ধে খাবার পাহাড়া দেয়া, কোন অপরিচিত ব্যক্তির হুমকি, আর মালিকের সাথে দড়ি টানাটানি খেলা। গবেষকদের দলটি প্রত্যেকটি গ্রাওলেরই দৈর্ঘ, পিচ এবং কম্পাঙ্ক নোট করেন।
এরপর ৪০ জন অংশগ্রহণকারীকে এই গ্রাওলের আবেগকে রেট করতে বলা হয়। তারা ভয়, হতাশা, আক্রমণাত্মক ভাব, ক্রীড়াশীল ভাব এবং সুখ এই পাঁচটি অপশন থেকে উত্তর নির্ধারণ করতে পারবেন। এরপর এদেরকে সেই তিনটি সামাজিক পরিস্থিতির কোন প্রসঙ্গে এই নির্ধারিত ইমোশনটি ব্যবহৃত হয়েছে তা বের করতে বলা হয়।
খেলার সময় যে গ্রাওল ছিল তার বেলায় অংশগ্রহণকারীরা ৮১ শতাংশ সঠিক উত্তর দেয়, কিন্তু খাবার পাহাড়া দেবার বেলায় ও অচেনা ব্যক্তির হুমকির বেলায় আসা গ্রাওলের বেলায় সঠিক উত্তর আসে যথাক্রমে ৬০ ও ৫০ শতাংশ। এখান থেকে বোঝা যায়, মানুষের পক্ষে কুকুরের খাবার পাহাড়া দেয়ার সময়কার গ্রাওল ও অচেনা ব্যক্তির হুমকির গ্রাওলকে আলাদাভাবে বুঝতে পারাটা কঠিন হয়, প্রায়ই তারা একটিকে অপরটির সাথে গুলিয়ে ফেলে।
গবেষণাটির প্রথম লেখক এবং হাংগেরির এওটভাস লরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টামাস ফারাগো ও তার কলিগেরা তাদের পেপারে লেখেন, “কুকুরের গর্জনের ক্ষেত্রে, দুটো গর্জনের মধ্যবর্তী যে সময়টা আছে তার উপর ভিত্তি করে যে ছন্দ তৈরি হয় তাই মানুষকে কুকুরের অন্তরের অবস্থায় প্রবেশ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। দুটো আলাদা গর্জন বা ঘেউশব্দের মধ্যে বিরতি লম্বা হওয়ার অর্থ হচ্ছে আক্রমণাত্মক ভাব কম।”
দলটি এটিও আবিষ্কার করে যে, নারী এবং কুকুরের মালিক কুকুরের গ্রাওল সনাক্তকরণে সবথেকে ভাল। পেপারটির লেখকগণ লেখেন, “এটা আমাদের জানা যে, নারীদের মধ্যে উচ্চ আবেগীয় সংবেদনশীলতা বা ইমোশনাল সেন্সিটিভিটি রয়েছে। হয়তো এই উচ্চ সংবেদনশীলতা তাদেরকে কুকুরের গ্রাওলের প্রেক্ষাপট ভালভাবে সনাক্তকরণে সহায়তা করে।”
গবেষণাটির স্যাম্পল সাইজ ছোট ছিল, এবং অংশগ্রহণকারীদেরকে প্রদত্ত প্যারামিটারের বাইরে কিছু এক্সট্রাপোলেট করতে হয় নি। দলটি কেবল শোনা যায় এমন বিষয় নিয়েই (অডিটরি কিউ) পরীক্ষা করেছেন যেমন কুকুরের গর্জন। কিন্তু দেখা যায় এমন কোন বিষয় (ভিজুয়াল কিউ) নিয়ে পরীক্ষা করেনি নি যা মানুষ ও কুকুরের মধ্যকার যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যাই হোক, গবেষণাটি সীমাবদ হলেও মানুষ ও কুকুরের মধ্যকার বোঝাপড়াটা জানার জন্য এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply