একটি নতুন গবেষণায় পাওয়া গেছে, কোন অঞ্চলে সমলৈঙ্গিক বিবাহ বৈধ করে দিলে সেখানে টিনেজদের আত্মহত্যা হার কমে যায়। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় তরুণদের স্বাস্থ্যে এই নীতির প্রভাব সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হয়, আর দেখা যায় এই এফেক্টটা কেবল যেসব টিনেজ নিজেদেরকে LGBTQ (Lesbian, Gay, Bisexual, Transgender, Queer) হিসবে পরিচয় দেয় কেবল তাদের বেলাতেই নয়, সব টিনেজদের উপরেই পরে।
জেএএমএ পেডিয়াট্রিক্স জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। এই গবেষণায় তদকালীন সমলৈঙ্গিক বিবাহ বৈধ ছিল এমন ৩৫টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩২টি অঙ্গরাজ্যে সমলৈঙ্গিক বিবাহ বৈধ করে দেয়ায় কিভাবে ১৯৯৯ থেকে ২০১৫ সালে ৭৬০,০০০ জনেরও ছাত্রছাত্রীর মধ্যে আত্মহত্যা হার প্রভাবিত হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করা হয়। এই অঙ্গরাজ্যগুলোর সাথে ১৫টি অঙ্গরাজ্যের তুলনা করা হয় যেখানে সমলৈঙ্গিক বিবাহ বৈধ ছিল না। অন্যান্য কনফ্লিক্টিং বিষয়গুলো বিবেচনা করে গবেষকগণ আবিষ্কার করেন, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যা হার ৭ শতাংশ কমে গেছে। আর এলজিবি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই হার ১৪ শতাংশ কমে গেছে।
গবেষণাটির পরিচালক জুলিয়া রাইফম্যান ব্যাখ্যা করেন, “এরা হচ্ছে হাই স্কুলের শিক্ষার্থী, সুতরাং এদের বেশিরভাগই শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছে না। তবুও সমলৈঙ্গিক বিবাবের অনুমোদন এদের মধ্যকার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা যৌন অভিমুখিতা সংক্রান্ত গোড়ামি কমিয়ে দিয়েছে। সমানাধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে হয়তো এমন কিছু বিষয় থাকে – এরকম নীতির থেকে সুবিধা নেবার মত নিকট ভবিষ্যতে তাদের যে কোন পরিকল্পনা আছে তাও না। কিন্তু এরকম নীতি ছাত্রছাত্রীদেরকে কম গোড়ামি দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করায়, এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা এর ফলে বেশি আশাবাদী হতে পারে।”
আত্মহত্যাকে অনেক দিন ধরেই টিনেজারদের জন্য একটু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বলে মনে করা হচ্ছে, এবং বর্তমানে এটি ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। এই সমস্যাটি LGBTQ হিসেবে যারা নিজেদেরকে পরিচয় দেয় তাদের জন্য আরও বেশি প্রকট, যেখানে এদের ২৯ শতাংশই গত বছর আত্মহত্যা চেষ্টা করেছে বলে একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে বিষমকামী টিনেজদের বেলায় এই শতকরা হার ৬ শতাংশ। LGBTQ জনসংখ্যার মধ্যে মানসিক সমস্যার হার বিষমকামী চেয়ে বেশি দেখা গেছে। তবে সেই হার অন্যান্য সংখ্যালঘু দলের মানসিক সমস্যার হারের প্রায় সমান।
মনে করা হয়, LGBTQ লোকদের উপর নেতিবাচক মনোভাব এগুলোর ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে, এর ফলে সংঘাত ও সহিংসতার ক্ষেত্রে একজন LGBTQ টিনেজকে বিষমকামী টিনেজদের থেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকতে হয়। এই সহিংসতায় বুলিং, হয়রানি থেকে শারীরিক নির্যাতন সবই হয়ে থাকে। যেসব LGB টিনেজ “হাইলি রিজেক্টিং” বা উচ্চমাত্রায় সমকামীবিদ্বেষী পরিবার থেকে আসে তাদের আত্মহত্যা প্রচেষ্টার হার তুলনামূলকভাবে এক্সেপ্টিং বা সম্মত হওয়া পরিবারের টিনেজদের আত্মহত্যা প্রচেষ্টা হারের থেকে ৮.৪ গুণ বেশি। এটা এদের দুর্দশার একটি মাত্র উদাহরণ। কিন্তু এটা বলে রাখা গুরুত্বপূর্ণ হবে যে, আত্মহত্যার পরিমাণ খুব কম হলেও বেশিরভাগ LGBTQ টিনেজকেই একটি ভীষণ অন্ধকার সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
যেসব অঙ্গরাজ্যে সমলৈঙ্গিক বিবাহ বৈধ করা হয়েছে সেখানকার টিনেজদের মধ্যে আত্মহত্যা হার যে কমে গেছে তা একেবারেই অনস্বীকার্য। কিন্তু গবেষকগণ এই বিষয়ে পরিষ্কার নন যে এই বৈধকরণের ব্যাপারে রাজনৈতিক প্রচারণার কারণে কেনই বা এই আত্মহত্যা হার কমে গেল? হয়তো এই রাজনৈতিক প্রচারণাগুলোর ফলে টিনেজদের মনে হয়েছে তারা একা নয়, অথবা হয়তো এটা এই নীতিরই একটি প্রত্যক্ষ ফলাফল।
রাইফম্যান বলেন, “আমরা এই বিষয়ে সকলেই একমত যে, আমাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যাই হোক না কেন, কিশোর কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যা হার হ্রাস পাওয়া একটি খুব ভাল বিষয়। নীতিনির্ধারকদেরকে এই বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার যে যৌন সংখ্যালঘুদের নিয়ে তৈরি নীতিগুলো কিশোর কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যে সত্যিকার অর্থেই প্রভাব ফেলতে পারে।”
তথ্যসূত্র:
- http://jamanetwork.com/journals/jamapediatrics/article-abstract/2604258
- https://www.theguardian.com/us-news/2017/feb/20/drop-in-teenage-suicide-attempts-linked-to-legalisation-of-same-sex-marriage
- http://www.jhsph.edu/news/news-releases/2017/same-sex-marriage-legalization-linked-to-reduction-in-suicide-attempts-among-high-school-students.html?utm_source=feedburner&utm_medium=feed&utm_campaign=Feed%3A+JHSPHNews+%28Public+Health+News+Headlines+from+Johns+Hopkins%29
- http://www.thetrevorproject.org/pages/facts-about-suicide
- https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2978194/#bib39
- https://www.cdc.gov/lgbthealth/youth.htm
- http://www.iflscience.com/health-and-medicine/lack-of-support-when-coming-out-is-biggest-risk-for-mental-health-not-sexual-orientation/
- http://www.jhsph.edu/news/news-releases/2017/same-sex-marriage-legalization-linked-to-reduction-in-suicide-attempts-among-high-school-students.html?utm_source=feedburner&utm_medium=feed&utm_campaign=Feed%3A+JHSPHNews+%28Public+Health+News+Headlines+from+Johns+Hopkins%29
Leave a Reply