সমলৈঙ্গিক দম্পতির ক্ষেত্রে সন্তান প্রতিপালনের বিষয়টি আশির দশক থেকেই একটি বিতর্কিত সমস্যা। কিন্তু এবার মেরিজ ইকুয়ালিটি বা বৈবাহিক সমতা নিয়ে সংগ্রাম বিষয়টিকে আবার গণবিতর্কের বিষয়বস্তু করে তুলেছে। কিন্তু, এটা বলতেই হয় যে এখানে বিতর্ক করার মত কিছুই নেই। কোন পিয়ার রিভিউড গবেষণাতেই এই পর্যন্ত কখনও পাওয়া যায় নি যে কোন স্থিতিশীল সম্পর্কের গে প্যারেন্ট থাকাটা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডের গবেষকদের আন্তর্জাতিক দলের একটি গবেষণায়, ১৯০টি স্থিতিশীল পরিবার নিয়ে কাজ করা হয় যেখানে ৯৫টি পরিবারে ভিন্ন লিঙ্গের প্যারেন্টস এবং ৯৫টি পরিবারে সমলিঙ্গের পিতামাতা ছিল, আর প্রত্যেকটি পরিবারেই ৬ থেকে ১৭ বছরের অন্তত একজন সন্তান ছিল। গবেষণায় শিশুদের সাধারণ স্বাস্থ্য, আবেগজনিত জটিলতা, কোপিং বিহ্যাভিয়র বা এঁটে ওঠার আচরণ পরীক্ষা করা হয়। এই গবেষণায় সমলিঙ্গের প্যারেন্ট এবং বিপরীত লিঙ্গের প্যারেন্ট দ্বারা প্রতিপালিত সন্তানের মধ্যে কোন রকম পার্থক্য পাওয়া যায় নি। (কোপিং বলতে বোঝায় ব্যক্তিগত ও নিজের আভ্যন্তরীর মানসিক সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য কোন ব্যক্তির নিজের সচেতন প্রচেষ্টা যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার স্ট্রেস ও কনফ্লিক্টগুলো নিয়ন্ত্রনে আনেন, সহ্য করতে পারেন বা কমিয়ে ফেলতে পারেন।)
এই গবেষণাটি জার্নাল অব ডেভেলপমেন্টাল এন্ড বিহ্যাভিওরাল পেডিয়াট্রিস জার্নালে প্রকাশিত করা হয়, এবং এটা অবশ্যই কোন আশ্চর্যজনক আবিষ্কার ছিল না। এই সাম্প্রতিক গবেষণাটি সহ মোট ৭৪টি পিয়ার রিভিউড এবং প্রকাশিত গবেষণা আছে যেগুলো নির্দেশ করে, সমকামী ও উভকামী পিতামাতার স্থিতিশীল সমলৈঙ্গিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না। এর বিপরীত দাবীগুলোকে হয় ডিবাংক করা হয়েছে নয়তো দাবীগুলোকে কখনও পিয়ার রিভিউড হয় নি।
এই গবেষণাটি ২০১১-২০১২ সালের ন্যাশনাল সারভে অব চিলড্রেন হেলথ এর উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল, এবং পরিবারগুলো ৯৫,৬৭৭ টি বাসা থেকে নির্ধারিত করা হয়েছিল যারা পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকার প্রদান করেছিল। প্রাথমিক বিশ্লেষণে ১৩৯ টি নারী সমলৈঙ্গিক দম্পতি এবং ১৭টি পুরুষ সমলৈঙ্গিক দম্পতি পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীতে এই সংখ্যাকে কমিয়ে ১০৬টি পরিয়ার নেয়া হয় (৯৫টি নারী ও ১১টি পুরুষ দম্পতি)। এর কারণ ছিল গবেষকগণ এমন পরিবার চেয়েছিলেন যেখানে শিশুরা এখনও তাদের শৈশব অবস্থাতেই থাকে, কারণ প্যারেন্টেদের সম্পর্কের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াটা শিশুর বিকাশে প্রভাবিত করতে পারে।
পুরুষ সমলৈঙ্গিক দম্পতির ক্ষেত্রে এত ছোট স্যাম্পল থাকায় গবেষকগণ নারী সমলৈঙ্গিক দম্পতির ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগ দেন এবং সাধারণ জনসংখ্যার থেকে পিতামাতার বয়স, শিক্ষা, যুক্তরাষ্ট্রীয় বার্থ স্ট্যাটাস, পিতামাতার বর্তমান ভৌগলিক অবস্থান এবং সন্তানের বয়স, লিঙ্গ, জাতিসত্ত্বার এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় বার্থ স্ট্যাটাসের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন লিঙ্গের পিতামাতা নিয়ে একটি কনট্রোল স্যাম্পল তৈরি করেন। এরকম স্যাম্পলিং এর ফলে নিশ্চিত করা হয় যাতে গবেষণাটিতে কেবল সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা যৌন অভিমুখিতার পার্থক্যের ফলাফলটাই সামনে আসে।
গবেষণাটিতে যদিও সন্তানের স্বাস্থ্য ও বিকাশে কোনরকম পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় নি, কিন্তু সমলৈঙ্গিক দম্পতির ক্ষেত্রে পিতাদের বা মাতাদের মধ্যে বর্ধিত প্যারেন্টাল স্ট্রেস বা প্রতিপালনজনিত চাপ লক্ষ্য করা গেছে। এক্ষেত্রে পূর্বের গবেষণাগুলোর ভিত্তিতে গবেষকগণ বলেন, সমলৈঙ্গিক পিতামাতার মধ্যে এই হোমোফোবিক সমাজে সন্তানদের পালন করার জন্য, এবং বিষমকামী পিতামাতার তুলনায় তাদের সন্তান প্রতিপালন করার কোয়ালিটিকে জাস্টিফাই করার জন্য তারা সন্তান প্রতিপালন বিষয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন।
ভিন্ন লিঙ্গের পিতামাতার মতই সমলৈঙ্গিক পিতামাতারাও তাদের সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি রাখে না, আর তাদের সন্তানদেরকেও স্বাস্থ্য ও বিকাশ সংক্রান্ত কোন জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়না। কিন্তু এই হোমোফোবিক সমাজে সমলৈঙ্গিক পিতামাতার মধ্যে তাদের সমকামিতার কারণে সন্তান প্রতিপালনের জন্য চাপ সৃষ্টি হয়, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাজের সকলে যদি তাদের হোমোফোবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বর্জন করার চেষ্টা করে তাদের প্রতি সহায়ক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন তাহলে হয়তো সমলৈঙ্গিক পিতামাতারা সন্তান প্রতিপালন নিয়ে যে চাপ অনুভব করেন, তা কমে আসবে।
তথ্যসূত্র:
- http://journals.lww.com/jrnldbp/Fulltext/2016/04000/Same_Sex_and_Different_Sex_Parent_Households_and.1.aspx
- http://www.whatweknow.law.columbia.edu/topics/lgbt-equality/what-does-the-scholarly-research-say-about-the-wellbeing-of-children-with-gay-or-lesbian-parents/
- http://nymag.com/scienceofus/2015/05/biggest-anti-gay-marriage-study-was-debunked.html
- http://pediatrics.aappublications.org/content/pediatrics/126/1/28.full.pdf
Leave a Reply