হাড় গবেষণার মাধ্যমে প্রাচীন চীনের লিঙ্গ বৈষম্যতা প্রকাশ পেয়েছে

এই দুটো বাঁধানো কফিনের মাঝে এই কঙ্কালটি উচ্চ সামাজিক মর্যাদার পরিচয় দেয়। পূর্ণ চৌ রাজবংশের সময়ে পুরুষের ক্ষেত্রে এরকম চর্চা অনেক বেশি দেখা গেছে।

প্রায় ২,৫০০ বছর আগে, চীনা সমাজ নারী-পুরুষের মধ্যে মোটামুটি সমান সমাজ থেকে পুরুষ সুবিধাযুক্ত (male privilege) সমাজে পরিবর্তিত হয়। সে সময়ের মানুষ হয়তো তা হাড়ে হাড়ে টের পায়নি, তবে একটি গবেষণার বলা হয়ছে যে এই লিঙ্গ বৈষম্যতার প্রমান তাদের হাড়ে অবশ্যই পাওয়া যায়।

চীনে কৃষি প্রবর্তনের পর হাজার হাজার বছর ধরে, নারী-পুরুষ মোটামুটি অনুরূপ খাদ্য গ্রহন করে আসছিলো। কিন্তু যখন নিউ ইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক একাটেরিনা পেচেংকিনার নেতৃত্বে একটি দল, পূর্ব চৌ রাজবংশে (Eastern Zhou Dynasty, এটি উত্তর-মধ্য চীনে ২,৭৮৮ থেকে ২,২৩৮ বছর পর্যন্ত রাজত্ব করেছিল) সমাহিত মানুষের হাড় পরীক্ষা করেন তখন এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে নারী-পুরুষ এক রকম খারার খেতো না। বরং পুরুষেরাই ভাল মানের খাবার খেতো।

চাইনিজদের গৃহে অভ্যস্ত হবার কয়েক হাজার বছর পর, মিলেটের (জোয়ার বা ভুট্টা জাতীয় শস্য) দুটো প্রজাতিই চীনের প্রধান শস্য ছিল। খাদ্যভ্যাসে এই খাদ্যের অবদান আইসোটোপের মাধ্যমে সেই সময়ের মানুষের হাড়ে খুঁজে পাওয়া যায়। মিলেট C4 সালোকসংশ্লেষণ পথ অবলম্বন করে, যা আরও সাধারণ C3 পথে জমাকৃত সাধারণ কার্বন-১২ এর চেয়ে কার্বন-১৩ অধিক পরিমানে জমা করে। যারা C4 ফসল ভক্ষন করে তাদের হাড়ে অতিরিক্ত কার্বন-১৩ জমা হয়। তাই খাদ্যতালিকায় C4 উদ্ভিদের অনুপাত মৃত্যুর দীর্ঘ সময় পরও পরিমাপ করা যায়। একইভাবে, খাদ্যতালিকা মাংসভিত্তিক নাকি উদ্ভিদভিত্তিক তা নাইট্রোজেন-১৫ এর উচ্চ ঘনত্ব দেখেই বোঝা যায়। মাংসভিত্তিক খাদ্যতালিকার ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন-১৫ এর পরিমাণ বেশি হয়।

পেচেংকিনার গবেষণাকৃত পূর্ব চৌ রাজবংশের পূর্বের প্রায় সকল হাড়ে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমান অনুপাতে আইসোটোপ পাওয়া গেছে। যদিও আরো সূক্ষ্ম খাদ্যতালিকাগত পার্থক্য থাকতে পারে, এটা মনে হয় যে উভয় লিঙ্গই সমান অনুপাতে মাংস, মিলেট ও অনান্য খাবার খেতো। কিন্তু পূর্ব চৌ সাম্রাজ্যের সময় পরিবর্তন দেখা যায়। উভয় লিঙ্গের মানুষই কম মাংস এবং কম মিলেট গ্রহণ করা শুরু করে। কিন্তু নারীদের জন্য এই পরিবর্তন অনেক বড় ছিল।

পেচেংকিনা খুঁজে পান যে, খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন নারীদের খাটো হওয়া ও অপর্যাপ্ত পুষ্টি দ্বারা সৃষ্ট করোটি সংক্রান্ত ক্ষতের সাথে সংশ্লিষ্ট। এটা নির্দেশ করছে যে, পূর্ব চৌ রাজবংশের শাসনামল নারী হয়ে জন্মানোর জন্য ভালো সময় ছিল না। পূর্বে সমাধির ধরণ দেখলেও নারী ও পুরুষের মধ্যে যথেষ্ট সমানাধিকারের বিষয় ফুটে ওঠে। কিন্তু সেই সময় থেকে সমাধির ধরণ দেখে পুরুষের উচ্চ সামাজিক মর্যাদার ব্যাপারটি বেশি প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। পুরুষের মৃতদেহের জন্য আরও বেশি দীর্ঘ কফিনের ব্যবস্থা করা হয়, সমাধির সাথে আরও বেশি জিনিস দান করা হয়, মৃতদেহের সাথে মূল্যবান বস্তুও দান করা হয় পুরুষের ক্ষেত্রে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং গবেষণাটির কো-অথর চেলসি মর্গান বলেন, খাদ্যতালিকার মধ্যে পরিবর্তন ও লিঙ্গ অসমতা বৃদ্ধির কারণ অস্পষ্ট ছিল। নিওলিথিক বা নব্য প্রস্তরযুগের হাড় ও কবরের স্থানগুলোতে নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্যই ছিল। যুদ্ধবিগ্রহ বৃদ্ধির সাথে সাথে এই অবস্তার পরিবর্তন ঘটে। তবে এর কারণ ও প্রভাব এখনও অস্পষ্ট। পেচেংকিনা বলেন, এই গবেষণার ফলাফলটি ফ্রেডরিক এঙ্গেলের তত্ত্বের সাথে মিলে যায়, যেখানে তিনি বলেছিলেন পশুপালন বা পশুর ডোমেস্টিকেশন শুরু হওয়া পর্যন্ত নারীদের মর্যাদা সমান ছিল।

কিন রাজবংশ (Qin dynasty) কর্তৃক নিকটবর্তী স্বাধীন রাজ্যসমূহ দখল করে ইম্পেরিয়াল চীন বা চীন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করার আগে পূর্ব চৌ রাজবংশ ছিল সর্বশেষ যুগ। তখন কনফুসিয়াসের শিক্ষাসহ বিভিন্ন দর্শনের উন্নতি লক্ষ করা যায়, যা সাম্রাজ্যবাদী যুগে চীনা সরকার এবং সামাজিক সম্পর্কের কাঠামো দান করে। চেলসি মর্গান বলেন, পরবর্তীতে কনফুসিয়াসের শিক্ষার অনেক প্রভাব দেখা যায়, কিন্তু সেই সময়ে যখন নারীদের মর্যাদা কমতে শুরু করে তখন কনফুসিয়াসের শিক্ষার প্রভাব কিরকম ছিল তাই অস্পষ্ট, নারীদের মর্যাদা কমে যাওয়ার পেছনে কনফুসিয়াসের শিক্ষার অবদান কতটা ছিল তা বের করা তো দূরের কথা। এই বিষয়ে জানার জন্য আরও অনেক গবেষণা ও অনুসন্ধানের প্রয়োজন।

এই বস্তুগুলো পূর্ব চৌ রাজবংশ শাসিত অঞ্চলের সমাধিস্থলে পাওয়া গেছে। পুরুষের সমাধিগুলোতেই এগুলোর পরিমাণ বেশি ছিল।

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.gc.cuny.edu/Page-Elements/Academics-Research-Centers-Initiatives/Doctoral-Programs/Anthropology/Faculty-Listing/Ekaterina-Pechenkina
  2. http://www.iflscience.com/plants-and-animals/giant-reeds-astonishing-growth-explored/
  3. http://www.pnas.org/cgi/doi/10.1073/pnas.1611742114

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.