খুব দ্রুতই রোবট ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অনুভূতি, আশা ও অধিকার সচেতনতা চলে আসতে পারে… আমরা এজন্য প্রস্তুত তো?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (সংক্ষেপে এআই)- এই শব্দটি শুনতে আমরা কম বেশী সবাই অভ্যস্ত। এমনকি আপনি যদি ইউটোপিয়ান এবং ডিস্টোপিয়ান অতিশয়োক্তি বাদও দেন, তবুও এটা অস্বীকার করতে পারবেন না যে, একুশ শতকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, কম্পিউটার এবং নিউরোসাইন্স সম্পর্কিত জ্ঞান যে শুধু প্রচণ্ড গতিতে অগ্রসরই হচ্ছে তা নয় বরং এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম আমরা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সব কিছুই যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক হয়ে যায় তাহলে কি ২২ শতক পর্যন্ত মানব প্রজাতির পথচলা টিকে থাকবে? প্রশ্নটা উঠছে কারণ সবকিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক হওয়ার ভবিষ্যৎবাণী করা হচ্ছে এবং সেটা এখন তীব্র বির্তকিত বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এই ব্যাপারে এখন উত্তরের তুলনায় প্রশ্নই বেশী।

যাইহোক,বর্হিশত্রু আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। এই বছরের জানুয়ারিতে পার্লামেন্টের লিগাল এফেয়ার কমিটিতে একটি ভোট হয়েছিল। ১৭-২ ভোটে পার্লামেন্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক্স এর উন্নয়ন এবং ব্যবহার বিষয়ক নীতিমালার খসরা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই খসড়া প্রস্তাবটির সাথে একটি প্রাথমিক নির্দেশনা থাকছে যা ‘ইলেক্ট্রনিক্স পার্সনহুড’ নামে পরিচিত। এটি সর্বোচ্চ উন্নতমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকার ও দায়িত্ব কি হবে তা নিশ্চিত করবে, কিন্তু এর বেশি কিছুই করবে না।

যদি আপনি ‘ইলেক্ট্রনিক্স’ বা ‘রোবট’ এর পার্সনহুড বা ব্যক্তিবাচকতা বিষয়ক বির্তকে হেরে যান তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন এই বিষয়টি কতটা অস্পষ্ট এবং এটি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। আর যদি আপনি এই ব্যাপারে বির্তকে হেরে না যান তাহলে এটাই সবচেয়ে ভালো সময় এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার জন্য।

রোবট পারসনহুড বা রোবটের ব্যতিবাচকতার ধারণাটি করপোরেট পারসনহুড এর ধারণার মতই যেখানে একটি কোম্পানি নিজেই আইনগত মামলায় অভিযোগকারী বা অভিযুক্ত হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারে। দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারে এরকম সাম্ভাব্য বিষয়গুলো রির্পোটটিতে সনাক্ত করা হয়, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক্সের জন্য একটি ইউরোপিয়ান এজেন্সির প্রতিষ্ঠা, “স্মার্ট অটোনমাস রোবট” বা “বুদ্ধিমান স্বয়ংক্রীয় রোবট” এর একটি আইনগত সংজ্ঞা, সবচাইতে অগ্রসর রোবটগুলোর জন্য একটি রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম বা নিবন্ধকারী ব্যবস্থা, এবং রোবট দ্বারা ঘটা ক্ষয়ক্ষতিকে পুষিয়ে দেবার জন্য কোম্পানির একটি বাধ্যতামূলক ইনস্যুরেন্স স্কিম বা বীমা পরিকল্পনা।

রির্পোটটিতে আরও বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবট উভয়ই বিশাল পরিমাণে চাকুরি হারানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে রিপোর্টটিতে সমগ্র ইকোনমিক সেক্টরে বা অর্থনৈতিক খাতে পূর্ণাঙ্গমাত্রায় অটোমেশন চলে আসলে এর অর্থনৈতিক প্রভাবকে কমানোর জন্য বৈশ্বিক মৌলিক আয়ের সম্ভাব্যতার মূল্যায়ন করতে আহ্বান করা হয়।

 

উই, রোবটস

এই চ্যালেঞ্জগুলো অনেক কঠিন। এদিকে আমাদের জিওপলিটিকাল সমস্যা নিয়ে ভাবলে বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ এবং আদালত এপর্যন্ত কেবলই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবট আমাদের মধ্যে কি কি সুবিধা দান করবে আর কি কি সমস্যার সৃষ্টি করবে এই বিষয়ে চোখ বুলিয়ে গেছে। হ্যাঁ, চালকহীন গাড়িতে সমস্যা রয়েছে, কিন্তু সেটা কেবল এমন দুনিয়াতেই যেখানে চিরাচরিত সাধারণ গাড়িও থাকে। এই সাধারণ গাড়িগুলোকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিন, আর শহর, প্রদেশ, রাষ্ট্রকে এইরকম চালকবিহীন গাড়িতে ভরিয়ে দিন, দেখবেন এতে সত্যি সত্যি আমাদের সিগনালিং নেটওয়ার্ককে অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।

আমি এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত জিনিসের সাম্ভাব্যতাকে সমালোচনা করতে পারি না, এমনকি হোল ব্রেইন এম্যুলেশনের মত এত সম্ভাবনাময় বিষয়েরও সমালচনা করতে পারি না, যেখানে এই হোল ব্রেইন এমুলেশন হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কের একটি সফটঅয়ার ভিত্তিক কপি যা সম্পূর্ণভাবে বায়োলজিকাল ব্রেইনের মতই কাজ ও আচরণ করে। তাহলে তাদের প্রযুক্তিগত সাম্ভাব্যতা চিন্তা করুন, আর একটা জগতের চিন্তা করুন যেখানে একইসাথে সংবেদনশীল আজ্ঞাবাহী রোবট এবং সম্পূর্ণ আমাদের মস্তিষ্কের মতই ডিজিটাল কপি ধারণ করা আমাদেরই রোবটিক সংস্করণ বাস করে যারা কাজ করে আর আমাদের সাথে মজা করে।

কিন্তু বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, রোবটিক ফর্মে থাকা বিচ্ছিন্ন করা যায়, বহন করা যায়, এডিট করা যায় এরকম মানুষের কপিগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যেমন, কনট্রাক্ট আইনের মৌলিক নীতিগুলোকে অবশ্যই আপডেট করতে হবে, যদি কন্ট্রাক্টের সাথে যে দুটো পার্টি জড়িত তাদের একজন বায়লোজিকাল মানুষের একটি ডিজিটাল কপি হয়।

একটা উদাহরণ দেয়া যাক, জেন স্মিথ নামে একজনের কনট্রাক্ট কী বায়োলজিকাল জেন আর তার কপি উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে? কিসের ভিত্তিতে এটা হবে, বা হবে না? বিয়ে, পিতামাতার দাবী, অর্থনৈতিক ও সম্পত্তির অধিকার সহ আরও অনেক কিছুর জন্যই একই প্রশ্ন উঠবে। যদি একটি রোবট কপি আসলেই কোন ব্যক্তির বায়োলজিকাল কনশাসনেস বা জীববিজ্ঞানগত সচেতনতার একটি শারীরিক সংস্করণহয় তাহলে এরও ঠিক একইরকম অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, আশা, স্বপ্ন, ক্ষতির সম্ভাবনা ও ভয় থাকবে, ঠিক যেমনটা এদের আসল বায়োলজিকাল উৎস্যের মধ্যে থাকে। তাহলে আমরা এই উপস্থিত মানবাধিকারের জগতে থেকে কিভাবে তাদের কপির অধিকারকে অস্বীকার করতে পারি? এই কথাগুলোকে এখন অর্থহীন বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু এটাকে এখন যতই অর্থহীন বলে মনে হোক না কেন, খুব শীঘ্রই এটাই বাস্তব হতে চলেছে, আর এর অর্থ হচ্ছে আমরা এটা নিয়ে হাসাহাসি বা উপেক্ষা করতে পারি না।

আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে এই কপি রোবটগুলোর মৌলিক অধিকারগুলো কি কি হতে পারে? উদাহরণস্বরূপ, যখন মানুষের কৃত্রিম্ম দেহ বা মেশিনের কপিগুলো তৈরি করা এতটাই সস্তা হয়ে যাবে, একজন ভোটারের কয়েকটা একইরকম কপি তৈরি করে চুড়ান্ত মাত্রার ব্যালট বক্স স্টাফিং বা জাল ভোট একটি বাস্তব সম্ভাবনায় পরিণত হবে, তখন গণতান্ত্রিক ভোটগুলো কিভাবে বণ্টিত হওয়া উচিৎ?

প্রত্যেকটা কপিরই কি নিজস্ব ভোটাধিকার থাকবে? যদি রোবটটি তার “মালিকের” সম্পত্তি হয়, তাহলে কি তার ভোট দেবার নৈতিক দাবী থাকবে? রোবটটির বায়োলজিকাল অরিজিনালের মৃত্যুর পরও কি তার কপি রোবটগুলোতে এর অধিকারগুলো থাকবে? কী হবে যদি রোবটের কপি করা খুব সস্তা ও কার্যকরী হয়ে যায় যাতে কোন রাজনৈতিক প্রার্থী তার অর্থের জোড়ে এরকম প্রচুর রোবট ভোটার নিজের জন্য তৈরি করে ফেলেন, কারণ প্রত্যেকের কাছেই গণতান্ত্রিক ভোট দেবার নৈতিক দাবী থাকবে। ভেবে দেখুন, যদি কোন এক ভোটারের কাছে এক মিলিয়ন রোবটিক কপি থাকে তখন কী হবে। কী হবে যদি এদের বয়সও না বাড়ে, কোন ধরণের ক্ষতিও না হয়, আবার মৃত্যুও না হয়?

 

গভীর চিন্তা

এই বিষয়গুলো খুবই অবাক করার মত, আর এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিঃসন্দেহে একটি বিশাল সামাজিক, আইনগত, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও দার্শনিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। আর যেহেতু খুব দ্রুতই আমাদের মধ্যে একটি জীবন্ত সমস্যা হিসেবে আসতে যাচ্ছে, তাই শুধুমাত্র ড্রাইভারলেস কার আর চাকরিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রভাব ছাড়াও আমাদেরকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং রোবটিক্স নিয়ে আরও গভীর চিন্তা করা উচিৎ। যদি আপনি লিবারাল হিউম্যান রাইট এর মূল্য বুঝে থাকেন, আপনি অবশ্যই এই উপসংহারে পৌঁছবেন যে, হ্যাঁ, মানবাধিকারের দার্শনিক ও ধারণাগত ভিত্তি অনুযায়ী পরিশীলিত বা সফিস্টিকেটেড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সদেরকে মানবাধিকার দেয়া উচিৎ।

তাহলে এই উপসংহারটি মেনে নেয়া এত কঠিন কেন? এখানে অস্বস্তি বা হুমকির কীই বা আছে? এতদিন পর্যন্ত মানুষ বায়োলজিকাল ইন্টেলিজেন্স হওয়ার একমাত্র গৌরব অর্জন করে এসেছে, আর আমরা নিজেদেরকে অন্যান্য সকল বুদ্ধিবত্তাকে বিচার করার একটি আদর্শ হিসেবে দাঁড় করিয়েছি। আর এজন্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং অধিকার বিষয়ে সচেতন এমন ভাবতে আমাদের অস্বস্তিকর লাগে।আর এতে হয়তো মানব প্রজাতি হিসেবে নিজেদের স্পেশালিটিও একদিন হারিয়ে যাবার সম্ভবনা থাকবে।

প্রকৃতপক্ষে, আমাদের ভেতরে গভীরভাবে প্রোথিত ধর্মীয় ও দার্শনিক রীতিগুলো আমাদের মধ্যে এই ধারণাটিকে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, আমরাই পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ, উন্নত, সুন্দর এবং অনন্য প্রাণী এবং আমাদের কাছে এমন সব ক্ষমতা রয়েছে যার দ্বারা অন্যান্য সব প্রজাতিকেই আমরা ছাড়িয়ে যেতে পারি। এখান থেকেই হয়তো অস্বস্তি তৈরি হয়, কারণ এই ইন্টেলিজেন্সগুলো যাই হোক, বায়োলজিকাল মানুষ তো নয়।

অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, রোবটের পার্সনহুড বা ব্যক্তিবাচক ধারণাটি ভোটের উদাহরণের সাথে সম্পর্কিত যা আমাদের অস্বচ্ছন্দ বোধ করায় কারণ এটা আমাদের সবচেয়ে অলঙ্ঘনীয় মূল্যবোধের স্থিতিস্থাপকতা ও প্রয়োগযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক্সের প্রতিটি নতুন নতুন অগ্রসরের সাথে সাথে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে যে আমাদের আইন, লিগ্যাল কনসেপ্ট এবং আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সামাজিক এমনকি অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলো আর এখন যেরকম আছে তেমনটা থাকবে না। ফিউচারোলজি নিয়ে কোন বিজ্ঞান নেই, কিন্তু আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে পারি, ও বর্তমান নিয়ে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে হয়তো বুঝতে পারি যে ভবিষ্যতে আমরা কী পরিণতিতে পৌঁছতে যাচ্ছি, আর তার উপর ভিত্তি করে আশু প্রযুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্তও নিতে পারি। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্ত তাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যখন এসব নিয়ে ভাববেন, তখন অনুধাবন করবেন, আমরা এমনই একটা সমাজ যা টেকনোলজি নিয়ে কখনই কোন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত কখনও নিতে পারিনি। আমাদের সবাইকেই কম বেশি এটা মেনে নিতে হয়েছে যে, আমাদের জগতে কিছু নির্দিষ্ট জিনিস প্রবেশ করে, আমাদের এর সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে হয়, সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাবার জন্য উপযুক্ত হতে হয়, অথবা পিছিয়ে পড়তে হয়, আর অবশ্যই এর ক্ষতিকর দিকগুলোর সাথে বোঝাপড়াও আমাদের করতে হয়। দেখা যাক সামনে আসা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাথে কিভাবে মানিয়ে নেই। আশা করি, অন্তত এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের সমাজের, বা আমাদের গ্রহের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হবে না।

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://futureoflife.org/background/benefits-risks-of-artificial-intelligence/
  2. https://aistanford.edu/sites/default/files/ai100report10032016fnl_singles.pdf
  3. http://www.europarl.europa.eu/sides/getDoc.do?pubRef=-//EP//NONSGML%2BCOMPARL%2BPE-443%2B01%2BDOC%2BPDF%2BV0//EN
  4. https://www.theguardian.com/technology/2017/jan/16/giving-rights-to-robots-is-a-dangerous-idea
  5. https://www.theatlantic.com/politics/archive/2015/02/if-corporations-are-people-they-should-act-like-it/385034/
  6. https://www.theguardian.com/society/2017/feb/19/basic-income-finland-low-wages-fewer-jobs
  7. http://www.oxfordmartin.ox.ac.uk/downloads/reports/Citi_GPS_Technology_Work_pdf
  8. http://shanghailectures.org/sites/default/files/uploads/2013_Sandberg_Brain-Simulation_pdf
  9. https://theconversation.com/robots-and-ai-could-soon-have-feelings-hopes-and-rights-we-must-prepare-for-the-reckoning-73462

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.