আদীম মানুষ কি সাহারা মরুভূমি তৈরিতে সহায়তা করেছিল?

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি সাহারার দিকে তাকালে মনে হবে তা অনন্তকাল ধরে প্রকৃতির বিরূপ আচরণের সাক্ষী। কিন্তু আনুমানিক প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে এই বিরানভূমি আশ্চর্যজনকভাবে ছিল গাছপালা ও জলাশয়ে পূর্ণ।

নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে সাহারা মরুভূমির এই বিরূপ আবহাওয়া ও প্রকৃতির কারণ হয়তো আমরা মানুষই। আমরাই হয়তো এই বিরাট সবুজ, জলাশয়ে পূর্ণ অঞ্চলকে পরিণত করেছি বালুময় মরূভূমিতে।

উত্তর কোরিয়ার সিওল ইউনিভার্সিটির কিছু গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদের এক অনুসন্ধানে নতুন এই তথ্য উঠে এসেছে। তারা এই মরুকরণের কারণ হিসেবে সমসাময়িক মানুষের জীবনযাত্রা ও প্রাকৃতিক সম্পদের অযাচিত ব্যাবহারের কথা বলেছেন। তাদের গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে ফ্রন্টিয়ার্স ইন আর্থ সায়েন্স নামক একটি জার্নালে।

এর শুরু হয়েছিলো আফ্রিকান নব্যপ্রস্তরযুগীয় মানুষদের নীল নদের তীরে কৃষিকাজের পরীক্ষা, মেষ ও গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহারের কারনে প্রায় ৮০০০ বছর পূর্বে,যা মন্থরগতিতে প্রাকৃতিক ভারসম্য নষ্ট করেছিল।

নদীর তীরে ধীরে ধীরে তাদের বিস্তার,পশুসম্পদ বৃদ্ধি,বাসস্থান ও তাদের খাদ্যের জন্য সেখানকার উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীলতা উদ্ভিদ এর পরিমান অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছিল। কৃষি সংক্রান্ত নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যবহার উদ্ভিদের পরিমান কমানোর সাথে সাথে মাটিতে চর্বিত ঘাস সূর্যের আলো মাটিতে পৌছাতে বাঁধা সৃষ্টি করেছিলো যার ফলে সূর্যের আলো ও তাপ মাটিতে শোষিত না হয়ে প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্টের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে পরিবেশের অবস্থা পরিবর্তন করে এবং মৌসুমী জলবাযুহীনতার স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে বৃষ্টিহীনতা, বৃক্ষহীনতা ও মরুকরণের প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল।

এই ভয়ানক চক্র ধীরে ধীরে আমেরিকার মতো বিশাল অঞ্চল কে পরিণত করে  উত্তপ্ত সাহারা মরুভূমিতে।

নতুন এই গবেষণা পূর্বের ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়, পূর্বে ধারনা করা হতো পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তন,আন্ত-মহাদেশীয় বিভাজন ও টাইটোনিক প্লেট সমূহের অবস্থানের পরিবর্তনের কারনে সাহারা মরূভূমির উৎপত্তি।

নব্যপ্রস্তরযুগীয় মানুষদের এই কাজ ইউরোপ,আমেরিকা ও পূর্ব এশীয় অঞ্চল এ বাস্তুসংস্থান এ পরিবর্তনের জন্যও দায়ী।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাদারগাস্কার এর উৎপত্তির কথা যা ১০০০ বছর পূর্বে মানুষের কৃত্রিম বনায়নের ফসল।

ঠিক এর বিপরীতরূপ দেখা যায় সাহারা মরুভূমির দিকে তাকালে। কৃত্রিম মরুকরণ এর ফলাফলের সাক্ষী হয়তো এই বিশাল মরুভূমি।

এই ধারনাটি প্রমানের জন্য আরও অনেক কাজ যদিও এখনো বাকি।  যাইহোক, গবেষকদল তাদের গবেষণার সত্যতা নিরুপণের জন্য সাহারার উত্তপ্ত বালুর নিচে কি আছে তা পরিপূর্ণভাবে জানার চেষ্টা করে চলছেন।

” সেই সময়ে সাহারা ছিলো ছোট ছোট জলাশয়ে পূর্ণ। সে সময়ের পরিবর্তনের চিহ্ন সাহারা জুড়ে থাকবে।” প্রজেক্ট এর নেতৃত্বে থাকা ড. ডেভিড রাইট তার এক বক্তব্যে আরও বলেন,”আমাদের মরূভূমিটিতে খনন করতে হবে উদ্ভিদের ও জলাশয়ের চিহ্ন, সে সময়কার মানুষের জীবনযাত্রা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খোঁজার জন্য। সম্যক ধারণা পেতে বাস্তুসংস্থানের  যে  মডেল তৈরি করা লাগবে তা অনেক সময়সাপেক্ষ। এটা আমাদের, প্রত্নতত্ত্ববিদদের দায়িত্ব সেখানে গিয়ে তথ্যগুলো খুঁজে বের করা ও জটিল মডেলটি তৈরি করা।”

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://journal.frontiersin.org/article/10.3389/feart.2017.00004/full
  2. http://www.iflscience.com/environment/humans-burnt-down-forests-farming-1000-years-ago-study-finds/
  3. https://phys.org/news/2017-03-humans-sahara.html

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.