ছোট প্রাণীরা স্লো-মোশনের জগতে বাস করে

এক কুকুরবর্ষ (“dog year”) সাত মানববর্ষের (human year) সমান হয় এরকম একটা মিথ এই পৃথিবীর কোথাও কোথাও প্রচলিত। কুকুরের গড় আয়ু মানুষের গড় আয়ুর মোটামুটি সাত ভাগের এক ভাগ বলেই এরকম মিথ তৈরি হয়েছে বলে জানি। কিন্তু এক বছরকে কি আসলেই একটি কুকুর সাত বছর বলে মনে করে? প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বলছে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি ভিন্ন ভিন্ন স্কেলে সময় অতিবাহিত করে। এনিমেল বিহ্যাভিয়র  জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে প্রাণীর শরীরের ভর এবং তার মেটাবলিক রেট বা শ্বসনিক হার (শ্বসন বা মেটাবলিজম বলতে গৃহিত খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া বোঝানো হয়) নির্ধারণ করে দেয় যে কিভাবে প্রাণীটি অতিবাহিত সময়ের অনুধাবন করবে।

প্রাণীর ক্ষেত্রে সময়ের অনুধাবন নির্ভর করে কত দ্রুত তার নারভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্রে সেন্সরি ইনফরমেশন (সংবেদী তথ্য) গুলো প্রক্রিয়াধীন হবে তার উপর। এই ক্ষমতাটিকে পরীক্ষা করার জন্য গবেষকগণ বিভিন্ন প্রাণীকে দ্রুতগতিতে ফ্লাশিং লাইট দেখায়। যদি লাইট যথেষ্ট পরিমাণে দ্রুতগতিতে ফ্ল্যাশ করা হয়, তাহলে প্রাণীরা (ও মানুষ) একে অবিচ্ছিন্ন, অখণ্ডিত ও আনব্লিংকিং আলো হিসেবে দেখতে পারে। প্রাণীগুলোর আচরণ ও এর মস্তিষ্কের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ইলেক্ট্রোড দিয়ে পরিমাপ করা হয়, আর এর মাধ্যমে এগুলোর প্রতিটি প্রাণীর কাছে ফ্ল্যাশিং করা আলোর জন্য সর্বোচ্চ কম্পাঙ্ক কত হচ্ছে তা নির্ণয় করা হয়। কোন প্রাণী  আলোর ব্লিংক করা বা কাঁপার বিষয়টা যত উচ্চ কম্পাঙ্কে সনাক্ত করতে সক্ষম হবে তার কাছে সময় তত নিখুঁত রেজোল্যুশনে অনুধাবিত হবে। অন্যভাবে বললে কোন নড়াচড়া বা ঘটনা তার কাছে তত বেশি ধীর বলে মনে হবে। বিষয়টা ভালভাবে বোঝার জন্য একশন মুভিগুলোতে স্লো মোশনের বুলেট এড়িয়ে যাবার দৃশ্যগুলোকে কল্পনা করতে পারেন।

এই গবেষকগণ নতুন গবেষণাটির জন্য পূর্বের গবেষণাগুলো থেকেও ডেটা সংগ্রহ করেছেন যেখানে গিরগিটি, পাখি, মাছ এবং স্তন্যপায়ী নিয়ে ৩৪টি মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভিজুয়াল ইনফরমেশন সংগ্রহ করা হয়েছিল। গবেষকগণ প্রকল্প দান করেছিলেন, উচ্চ হারে আগত দৃশ্যগুলোর সনাক্ত করার ক্ষমতা প্রাণীদের জন্য অনেক উপকারী হয় আর সেগুলো একশন মুভির বুলেট ডজিং এর ব্যাপারের মতই। এই প্রাণীগুলো আরও হালকা এবং এদের মেটাবলিজম বা শ্বসনও দ্রুত হয়। এই উপাত্তগুলো থেকে এই প্রকল্পটি বের হয়ে আসে যে, যেসব প্রাণীর অনুধাবিত সময় সূক্ষ্মতর রেজোল্যুশনে হয়ে থাকে তারা ছোট এবং দ্রুততর শ্বসনিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবার প্রবণতা দেখায়।

এই আবিষ্কারটি দেখাচ্ছে, একটি ইঁদুর ও একটি হাতির অনুধাবিত সময়ের পার্থক্য আরবিটারি বা যাদৃচ্ছিক নয়, বরং এটা তাদের আশপাশের পরিবেশ সহ বিভিন্ন বিষয়ের মিথস্ক্রিয়ার কারণে হওয়া তাদের মধ্যকার বিবর্তনগত বৈশিষ্ট্যেরই ফল। সময় অনুধাবন, শারীরিক গঠন এবং শারীরবিদ্যার মধ্যকার একটি সম্পর্ক এটাই বলছে যে, শক্তির সংরক্ষণশীলতা ভিত্তিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ জনিত চাপকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এর তারতম্যের উপর ভিত্তি করে প্রাণীদের মধ্যে সেই অনুযায়ী নারভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্র বিবর্তিত হয়। একটি বাজ পাখির জন্য দ্রুতগতিতে অনুধাবন গুরুত্বপূর্ণ হলেও একটি তিমির জন্য এটা তার মূল্যবান শক্তির অপচয় ছাড়া আর কিছুই না।

যাই হোক, কুকুরের কাছে বছরটা সত্যি দীর্ঘতর বলে মনে হয়, তবে সেটা সাতগুণ দীর্ঘ নয়। কুকুরেরা মানুষের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ দ্রুতগতিতে ভিজুয়াল ইনফরমেশন গ্রহণ করতে পারে। তাই তাদের কাছে বছরটা এতটা দীর্ঘ না হলেও সামান্য পরিমাণে দীর্ঘ তো বটেই।

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.scientificamerican.com/article/small-animals-live-in-a-slow-motion-world/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.