কালের কণ্ঠ দেখলাম আজকে একটা সংবাদ প্রতিবেদন ছেপেছে “আসছে এলিয়েন!” নামে। এখানে যা লেখা হয়েছে পুরোটাই দিচ্ছি:
“মানুষের মতো উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী কি আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোনো গ্রহে? এ প্রশ্নের উত্তর প্রমাণসহ পাওয়ার জন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। এবার সেই প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর দিতে নাসা তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিশ্বের অন্যতম হ্যাকার গ্রুপ ‘অ্যানোনিমাস’। তারা বলছে, সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে ভিনগ্রহীদের অস্তিত্বের খবর দিতে গোপনে প্রস্তুত হচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
বিশ্বের একাধিক জঙ্গি সংগঠনের তথ্য ফাঁস করে আলোচিত এই অ্যানোনিমাস। তারা আইএসের বিরুদ্ধে রীতিমতো জিহাদ ঘোষণা করেছে। এবার তারাই তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে যে ‘নাসা বলছে এলিয়েনরা আসছে!’ একটি ভিডিওতেও এমনটা দাবি করেছে তারা। ভাঙা ভাঙা যান্ত্রিক গলায় অ্যানোনিমাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিগগিরই ভিনগ্রহীদের নিয়ে বড়সড় ঘোষণা করতে চলেছে নাসা। গোপনে চলছে তার প্রস্তুতি।
অ্যানোনিমাসের দাবি, নাসার বিজ্ঞানী থমাস জুরবিউকেন বলেছেন, ‘নাসার সাম্প্রতিক কিছু আবিষ্কারই বলে দিচ্ছে যে আমরা এলিয়েন লাইফের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। ’ তিনি আরো বলেছেন, ‘২৫ বছর আগেও আমরা জানতাম না যে সৌরজগতের বাইরেও আছে গ্রহ। আর আজ আমরা সূর্যের কক্ষপথের বাইরে প্রায় তিন হাজার ৪০০ গ্রহ আবিষ্কার করে ফেলেছি। আরো আবিষ্কার করে চলেছি। ’ সূত্র : গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট।”
সংবাদটা ঠিকই আছে, সমস্যা যেটা সেটা হচ্ছে সংবাদটা পুরনো। দুইদিন আগেই নাসা ব্যাপারটি ভুয়া বলে জানিয়ে দিয়েছে, কিন্তু কালের কণ্ঠ এই সংবাদটি প্রচার করার আগে একবারও চেক করে দেখল না নাসা এটা নিয়ে কি বিবৃতি দিল? আমি দেখব কালের কণ্ঠের পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে এ বিষয়ে কিছু আসে কিনা। কমেন্টে কালের কণ্ঠের সংবাদ প্রতিবেদনটির লিংক দিয়ে দেয়া হবে।
আসল কথায় আসি। যে কেউ হয়তো খুব দ্রুত বুঝে যাবেন যে এই গল্পে কোন সত্যতা নেই। আর একটা কথা, যে এনোনিমাস গ্রুপ থেকে এটা ছড়ানো হয়েছে সেটা খুব সম্ভবত “অফিশিয়াল” এনোনিমাস গ্রুপ নয়। যাই হোক, নাসা মুখ খুলেছে এবং এটা ডিবাংক করে একে ভুল বলে বিবৃতিও দিয়েছে।
নাসাস সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেট এর এসোসিয়েট এডমিনিস্ট্রেটর থমাস জুরবিউকেন বলেন, “কিছু রিপোর্টে যাই বলা হোক, এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল লাইফ বা পৃথিবী বহির্ভূত জীবন সম্পর্কে নাসার কোন রকম পেন্ডিং থাকা ঘোষণা নেই।”
তিনি একটি টুইটে লেখেন, “আমরা কি মহাবিশ্বে একা? যেহেতু আমরা এখনও তা জানিনা, তাই আমাদের অনেক মিশন আছে যেগুলো আমাদের এই মৌলিক প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবে”।
অবশ্যই আপনি যদি এলিয়েন কনস্পিরেসি থিওরিগুলোতে বিশ্বাস করে থাকেন, তিনি অবশ্যই জুরবিউকেনের বিবৃতিতে বিশ্বাস করবেন না। তবে আমার কথাটা মেনে নিলে ভালই হবে যে, কোন ব্যক্তি নিজেকে এনোনিমাসের একটি অংশ হিসেবে দাবী করে এরকম অদ্ভূত গুজব ছড়িয়েছে।
জুরবিউকেন সঠিক, কিন্তু আমরা এই মহাবিশ্বে একা কিনা তা এখনও একটি মুক্ত প্রশ্ন। কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে এই প্রশ্নের উত্তরের কাছাকাছি যাচ্ছি। আমাদের সৌরজগতেই আমরা কিছু নতুন জায়গা খুঁজে পেয়েছি, যেমন ইউরোপা ও এনসেলাডাস এর উপরিস্তরের নিচে থাকা মহাসাগর যা মাইক্রোবিয়াল লাইফ এর জন্য ভাল জায়গা হতেও পারে।
সৌরজগতের বাইরে আমরা অনেক অনেক গ্রহ খুঁজে বের করছি যা বাসযোগ্য হতে পারে। সামনের বছরগুলোতে আমরা এইসব গ্রহগুলোর আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করতে সক্ষম হব, হয়তো এর মাধ্যমে আমরা কোন বায়োসিগনেচার বা জীবনের কোন চিহ্নের সন্ধান পাব।
এছাড়াও ইন্টেলিজেন্ট এলিয়েন লাইফ নিয়েও বেশ কিছু গবেষণা চলছে। কয়েক দশক ধরে সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইনটেলিজেন্স (সেটি বা SETI) সিগনাল খুঁজে চলেছে। সেটির মত “ব্রেকথ্রু লিসেন প্রোজেক্ট” ও একই কাজ করে চলেছে যা রাশিয়ান বিলিয়নিয়ার ইউরি মিলনারের অর্থায়নে চলছে।
সত্য হচ্ছে, যদিও আমরা এখনও কিছু খুঁজে পাই নি, ইন্টেলিজেন্ট লাইফ খোঁজার জন্য নাসার অর্থায়নে চলা কোন প্রোজেক্ট আদৌ নেই। তাই যদি কোন ইনটেলিজেন্ট লাইফ কর্তৃক পাঠানো সিগনালের খবর পাওয়াও যায়, তার অবশ্যই নাসা থেকে আসবে না, বরং আসবে ওই দুটো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকেই (সেটি এবং ব্রেকথ্রু লিসেন প্রোজেক্ট)।
আমরা যে জীবনের কোন সন্ধান পাই নি, তা একটা হেঁয়ালিই বটে যা ফারমি প্যারাডক্স নামে পরিচিত। মহাবিশ্বে গ্রহের কোন অভাব নেই, তাহলে এখনও আমরা কোন জীবনের সন্ধান পেলাম না কেন? এর উত্তর হচ্ছে হয় আমরা একা, নাহয় আমরা এখনও সেভাবে খুঁজেই দেখিনি।
কোন ইন্টেলিজেন্ট এলিয়েনই নিজেদেরকে আনডিটেক্টেড করে রাখবে না। যদি কোন এলিয়েন শিপ আমাদের পৃথিবীতে এসে পৌঁছয়ও তাহলে আমরা নিশ্চই তা জানতে পারব। কিন্তু আপাতত, আমরা একা। যদিও একা থাকাটা একটু ভীতিকর বলে মনে হয়, তবুও আপাতত হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই…
কালের কণ্ঠ সংবাদ প্রতিবেদন:
http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/06/29/513455
তথ্যসূত্র:
1. https://youtu.be/GE-ATiWiFow
4. http://www.iflscience.com/space/search-life-beneath-ice-why-we-re-going-back-europa/
5. http://www.iflscience.com/space/hydrothermal-activity-confirmed-on-enceladus/
7. http://www.iflscience.com/space/we-spoke-to-the-man-who-started-the-hunt-for-intelligent-alien-life/
Leave a Reply