নতুনভাবে প্রাচীণ মানুষের জীবাশ্ম আবিষ্কার বলছে আমাদের প্রজাতির উৎপত্তি আরো ১ লক্ষ বছর পিছনে

হোমো সেপিয়েন্স এর প্রাচীনতম উদাহরণের মাথার খুলির একটি রিকনস্ট্রাকশন
মরোক্কোয় পাওয়া স্কাল(বামে), ডানে আধুনিক মানুষের স্কাল

মরোক্কোর শুষ্ক পর্বতমালায় সম্প্রতি আবিস্কার হওয়া  জীবাশ্মগুলো আমাদের নিজেদের প্রজাতির প্রাচীন ‘হোমো সেপিয়েন্স’দেরই অন্তর্ভূক্ত। এগুলো প্রায় ৩ লক্ষ বছর আগের এবং আমাদের প্রজাতির প্রাচীনতম জীবাশ্ম । গুহা জীবাশ্ম সহ পাথরের হাতিয়ার ও অন্যান্য প্রানীদের হাড় পাওয়া যায়। এর ফলে প্রমাণ হচ্ছে যে মানুষের উৎপত্তি আরো ১ লক্ষ বছর পিছনে।

গবেষণার ফলাফলগুলো পাওয়া যায় নেচার  জার্নালে প্রকাশিত দুইটি গবেষণায়। ফলে বলতেই হচ্ছে আমাদের নিজেদের প্রজাতির বিকাশের সময় নিয়ে আমাদের আরও ভাবার আছে। গুহায় পাওয়া জীবাশ্ম গুলো ৩ জন বয়স্ক, একজন কিশোর ও একজন শিশুর বিস্তারিত ডেটিং করে দেখা হয়-যা প্রায় ৩ লক্ষ বছর আগের। ফলে ইথিওপিয়ায় পাওয়া পূর্বের সবচেয়ে পুরাতন মানুষের জীবাশ্ম (২ লক্ষ বছর আগের) এর চেয়ে এগুলো আরো অনেক আগের।

জাবেল ইরহোট, মরোক্কো, এখানে যখন মানুষ থাকতো তখন এটা গুহা ছিল। পাথর ও সেডিমেন্ট দিয়ে ঢাকা ছিল। ১৯৬০ দশকে কাজ করার সময় পাথর ও সেডিমেন্ট সড়ানো হয়।

ম্যাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউট এর দলের প্রধান জিন-জ্যাকুইস হাবলিন বলেন, “আফ্রিকায় আবিষ্কার হওয়া আমাদের প্রজাতির মধ্যে সম্পর্কিত কোন কিছুর চেয়ে অনেক প্রাচীন। এই নতুন তারিখের আলোকে (৩০০,০০০ বছর পুরোনো) এই উপাদানটি আমাদের বিশ্বাস করায় আমরা আমাদের প্রজাতির অনেক মূলে উপস্থিত হয়েছি। আফ্রিকায় পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন হোমো সেপিয়েন্স”।

দলটি চকচকে পাথরের হাতিরের বিশাল সংগ্রহ ও পাশাপাশি জীবাশ্মের অবশিষ্টাংশ এর ডেট নির্ধারন করেন। তারা থার্মোলিউমিনিসেন্স নামে পরিচিত একটি টেকনোলজি ব্যবহার করে বস্তুর একটি সঠিক বয়স স্থাপনে নিদর্শনগুলোর মধ্যে বিকিরণের আহরণ মাত্রা পরিমাপ করেন। গবেষকদের লক্ষ্য হচ্ছে হার গুলো থেকে জেনেটিক উপাদান বেড় করে আনা। কিন্তু দেখা গেল জীবাশ্ম গুলো এতই প্রাচীন ও পরিবেশ এতই শুষ্ক সেগুলোর ফল পাওয়া যায়নি।

আমরা জানি জেনেটিক সাক্ষ্য অনুযায়ী এই গ্রহের সকল জীবিত মানুষের উৎপত্তি আফ্রিকায়। এখানেই আমাদের প্রজাতির প্রথম বিকশিত হয়। বরং পূর্ব আফ্রিকার কোথাও আমাদের প্রজাতির একক উৎস্য মরোক্কোতে জীবাশ্ম আবিষ্কারের পরিবর্তে হোমো স্যাপিয়েন্সের প্যান-আফ্রিকান উদ্ভবের সমর্থনে সহায়তা প্রদান করে। হাবলিন বলেন, ‘যদি ইডেন গার্ডেন থেকেই থাকে, তা আফ্রিকায় ছিল’।

এই গবেষণার মাধ্যমে প্রস্তাবিত হয় যে মানব বংশধরেরা সারা মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিবর্তিত হয়, বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তন হওয়ার ফলে পর্যায়ক্রমে একসাথে হয়, কারণ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের বিস্তার ও জিনের মিশ্রণ। যেকোন উপকারী মিউটেশন বা পরিব্যাপ্তি এক জনগোষ্ঠি হতে অন্য জনগোষ্ঠিতে ছড়িয়ে যায় এবং প্রতিটা গ্রুপের মধ্যে ইতিবাচক নির্বাচনের দ্বারা বিবর্ধিত হয়।

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ৩ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশ আজকের মতো দেখতে ছিল না। গুহায় জীবাশ্মগুলো পাওয়া যায় সেখানে ছোট ছোট গাছের চারণভূমি, গ্যাজেলস বা কৃষ্ণকায় হরিণ (এন্টিলোপ), জেব্রা, ও ঘাস খাওয়া অন্য বণ্যপ্রাণীরাও ছিল। এই সময় অবশ্য সিংহ ও প্রাচীন হোমো সেপিয়েন্সরা তাদের ধাওয়া করতো। সাহারার তখন অস্তিত্ব ছিল না অর্থাৎ আমাদের প্রজাতিরা অনেক দূর পর্যন্ত সহজেই মাইগ্রেট করতে পারতো, জনগোষ্ঠির সাথে যোগাযোগ রাখতে পারতো যা বর্তমান আধুনিক যুগে বিছিন্ন।

গুহায় পাওয়া জীবাশ্ম প্রতিনিত্বকারী ব্যক্তিরা আধুনিক মানুষ ছিলেন না, তাদের মস্তিষ্ক আজকের মতো উন্নত ছিলনা এবং তাদের বুদ্ধিও ছিল না, কিন্তু গবেষণা লেখকরা এই বিষয়টা দ্রুতই উল্লেখ করেন যে তাদের যদি বর্তমান মানুষের ভিড়ে ছেড়ে দেওয়া আমদের নিজেদের প্রজাতির সাথে তা মিলিত হয়ে যাবে।

তথ্যসূত্রঃ

  1. https://www.mpg.de/11322481/oldest-homo-sapiens-fossils-at-jebel-irhoud-morocco
  2. http://www.nature.com/news/oldest-homo-sapiens-fossil-claim-rewrites-our-species-history-1.22114
  3. https://www.thestar.com/news/world/2017/06/07/new-research-pushes-back-origin-of-human-species-by-100000-years.html

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.