গবেষণায় হান্টিংটনের রোগের ক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক এবং সম্ভাবনাময় সমাধান পাওয়া গেছে। ক্রিসপার (CRISPR) নামক জেনেটিক থেরাপি ব্যবহার করে, গবেষকদের দলটি ইঁদুরের ক্ষেত্রে এই রোগের একটি স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছেন।
আগে হান্টিংটনের রোগ সম্পর্কে একটু আলোচনা সেড়ে নেই। এটা একটা নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজর্ডার। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে এই রোগ হলে মস্তিষ্কের নার্ভ সেল বা স্নায়ুকোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। এই সমস্যাটা জন্মগতভাবে আসে। প্রাপ্তবয়স্ক হলেই এদের ক্ষেত্রে একটা জিন এমন কিছু প্রোটিন তৈরি করা শুরু করে যা মস্তিষ্কের কোষগুলোর জন্য বিষাক্ত হয়ে থাকে।
গবেষণাটি জার্নাল অব ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাটিতে কিছু ইঁদুরকে এমনভাবে জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড করা হয় যাতে তাদের মধ্যে এই হান্টিংটনের রোগ বা হান্টিংটনস ডিজিসটা বাসা বাঁধে। আর হয়ও তাই, দেখা যায় এই ইঁদুরগুলোর নড়নে চড়নে পঙ্গুত্ব চলে এসেছে ঠিক যখন তাদের বয়স নয় মাস। এরপর আসল কাজ শুরু। গবেষকগণ এবার ওই ক্রিসপার ব্যবহার করে ইঁদুরের জিনগুলো পরিবর্তন করে দিল। আর মজার বিষয়, মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই ইঁদুরগুলোর মধ্যে দেখা গেল প্রচণ্ড রকমের উন্নতি!
একটি ভাইরাসকে ব্যবহার করে ইদুঁরগুলোর মধ্যে জেনেটিক থেরাপিটা দেয়া হয়। এই পদ্ধতিটার নাম হচ্ছে এডেনো-এসোসিয়েটেড ভাইরাস (এএভি), আর ক্রিসপারে এই পদ্ধতিটাই সফল হয়। এই ভাইরাল বাহকটিকে ইঁদুরের মস্তিষ্কের সেই অঞ্চলে পাঠানো হয় যা তার নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।
এমোরি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন এর প্রফেসর এবং গবেষণাটির সিনিয়র অথর জিয়াও জিয়াং লি জানান, “এই আবিষ্কার শুধু হান্টিংটনের রোগই নয়, সেই সাথে অন্যান্য নিউরোডিজেনারেটিভ রোগগুলোরও চিকিৎসার একটি পথ করে দিয়েছে, যদিও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া কী সেটা জানতে আরও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার।”
আসলেই ক্রিসপার আসার পর একটার পর একটা জটিল রোগের চিকিৎসার নতুন পথ খুলে যাচ্ছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন এক অস্ত্র হিসেবে ক্রিসপারের অবদান অনস্বীকার্য। তবে এখনও এর সম্পর্কে, এর ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছুই জানা বাকি। কী হবে যদি অন্য কোন সাধারণ জিনের কোন রকম ক্ষতি না করে কেবল রোগ সৃষ্টকারী নির্দিষ্ট জিনকেই দমন করা যায়? আবার কী হবে যদি এই পরিবর্তনের কারণে অন্য কোন নতুন দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়? হান্টিংটন রোগের বেলায় গবেষকগণ প্রথম প্রশ্নটির যথাযথ উত্তর দিতে পেরেছেন এবং এটি ইতিবাচক, কারণ অন্য কোন জিনের ক্ষতি না করেই সফলভাবে রোগ সৃষ্টিকারী জিনটি দমন করা গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর জন্য যে আরও অনেক পরীক্ষা করতে হবে। লি জানান, রোগীর উপর এই থেরাপি প্রয়োগ করার আগে ক্রিসপারের ক্ষেত্রে এই এএভি ইনজেক্ট করা নিয়ে নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটি ভাল করে যাচাই করে নিতে হবে।
মানুষের ক্ষেত্রে ক্রিসপার ব্যবহার করে তার মধ্যকার নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজর্ডারগুলোর চিকিৎসা করার কোন পরিকল্পনা ইতিমধ্যে কোথাও বা কারোর নেই। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে মানুষের কোষকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযোগী করে গড়ে তোলার গবেষণার ক্ষেত্রে মানুষকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
- https://www.jci.org/articles/view/92087
- http://news.emory.edu/stories/2017/06/li_hd_jci-CRISPR/index.html
Leave a Reply