পৃথিবীতে গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের এক তৃতীয়াংশের বেশি অংশের জন্য দায়ী আমাদের ফুড সিস্টেম বা খাদ্য। যে উপায়েই এর প্রভাব কমিয়ে ফেলা হোক না কেন, এটা আমাদের জলবায়ুর একটি বড়সড় পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।
এই ফুড সিস্টেমের সাথে ইনেফিশিয়েন্সি ও ওয়েস্ট ব্যাপারটা জড়িত। অবশ্যই মানুষ একেবারে সরাসরিভাবে অন্যান্য জোবের মত খাদ্যগ্রহণ করে না। খাদ্যকে চাষ করা হয়, স্টোর করা হয়, প্রোসেস করা হয়। অথবা কোন প্রাণীকে খাওয়ানো হয় যাকে পরবর্তীতে হত্যা করে প্রোসেস করা হয় এবং শেশে প্যাকেজ করে ডেলিভার করা হয়। এই প্রত্যেকটি ধাপেই শক্তি ব্যবহার করা হয় যার অর্থ হল গ্রীন হাউজ গ্যাসের এমিশন বা নিঃসরণ।
খুব খসড়াভাবে বললে, পৃথিবীতে ভোজ্য কৃষি শষ্য থেকে দিনে একজন মানুষের জন্য ৬,০০০ ক্যালরি উৎপাদিত হয় যেখানে একজন মানুষ দিনে ২,০০০ ক্যালরি গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং আমরা যদি খাদ্য সঠিকভাবে ভাগাভাগি করে খাই আমাদের ৬,০০০ ক্যালরির জায়গায় ২,০০০ ক্যাওরিতেই কাজ চলে যাবে, কিন্তু এটা আমরা করি না। কাজেই যেখানে কিছু মানুষ ক্ষুধার্থ হয়ে থাকে সেখানে কিছু মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করে বসে থাকে।
তাহলে কৃষি জমি থেকে আমাদের থালা পর্যন্ত খাদ্য পৌঁছতে যে ৪,০০০ ক্যালরি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার কী হয়? আর এর সাথে ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষভোজীদেরই বা কি সম্পর্ক?
এই মিসিং ক্যালরি কোথায় যায় নিচে তা আরেকটি খসরা হিসাবের মাধ্যমে দেখানো হল:
প্রায় ৯০০ ক্যালরি যায় এগ্রিকালচার ওয়েস্ট হিসেবে যাদের বেশিরভাগই মাটিতে পড়ে থাকে। শষ্যগুলোর ডিমান্ডের চেয়ে অতিরিক্ত হবার কারণে বা ভোক্তাদের স্ট্যান্ডার্ড এর না হবার কারণে এগুলো ওয়েস্ট বের খাতায় পড়ে যায়।
৫০০ ক্যালরি যায় বায়োফুয়েল হিসেবে। এটা খারাপ না। কিন্তু আমরা যদি লো-কার্বন ওয়ার্ল্ড চাই তবে এটাকেও যথেষ্ট নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন। গরীব দেশগুলোতে যদি ফ্রি মার্কেট ফোর্স বা মুক্ত বাজার শক্তিগুলো তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী খাদ্যকে ব্যবহার করে তাহলে দেখা যাবে খাদ্যগুলো দিয়ে মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর বদলে অধিক লাভজনক ফুয়েল বাণিজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাহলে পৃথিবীতে খাদ্যাভাব যে বেড়ে গিয়ে কোথায় যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রায় ৬০০ ক্যালরি পোস্ট হারভেস্ট ওয়েস্ট । অর্থাৎ উৎপাদন এর পর এরা নষ্ট হয়। এটা প্রধাণত ডেভলপিং কান্ট্রিগুলোর সমস্যা। আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে ও আরও কিছু উপায় গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। যেমন খাদ্যকে শুকনা রাখতে এগুলোকে কনটেইনারে সিল করে দেয়া যেতে পারে।
৪,০০০ এর মধ্যে ২,০০০ এর এর হিসাব দেয়া হয়ে গেল। প্রায় ১,৭০০ ক্যালরি খরচ হয় বিভিন্ন প্রাণীকে খাওয়ানোর জন্য। এইসব খাবারের সাথে এদেরকে ঘাসও দেয়া হয়। ঘাস উৎপাদন এর জন্য ব্যবহৃত জমি থেকে উৎপাদিত ঘাসের সবটুকুই কিন্তু এদের দেয়া হয় না। যদি প্রয়োজনীয় পরিমাণ ঘাসই উৎপাদন করা হত তবে বাকি জমি খাদ্য শষ্য উৎপাদন এর জন্য ব্যবহার করা সম্ভব হত।
এই এনিমেলদের জন্য ফুড চেইনে অন্য কারণগুলোর চেয়েও বেশি পরিমাণে ইনেফিশিয়েন্সি যোগ হয়। কারণ এদেরকে খাদ্য প্রদান ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণ জনিত কারণ ও উষ্ণ রাখার জন্যও শক্তি খরচ হয় (এক্ষেত্রে প্রতি কেজি মাংসের জন্য পোল্ট্রি বা হাসমুরগির জন্য গরুর চেয়ে কম শক্তি খরচ হয়। এতে চিকেন, বিফ এর চেয়ে বেশি এফিশিয়েন্ট এনার্জি সোর্স হচ্ছে)। মানুষ এনিমেলগুলো থেকে মাংস, দুধ ও ডেইরি প্রোডাক্টগুলো থেকে গড়ে দৈনিক ৫০০ ক্যালরি গ্রহণ করে যেখানে এর জন্য বরাদ্দ থাকে ১,৭০০ ক্যালরি। অর্থাৎ গ্রাসল্যান্ডগুলো শষ্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করার কথা বাদ দিলেও এই এনিমেলগুলোর পেছনে এক জন মানুষের জন্য দিনে ১,২০০ ক্যালরি নষ্ট হচ্ছে। আর বর্তমানে ডেভলপিং কান্ট্রি বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাংসের চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
তাহলে এনিমেলেগুলোর জন্য আরও ১,২০০ ক্যালরি বাদ দিলে বাকি থাকছে ৮০০ ক্যালরি। এই ৮০০ ক্যালরি খাদ্যের প্রোসেসিং, বণ্টন ও হাউজহোল্ড ওয়েস্ট বা বাসাবাড়ির ওয়েস্ট হিসেবে নষত হয়। এই অংশের সবচেয়ে বড় অবদান হল উন্নত দেশগুলোর হাউজহোল্ড ওয়েস্টের। যাই হোক, এত ওয়েস্টের পর যে ২,০০০ ক্যালরি বাঁচে তার অপর্যাপ্ত শেয়ারিং এর জন্য পৃথিবীর কোথাও মানুষ অনাহারে ভোগে আর কোথাও মানুষ অতিরিক্ত পরিমাণে মোটা।
আমাদের এই ফুড সিস্টেমকে উন্নত করার অনেক সুযোগ আছে। আমরা যদি আরও অরগানাইজড হই (যা অবশ্যই খুব একটা সহজ নয়) আমরা আমাদের নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সর্বোত্তম খাদ্যাভাসের দ্বারা আমরা অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে এবং অপচয় হওয়া ক্যালরি থেকে ২,৩০০ ক্যালরি কমিয়ে আনতে পারি। আর সেটা জনসংখ্যার এত দ্রুত বৃদ্ধি, জলবায়ুর বর্তমান পরিবর্তনের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার পরও সম্ভব। আমরা জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন ও বায়োফুয়েল এর উৎপাদন বাড়িয়েও সকলের জন্য খাদ্যের যোগান দিতেও সক্ষম হতে পারি।
আমাদের এনিমেলগুলো দ্বারা গৃহীত খাদ্য আমাদের খাদ্য ও কৃষিজমিতে প্রচুর প্রেশার তৈরি করছে আর এটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব যদি ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষভোজী হয়ে যায় তাহলে আমরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও ওয়েস্ট নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা ছাড়াই আরও কয়েক বিলিয়ন বেশি মানুষের খাদ্যের যোগান দিরে আর দ্বিগুণ পরিমাণ বায়োফুয়েল উৎপাদন করতে পারব।
যাই হোক, মাংস ছেড়ে দিয়ে ভেজিটেরিয়ান হয়ে যাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার হবে। কিন্তু তারপরেও যদি কেউ মাংস ছাড়তেই না চান তাহলে মুরগী একটা ভাল সমাধান হতে পারে। কারণ প্রথমত, প্রতি কেজি চিকেনের কার্বন ফুটপ্রিন্ট ( চিকেন উৎপাদন এ কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ) প্রতি কেজি ব্রাজিলিয়ান বিফ এর দশ ভাগের এক ভাগ। দ্বিতীয়ত, মুরগী তুলনামূলকভাবে অধিক এফিশিয়েন্ট মিট প্রডিউসার। তৃতীয়ত মুরগী জাবর কাটে না (গরুর জাবর কাটার ফলে যে পরিমাণ মিথেন উৎপাদিত হয় তাতেই গরুর কার্বন ফুটপ্রিন্ট দ্বিগুণ হয়ে যায়)। এবং চতুর্থত, মুরগীর খামার করতে কম পরিমাণে ডিফরেস্টেশন বা বনাঞ্চল ধ্বংস হয়।
যুক্তরাজ্যের ডায়েটারি চয়েস নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে ভেজিটেরিয়ানে কনভার্ট হলে গ্রীনহাউজ গ্যাস ফুটপ্রিন্ট ২৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। যাই হোক খাদ্যের ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ এর হার কমানোর জন্য আমরা যে তিনটি কাজ করতে পারি তা হল: মাংস কমানো, মাংসের ধরণ পাল্টানো এবং অবশ্যই অপচয় কমানো।
তথ্যসূত্র:
- http://www.agri-outlook.org/
- http://www.ers.usda.gov/amber-waves/2015-july/growth-in-meat-consumption-for-developing-and-emerging-economies-surpasses-that-for-the-developed-world.aspx#.Vktu5GThCAw
- http://www.nature.com/news/one-third-of-our-greenhouse-gas-emissions-come-from-agriculture-1.11708
- http://www.burningquestion.info/
- http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0301421511010603
Leave a Reply