একটা গবেষণায় টিশার্ট স্নিফিং টেস্ট বা টিশার্ট এর গন্ধ নেয়ার টেস্ট থেকে দেখা যায় যে নারীরা এমন কারও উপর আকৃষ্ট হয় যার শরীরের গন্ধ তার পিতার শরীরের গন্ধের মত হয়। এখানে ফ্রয়েডের ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স, অয়ডিপাস কমপ্লেক্স, পিতৃস্থানীয় বা পিতার মত কাউকে দেখতে পছন্দ করার কোন ব্যাপার নেই, বরং গবেষকদের বলেন, যদি কিছু এখানে থেকে থাকে তাহলে তা হল ইভোল্যুশনারি বা বিবর্তনগত কিছু স্ট্র্যাটেজি যা হয় রোগ প্রতিরোধের কিছু সুবিধা দেয় অথবা অনেক স্ট্রেঞ্জারদের ভিড়ে ডিসটেন্ট রিলেটিভকে ডিটেক্ট করার একটা আনকনশাস এবিলিটিকে ইনডিকেট করে।
এখানে যে জিন কাজ করে তা আমাদের মেজর হিস্টোকম্প্যাটিবিলিটি কমপ্লেক্স বা MHC নামক একটি জেনেটিক সিস্টেম এর একটি অংশ গঠন করে থাকে। MHC একটা জেনেটিক সিস্টেম যেখানে ইমিউন সিস্টেমের প্রোটিনরা ফরেইন প্রোটিন বা বাইরের প্রোটিনদেরকে সনাক্ত করতে পারে। MHC সৃষ্টিকারী জিনগুলো তাই আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কমপোনেন্ট তৈরি করে। অরগান ডোনেশ বা বোন ম্যারো ডোনেশনের সময় MHC ম্যাচ করতে হয়। যাই হোক, দেখা গেছে এই জিনগুলো আমাদের নেচারাল অডোর বা প্রাকৃতিক গন্ধকে সনাক্ত করার সাথেও সম্পর্কযুক্ত।
ইঁদুর নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা যায়, স্ত্রী ইঁদুররা ভিন্ন MHC যুক্ত পুরুষ ইঁদুরকে গন্ধ শুকে পছন্দ করে কিন্তু সঙ্গী হিসেবে একইরকম MHC যুক্ত পুরুষ ইঁদুরকে পছন্দ করে। মানব নারীদের বেলায়ও একইরকম ভাবা হচ্ছে।
একই, কিন্তু ভিন্ন
একটি গবেষণায় আরও জটিল একটি বিষয় উঠে এসেছে। মারথা ম্যাকক্লিনটক, ক্যারল ওবার এবং ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর একটি দল ৪৯ জন নারীকে স্টাডি করে দেখেন। তাদের ও তাদের বাবা-মার MHC জিন আগে থেকে জানা ছিল। অংশগ্রহণকারীদেরকে অনেকজন পুরুষের টিশার্টের গন্ধ নিতে দেয়া হয়। দেখা যায় নারীরা সেসব পুরুষের টিশার্টকে গন্ধ শুকে পছন্দ করলেন যাদের MHC জিনগুলোর কিছু কিছু তাদের নিজেদের MHC জিনের কিছু কিছুর সাথে মিলে যায়। গড়ে এরা ১.৪টি এলিল শেয়ার করে। আরও দেখা যায় নারীরা এইসব ম্যাচিং এলিলগুলো তাদের পিতার কাছ থেকেই পেয়েছে, মাতার কাছ থেকে নয়। সুতরাং আসলে নারী যাদের পছন্দ করে তাদের সাথে নারীর পিতার MHC জিনের একটা ভালই মিল থাকছে।
এটা আবার বর্তমানে প্রচলিত থিওরির বিরুদ্ধে চলে যায় যেটা বলে ‘আউটব্রিডিং বা দূর সম্পর্কের কারও সাথে মিলিত হওয়াই সবচেয়ে ভাল’। এক্ষেত্রে একটা জিনিস বলে রাখি সকল মানুষের বিবর্তন যেহেতু একটা জায়গা থেকেই সকল মানুষই একে অপরের কাছের বা দূরের আত্মীয়। আমাদের জিনগুলো টেস্ট করে এই আত্মীয়তা মেজার করা যায়। MHC জিন সহ অন্যান্য জিন যত ভিন্ন হবে বোঝা যাবে আত্মীয়তা তত দূরের, জিনগুলোতে যত বেশি মিল থাকবে বোঝা যাবে আত্মীয়তা তত কাছের। গবেষণা যেহেতু দেখাচ্ছে নারীরা তাদের পিতার MHC জিনের সাথে মিল আছে এমন পুরুষকে পছন্দ করছে এর অর্থ হল নারী তুলনামূলকভাবে তার নিকট আত্মীয়কে পছন্দ করছে। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণা বলে যত বেশি দূরের সম্পর্কের আত্মীয়কে সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করা যাবে লাভ তত বেশি হবে, কারণ সম্পর্ক যত দূরের, ইমিউন সিস্টেম জিন তত ভিন্ন, আর সন্তানের রোগ প্রতিরোধী জিনে যত বেশি ভিন্ন কম্পোনেন্ট থাকবে বর্তমানে থাকা এবং প্রতিনিয়ত বিবর্তনরত প্যাথোজেনের এটাক থেকে বাঁচার সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে, আর ভিন্নতা আসে সূর সম্পর্কীয় আত্মীয় বাবা মার মিলনের দ্বারা। এছাড়া সন্তান প্রসবকালীন সময়ও জেনেটিক মেটারিয়ালের ভিন্নতা যত বেশি হয় বার্থ ডিফেক্টস তত কম হয়। তাই বিবর্তনগতভাবেই আমাদের মাঝে নিকট আত্মীয়কে পার্টনার হিসেবে পছন্দ করায় একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয় এবং ইনব্রিডিং এর চেয়ে আউটব্রিডিংই আমাদের কাছে বেশি পছন্দনীয়। কিন্তু এই গবেষণাটি বলছে ভিন্ন কথা।
লিমিটেড ইনব্রিডিং
যাই হোক, ম্যাকক্লিনটক মনে করেন, আউটব্রিডিং এর ধারণাটি যথেষ্ট সংকীর্ণ। আউটব্রিডিং এর মত লিমিটেড ইনব্রিডিং বা একটা মাত্রা পর্যন্ত ইনব্রিডিং কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরণের জিনের কম্বিনেশন রোগের বিরুদ্ধে যেমন ভাল কাজ করে এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি পার্টনারদের জিনের মধ্যে যদি একটা একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে জিনের মধ্যে মিল থাকে তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্রিয়া সম্ভবত অপটিমাল বা সবচেয়ে ভাল হতে পারে, এটাও সত্য।
তাহলে ম্যাকক্লিন্টনের কথা মতে, পার্টনার চয়েজের ক্ষেত্রে একেবারে অমিল MHC জিনের চেয়ে কিছুটা মিল আছে এমন MHC কে মেয়েরা কেন বেশি পছন্দ করতে পারে এর একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু ইউনিভারসিটি অব ইউটাহ এর গবেষক ওয়াইনি পটস দিয়েছেন আরেকটি ভিন্ন ব্যাখ্যা। তিনি বলেন, যদিও ইঁদুর ভিন্ন MHC জিনের সঙ্গীকে পছন্দ করে, তারা তাদের খাঁচার ভেতরে একই রকম জেনেটিক মেকাপ যুক্ত সঙ্গীকেই পছন্দ করে। সম্ভবত এটা তারা তাদের নিকট আত্মীয়কে নিশ্চিত করার জন্য করে। নারীরও তাদের পিতার মত একইরকম গন্ধের বেলায় আকৃষ্ট হবার একই কারণ থাকতে পারে। এটা নিকট সম্পর্কের আত্মীয়কে খুঁজে বের করার একটা ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।
ভিন্ন ফলাফল
আবার ওবারের একটি গবেষণা দেখাচ্ছে নারীর ভিন্ন MHC জিনের পুরুষকেই বিয়ে করতে চায়। তিনি বলেন, নারীদের কার গন্ধ ভাল লাগল এটার চেয়ে বরং নারীরা কাকে বিয়ে করতে চায় এখান থেকেই নারীরা সঙ্গী হিসেবে কাদেরকে চায় এই উপসংহার টানা উচিৎ”।
পরবর্তিতে এটা নিয়ে আরও গবেষণা চালানো হয় কিন্তু ফল ভিন্ন পাওয়া যায়। ব্রাজিলিয়ান গবেষকগণ ২৯ জন পুরুষকে ৫ দিনের জন্য কটন স্কিন প্যাচ পড়তে বলেন যাতে এগুলো তাদের ঘাম শুষে নেয় যেখানে তাদের শরীরের গন্ধও থাকবে। তারপর ২৯ জন নারীকে এই কটন প্যাচগুলোকে শুখতে বলা হয় এবং আকর্ষণীয় থেকে অনাকর্ষণীয় স্কেলে তাদেরকে বিচার করতে বলা হয়। বিজ্ঞানীগণ সেইসব নারী পুরুষের রক্ত থেকে MHC সনাক্ত করেন। দেখা যায় নারীরা তাদের গন্ধই বেশি পছন্দ করেছেন যাদের MHC এর সাথে তাদের MHC এর পার্থক্য থাকে। যাদের সাথে MHC এর মিল ছিল তাদেরকে গন্ধকে নারীরা একরকম ঘৃণা করেছেন বলা যায়।
ইভোল্যুশনারি সাইকোলজিস্ট ক্রিস্টিন গ্রভার ৪৮ জন কাপলের MHC স্টাডি করেন। গবেষণায় দেখা যায় যে কাপলদের মধ্যে MHC এর মধ্যে মিল পাওয়া যায় ভিন্ন MHC এর তুলনায় তাদের বেলায় পার্টনারের প্রতি সেক্সুয়াল রেসপন্সিভনেস ও ডিজায়ার কম। তারা খুব কম একে অপরের থেকে ইন্টারকোর্স আশা করেন। আর পার্টনারকে তারা সেক্সুয়ালি প্লিজ করতেও ভিন্ন MHC জিনের চেয়ে কম মোটিভেটেড হন। আরও দেখা যায় যেসব নারীর পার্টনারের MHC এর সাথে MHC এর মিল আছে তারা অন্য পুরুষকে নিয়ে সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসিতেও বেশি থাকেন, বিশেষ করে ওভিউলেশন সাইকেলের সবচেয়ে ফারটাইল সময়ে। এমনকি তাদের মধ্যে সেক্সুয়াল ইনফিডেলিটিও দেখা গেছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, নারীরা আসলে ভিন্ন MHC এর পুরুষকেই সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করে। যদি কখনও পিতার MHC এর সাথে মিল থাকা MHC যুক্ত পুরুষের গন্ধকে পছন্দ করে তা হয়তো যৌনতা নির্দেশ করে না, বরং নিকট আত্মীয়কে সনাক্ত করতে পারার একটি আনকনশাস এবিলিটিকে নির্দেশ করে।
তথ্যসূত্র:
- https://www.newscientist.com/article/dn1815-women-attracted-to-men-who-smell-like-dad/amp/
- http://www.dailymail.co.uk/femail/article-1215420/What-REALLY-makes-woman-want-sleep-man.html
Leave a Reply