যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ তৈরি করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে সরু ইলেক্ট্রিকাল অয়ার বা তড়িৎবাহী তার। এটি তৈরি করা হয়েছে লেগো ব্লকের মত ক্ষুদ্র ডায়মন্ডকে জোড়া দিয়ে দিয়ে। তারগুলো মাত্র তিনটি পরমাণুর আকারের সমান প্রস্থের আর গবেষকদের দলটি মনে করছে শিল্পে এই তারকে নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা যাবে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি এর SLAC ন্যাশনাল একসিলারেটর লেবরেটরি থেকে আসা গবেষকগণ মিলে এই তারটি উদ্ভাবন করেছেন। তারা ডায়মন্ডের ক্ষুদ্রতম একক বা বিট তৈরি করেছিলেন, যা ডায়ামন্ডয়েড নামে পরিচিত। এই ডায়ামন্ডয়েডদেরকে ন্যানোস্ট্রাকচার স্ক্যাফল্ডিং তৈরিতে ব্যবহার করা যায়, অর্থাৎ এদেরকে জোড়া লাগিয়ে ন্যানো স্কেলের স্ট্রাকচার তৈরি সম্ভব হয়। এই গবেষণাটির ফলাফল নেচার মেটারিয়ালস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাটির প্রধান লেখক এবং স্ট্যানফোর্ডের একজন পোস্টডক্টোরাল গবেষক হাও ইয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা এখানে দেখিয়েছি যে সাম্ভাব্য ক্ষুদ্রতম আকারের তরিৎ পরিবাহী তার তৈরি করাটা সম্ভব। আর এটা তৈরি করার প্রক্রিয়াও খুব সহজ, আপনি প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো এক জায়গায় দেবেন আর আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল পেয়ে যাবেন। এটা এমনভাবে তৈরি হয় যেন ডায়মন্ডয়েডরাই জানে যে তাদেরকে ঠিক কোথায় যেতে হবে”।
এই তড়িতবাহী তার তৈরি করা হয় সালফার, কপার, চ্যালকোজেনাইড নামক একটি যৌগ দিয়ে যা একটি সেমিকন্ডাক্টর। তবে এই তার তৈরির সাফল্যের পেছনে যার ভূমিকাটিই আসল সেটা হল ডায়মন্ডয়েড যা মাত্র ১০টি কার্বন পরমাণু এবং একটি সংযুক্ত সালফার পরমাণু নিয়ে তৈরি। এটা সালফার এবং কপারের সল্যুশনের ভাসমান থাকে, এবং মলিক্যুলার ফোর্সগুলোর কারণে এই ন্যানোডায়মন্ডগুলো বাইরের কোন প্রভাব ছাড়াই নিজেদেরকে একটি তার হিসেবে বিন্যস্ত করে।
স্ট্যানফোর্ডের গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট ফেই হুয়া লি, যিনি এই ক্ষুদ্র তার তৈরি এবং এটা কিভাবে তৈরি হয় তা আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি জানিয়েছেন, “অনেকটা লেগো ব্লকের মতই এই ডায়মন্ডয়েডরা কেবল মাত্র নির্দিষ্ট কিছু উপায়েই একে অপরের সাথে ফিট করে যা তাদের সাইজ ও শেপের দ্বারা নির্ধারিত হয়। এখানে সালফার এবং কপার পরমাণুগুলো তারের ভেতরের দিকে সন্নিবিষ্ট হয়ে একটি কন্ডাক্টিভ বা তরিতবাহী কোর তৈরি করে আর অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে বড় বড় ডায়মন্ডয়েডগুলো বাইরের দিকে যুক্ত হয়ে ইনসিউলেটিং শেল বা অন্তরক (যা বাইরের পরিবেশকে ভেতর থেকে তড়িতাহিত হতে আটকায়) আবরণী তৈরি করে।
দলটি এটম বাই এটম সূক্ষ্মতায় তারটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আর এটা কেবল চ্যাকলোজেনাইড দিয়েই নয়, দলটি চ্যালকোজেনাইড ছাড়াও জিংক, আয়রন, ক্যাডমিয়াম এবং সিলভারকে ব্যবহার করেও এটা করতে সক্ষম হয়েছে। বলে রাখা প্রয়োজন যে ইতিমধ্যেই জিংক, আয়রন, ক্যাডমিয়াম এবং সিলভারকে ইলেক্ট্রিসিটি ট্রান্সফার এবং প্রোডাকশনে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গবেষণার কো-অথর নিকোলাস মেলশ জানান, “এখন শক্তি উৎপাদনের জন্য এই পদার্থগুলো থেকে ফ্যাব্রিক তৈরির করার কথা কল্পনা করা যায়। এই প্রক্রিয়াটি আমাদেরকে আরও অনেক বিশাল ক্ষেত্রে কাজে লাগাবার একটা সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছে যেখানে আরও অনেক ইনগ্রিডিয়েন্ট বা উপাদানকে কাজে লাগিয়ে ও আরও অনেক এক্সপেরিমেন্টাল কন্ডিশনে আরও বেশি কার্যকরী ইলেক্ট্রিকাল প্রোপার্টি এবং ইন্টারেস্টিং ফিজিক্স আবিষ্কার করা সম্ভব হবে”।
তাহলে এখন দেখা যাচ্ছে যে, ন্যানোঅয়ারকে সুতা যেভাবে তৈরি করে সেভাবে তৈরি করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে এমন একটা ফ্যাব্রিক তৈরি করা সম্ভব যা থেকে ইলেক্ট্রিসিটি, পরিধানযোগ্য ইলেক্ট্রনিক্স (অয়ারেবল ইলেক্ট্রনিক্স) এবং এমনকি সুপারকন্ডাকটরও তৈরি করা যাবে।
তথ্যসূত্র:
ওয়ারেবল ইলেক্ট্রনিক্স (Wearable Electronics) মানে পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিক্স , তড়িতবাহী তারের যন্ত্রপাতি নয় ।
Wearable technology, wearables, fashionable technology, wearable devices, tech togs, or fashion electronics are smart electronic devices (electronic device with microcontrollers) that can be worn on the body as implant or accessories. The designs often incorporate practical functions and features
Source:
https://en.wikipedia.org/wiki/Wearable_technology
ধন্যবাদ