ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অনুভূতি মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সার্কিটগুলো সক্রিয় হয় ঠিক যেভাবে প্রেম, যৌনতা, জুয়া, মাদক এবং মিউজিক মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে। ইউনির্ভাসিটি অফ ইউটাহ স্কুল অফ মেডিসিন এর গবেষকগণ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয় স্যোসাল নিউরোসায়েন্স জার্নালে।
গবেষণাটির কো-অথর জেফ এন্ডারসন বলেন, “আমাদের নেয়া সিদ্ধান্তগুলোকে যা কিছুই প্রভাবিত করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী উপাদানটি হল রেলিজিয়াস এক্সপেরিয়েন্স বা ধর্মীয় অভিজ্ঞতা। বড় বড় সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে, যেসব সিদ্ধান্ত আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে সেসব ক্ষেত্রে মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ম ও ধর্মীয় অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। সে সেই সিদ্ধান্ত ভালর জন্যই হোক আর খারাপের জন্যই। এই সিদ্ধান্তগুলো তৈরি করার জন্য বা তাতে অবদান রাখার জন্য আমাদের মস্তিষ্কে কি কি ঘটে তা জানা সত্যি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
নিউরোলজিক্যাল একটিভিটিতে বিশ্বাসের প্রভাব কিভাবে এবং কতটা পড়ে সেটা নির্ধারণ করার জন্য গবেষকগণ ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং বা fMRI ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে ১৯ জন ধর্মপ্রাণ শিষ্যের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা করা হয়। এদের প্রত্যেকেই প্রাক্তন মিশনারিজ ছিল। স্ক্যান করার সময় তাদেরকে বেশ কিছু কাজ দেয়া হয় যাতে তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এই কাজগুলোর মধ্যে ছিল বুক অব মরমন পড়া ও বাইবেল বর্ণিত কাহিনীর বিভিন্ন ভিডিও দেখা।
এক্সপেরিমেন্টটি করার সময় অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাস করা হয়েছিল যে তারা ‘আধ্যাত্মিক অনুভূতি” পাচ্ছেন কিনা, অর্থাৎ তারা ঈশ্বরের নৈকট্য অনুভব করতে পারছেন কিনা, বা তেমন শান্তি অনুভব করছেন কিনা। আর যদি তারা এরকম স্পিরিচুয়াল সেন্সেশন এর সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যান তাদেরকে একটি বাটনে চাপ দিতে বলা হয়।
স্যোশাল নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে গবেষকরা বলেন, ধর্মীয় অনুভব চরম মুহূর্তে পৌঁছলে মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস একাম্বেন্স (nucleus accumbens) অঞ্চলটি প্রবলভাবে সক্রিয় হয়। এই নিউক্লিয়াস একাম্বেন্স অঞ্চলটিকে বলা হয় রিওয়ার্ড সার্কিট বা পুরষ্কার গ্রহণের বর্তনী। এই অঞ্চলটি একইভাবে যৌনকর্মের সময়, গান শোনার সময়, ভাল খাওয়ার সময় এবং মাদক গ্রহণের সময় যখন উত্তেজিত হয় কেউ এবং প্রবলভাবে সক্রিয় হয়।
গবেষকগণ সেইসাথে মিডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কটেক্সেরও (medial prefrontal cortex) সক্রিয়তাও লক্ষ্য করেন। যা হাইয়ার কগনিটিভ ফাংশনের সাথে সম্পর্কযুক্ত যেমন যুক্তিবোধ। এটার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, রেলিজিয়াস এক্সপেরিয়েন্স বা ধর্মীয় অভিজ্ঞতা আংশিকভাবে তৈরি হয় কনশাস জাজমেন্ট এবং প্রাপ্ত রেলিজিয়াস স্টিমুলি বা সংবেদনের উপর একটি মূল্য আরোপনের মাধ্যমে। এর অর্থ হল, বিশ্বাসী ব্যক্তিগণ সচেতনভাবে এবং সক্রিয়ভাবেই তাদের বিশ্বাস নির্ধারণ করেন।
সম্ভবত এই গবেষণা বেশ চমৎকার, তবে গবেষকগণ সতর্ক করেছেন যেন এখান থেকে আগেই বড়সড় টানা না হয়। তারা বলছেন, ধর্মীয় অভিজ্ঞতা ব্যক্তি ও সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। আর এজন্য এর পেছনে আরও ব্যাপক রেঞ্জের নিউরোলজিকাল কারণ এবং ফলাফল থাকতে পারে।
(আরেকটু যোগ করি। এই গেল ধর্মীয় অভিজ্ঞতার সাথে লাভ, সেক্স ও ড্রাগের একটা সম্পর্ক। আরেকটি গবেষণায় সেক্সের সাথে ড্রাগের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। সেটা নিয়ে পরে একদিন আলোচনা করা যাবে।)
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply