খাদ্য শস্য উৎপাদনে উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন খামার আমরা আগেও দেখেছি যেমন ভার্টিক্যাল ফার্ম বা খামার এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ফার্ম যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য শস্য উৎপাদন করা হচ্ছে। এবার আমরা সোলার ও সমুদ্রজলকে কাজে লাগিয়ে নবায়যোগ্য এনার্জি ব্যবহার করে ফার্মে শস্য উৎপাদন দেখতে পাচ্ছি।
এটা শুধু সম্পূর্ণ সূর্যালোক এবং সমুদ্রের জল দিয়েই চালিত পৃথিবীর প্রথম ফার্ম নয়, অপ্রত্যাশিতভাবে অস্ট্রেলিয়ান মরুভূমিতে করা একটি ফার্ম।
সানড্রপ ফার্ম নামে একটি কোম্পানি সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অগাস্টা পোর্টে কাছে অনুর্বর মরুভূমি এলাকায় এই ফার্মটি তৈরি করা হয়েছে ছয় বছর ধরে। মুলত সানড্রপের সোলার এবং সী-ওয়াটার পাওয়ার টেকনোলজি দিয়েই এই ফার্মটি সম্পূর্ণভাবে চালিত। ২০ হেক্টর (৪৯ একর) জমির উপর নির্মিত গ্রীনহাউজ প্রথম কৃষিজ পদ্ধতি এবং নবায়যোগ্য শক্তির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় এই গ্রীনহাউজটি।
শুকনো, গরম, এবং অনুর্বর এলাকায় কৃষি কাজে অযোগ্য জায়গায় সাধারণ খামার বানানোই সানড্রপের উদ্দেশ্য। এর মূল লক্ষ্য এসব অনুর্বর ও রুক্ষ জায়গায় শস্য উৎপাদন করে দেখানো এবং এটাও দেখানো যে জীবাশ্ম জ্বালানি, কীটনাশক এমকি মাটি ব্যবহার না করে।
সানড্রপ ফার্মের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর স্টিভ মারাফিওট বক্তব্য, “উচ্চ-প্রযুক্তি গ্রীনহাউজ সুবিধা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদনের জন্য কাজ করতেছি যা ভোক্তার চাহিদা মাফিক উৎপাদনের সাথে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা, এবং যে সমস্ত জায়গায় পানি ও বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ সমস্যা সে সমস্ত এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী টেকশই ফার্মের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে সাহায্য করা।”
স্পেনসার গালফ থেকে মাত্র এক মাইল দূরে যেখানে সমুদ্রজলের পাম্প স্থাপন করে জল হতে থার্মাল ডিস্যালিনেশন প্লান্টের মাধ্যমে লবণ দূর করা হয়। লবণ এবং পুষ্টি সংগ্রহ করে পুনরায় শস্যের সার হিসেবে ব্যবহার অথবা কৃষিজ উৎপাদনের জন্য তা বিক্রি করা হয়।
লবণদূরীকরণ প্লান্টটিতে ১১৫ মিটার উচু সোলার টাওয়ার দিয়ে শক্তি সরবরাহ করা হয়। এই সোলার টাওয়ারে ২৩ হাজার আয়না নির্দিষ্ট করা আছে এবং সেখান থেকে ৩৯ মেগাওয়াট দিনে শক্তি উৎপাদন করতে পারে। এই টাওয়ার যথেষ্ট শক্তি উৎপাদন করে এই প্লান্টটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে গরম ও ঠান্ডা করতে পারে এই বিশাল গ্রীনহাউজটিকে ।
এখানে ১৮০ হাজার টমেটো গাছ কোকোনাট হাস্কে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই মাটির প্রয়োজন নেই। ভ্যান্টিলেশন সিস্টেম বায়ু পরিষ্কার এবং জীবানুমুক্ত করতে সমুদ্রের জল ব্যবহার করা হয়। তাই কীটনাশকের প্রয়োজন নেই। এটা শুনতে সত্য বলে মনে হচ্ছে না, কিন্তু এটা সত্য এবং ইতোমধ্যে ১৫ হাজার টন টমেটো উৎপাদন করে তা অস্ট্রেলিয়ান সুপারমার্কেটে বিক্রি হচ্ছে এবং সামনে পর্তুগাল ও ইউ এস তে এমন ফার্ম করার প্লান নিয়েছে।
সানড্রপ ফার্ম প্রযুক্তিবিদ্যার প্রথম এবং সম্ভাবময় যেসকল এলাকা কৃষিকাজের অনুপযোগী, মিঠাজল নেই, এমনকি বিদ্যুৎ শক্তিও নেই সেসকল জায়গায় সফলভাবে করে দেখিয়েছে। উদ্ভাবনী চিন্তাবিদের প্রতিকূল পরিবেশে কৃষি উন্নয়ন একমাত্র নয়, নগর এলাকায় ভার্টিক্যাল ভাসমান ফার্ম থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ফার্ম সহ অনেক উপায়ে ভবিষৎ বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তার জন্য পথ দেখাচ্ছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে আমাদের প্রয়োজন হবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারিক এবং টেকশই পদ্ধতি এবং ভবিষৎ বৃহৎ মরূভূমি, ঝড়, শস্য উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এবং উর্বর ভূমি কমে গেলে এবং সর্বোপরি কৃষিকাজের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হলেও যেন এইসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা টিকে থাকতে পারি। আর এজন্যই আমরা আশাবাদি যে আমাদের প্রযুক্তিগত অপশন গুলোই ভালভাবে কাজ করছে প্রাকৃতিক প্রতিকূল পরিবেশেও আমরা টিকে থাকতে পারবো।
তথ্যসূত্র:
sundropfarms.com
Leave a Reply