মাঝে মাঝে অন্যরা এমন আচরণ করে মনে হয় সে যা করছে সবই সঠিক। কিন্তু আমাদের বিচক্ষণতার কারনে তাদের বোঝানো বিশ্বাস গুলো ভুল হতে পারে। আর এই ভুল ধরতে আমাদের কগনিটিভিট স্কিলের প্রয়োজন হয়। সাধারনভাবে ভাবা হতো মানুষেরই বুঝি এই কগনিটিভ স্কিল আছে বলেই আমরা একে অন্যের মিথ্যা আস্ফালন বুঝতে পারি। কিন্তু নতুন একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এই প্রথম যে এপরা এধরনের মিথ্যা আস্ফালন বা আশ্বাস বুঝতে সক্ষম।
আগের দেখানো হয় অন্যরা যা চিন্তা করেতার উপর ভিত্তি করে এপরা যা দেখে বা শুনে তা বুঝতে পারে, কিন্তু যে অন্যরা যা চিন্তা করে এমনকি যদি ঐ ভাবনা গুলো ভুলও হয় এগুলো এপরা জানতো এমনকিছু আগে দেখানো হয়নি। এপদের এত কিছু বুঝতে তাদের নির্দিষ্ট মাত্রায় বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে যা এত কিছু বাস্তবে আমাদের মাথাতেও নেই, এমনটাই দাবী করা হয়েছে।
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষকদের সহ-অথর মাইলেক টমাসেলো বলেন, “এর অর্থ মানসিক জগৎ থেকে ফিজিক্যাল জগতে অস্তিত্ব আলাদা তা বুঝতে পারা”।
এটা পরীক্ষা করতে তিনটি প্রজাতির এপদের গবেষকরা দুইটা ভিডিও দেখিয়েছেন। এপদের মধ্যে ছিল শিম্পাঞ্জি, বনোবো এবং ওরাংওটাং। এই ভিডিও গুলো বিশেষভাবে শুধু পরীক্ষা নেওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়নি যেখানে এপরাই পূর্বানুমান করতে সক্ষম অথবা সক্ষম নয়, এখানে অবশ্য মানুষের বৈশিষ্ট্যযুক্ত মিথ্যা বিশ্বাস ভিডিও গুলোয় ধারণ করা হয়েছে, এই ভিডিও গুলো প্রাইমেটদের মনোযোগ দেখার জন্যেও ধারণ করা হয়েছে।
গবেষণায় এপ বা নরবানরদের দুটি ছোট ছোট ভিডিও দেখিয়েছে। একটায় একজন ব্যক্তি কিংকং (বা গরিলা যা-ই বলুন) এর ড্রেস পরিহিত দুইটো বড় খরের গাঁদার একটায় একজন লোক যখন দেখছিল তখন লুকাতে যায়। তারপর লোকটি দরজার পিছনে লুকায়, এবং যখন কেউ দেখতেছে না তখন কিংকং পালিয়ে যায়। শেষ দৃশ্যে লোকটি হাজির হয় এবং কিংকং কে খুজতে চেষ্টা করে।
দ্বিতীয় ভিডিওটাও একই ধরণের, লোকটি একটা পাথর খুঁজে যেটি লোকটির আড়ালেই কিংকংটা দুটো বক্সের একটায় লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু কিংকংটি পাথরটা চুরি করে যখন লোকটির পিছনে রাস্তায় দিয়ে চলে যায়।
যখন এপরা ভিডিও মুভি গুলো দেখতেছি তাদের দৃষ্টি আই-ট্রাকিং ইনফ্রারেড ডট গুলো অনুসরন করে কি ভাবছিল তা-ই গবেষকরা বেড় করেছে।
এপরা ভাবলো যে লোকটিকে চিন্তা করতে হয় গরিলাটি কোথায় লুকিয়েছে, এটা বুঝাতে গবেষকরা আই-ট্রাকিং টেকনোলজি ব্যবহার করেছিল। আপনারা হয়তো ভিডিওটা দেখার সময় বড় লাল ডট গুলো দেখেছেন। প্রাইমেটরা দেখলো গরিলাটা যে প্রথম খরের গাদায় লুকিয়ে ছিল লোকটি ভাবুক গরিলাটা সেখানেই অনেক্ষণ ধরে লুকিয়ে আছে, এমনকি এপরাও নিজেরাই জানতো গরিলাটা আসলে সেখানে নেই।
উভয় ক্ষেত্রেই এপ বা নরবানরগুলো প্রথম তাকিয়ে থাকে এবং লোকটা বস্তুটিকে যেখানে শেষ দেখেছিল সেই জায়গার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে, এখানে নির্দেশনা থাকে যে এপরা আশা করেছিল লোকটি বিশ্বাস করুক বস্তুটি ঐখানেই লুকিয়ে আছে। তাদের ফলাফলে এইগুলো একইভাবে দুই বছরের নিচে মানব শিশুদের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও প্রতিয়মান হয়।“এটাই প্রথম মানুষহীন প্রাণীদের জন্য একটি ‘মিথ্যা বা ভুল বিশ্বাস’ পরীক্ষা করা হয়েছে” বলছেন ক্রিস্টোফার ক্রুপেনি।
এই ফাইন্ডিংগুলো নির্দেশ দেয় এই সক্ষমতা শুধু মানুষের মধ্যেই অনন্য নয়, কিন্তু এই সক্ষমতা প্রাইমেট ফ্যামিলি ট্রি যখন শিম্পাঞ্জি, বনবো, ওরাংওটাং এবং মানুষের সবর্শেষ সাধারন পূর্বপুরুষদের কম পক্ষে ১৩ থেকে ১৮ মিলিয়ন বছর ধরেই বিদ্যমান।
ক্রুপেনি বলছিলেন “যদি ভবিষৎ এক্সপেরিমেন্ট গুলো এইসকল ফাইন্ডিং গুলো নিশ্চিত করে, তারা পুনরায় বিজ্ঞানীদের গভীরভাবে ভাবাবে কিভাবে এপগুলো একে অপরের বিষয় গুলো বোঝে”।
তথ্যসূত্রঃ
http://science.sciencemag.org/content/354/6308/110
http://phys.org/news/2016-10-apes.html
https://www.theguardian.com/science/2016/oct/06/apes-can-guess-what-others-are-thinking-just-like-humans
Leave a Reply