“শ্রোডিংগারস ক্যাট” বা শ্রোডিংগারের বেড়াল সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত কোয়ান্টাম মেকানিকাল আইডিয়া। কিন্তু এর পেছনের বিজ্ঞান সত্যিকারের বাস্তব এক্সপেরিমেন্টেও ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন মলিক্যুল বা অণুর বিস্তারিত আচরণ জানার ক্ষেত্রে।
SLAC ন্যাশনাল এক্সিলারেটর ল্যাবরেটরি এর গবেষকগণ আয়োডিন অণুকে একই সাথে দুটো অবস্থা- এক্সাইটেড এবং আনএক্সাইটেড অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন, যা শ্রোডিংগারের “ক্যাট স্টেট” এর মত ব্যাপারকে নির্দেশ করছে। এবং সেই সাথে তারা মলিক্যুল বা অণুগুলো কিভাবে আচরণ করে তা স্টাডি করার জন্য লিনাক কোয়ারেন্ট লাইট সোর্স (LCLS) এর এক্সরে ব্যবহার করেছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন অণু থেকে ডেটা কালেক্ট করে গবেষকগণ একটি মুভি বা চলচ্চিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যা কোয়ান্টাম জগতে কি ঘটে তা দেখায়।
LCLS হল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এক্সরে, যা ব্যবহার করে গবেষকগণ প্রচুর পরিমাণে তথ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এর দ্বারা গবেষকগণ ০.০৩ ন্যানোমিটার রেঞ্জের ক্ষুদ্র বস্তুর (প্রায় হিলিয়াম পরমাণুর আকার) খুটিনাটি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন মাত্র এক সেকেন্ডের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগেরও ৩০ মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের পার্থক্যে।
গবেষণার লেখক এবং SLAC এর প্রফেসর ফিল বাকসবম বলেন, “আমাদের এই পদ্ধতিটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ফান্ডামেন্টাল বলা যায়। তাই আমরা এটাকে অন্যান্য ক্ষুদ্র মোলিক্যুলার সিস্টেমেও ব্যবহার করতে চাই। এর মধ্যে দৃষ্টির সাথে জড়িত সিস্টেম, ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ, ইউভি ড্যামেজ থেকে ডিএনএ-কে রক্ষা করা এবং জীবন্ত বস্তুর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনগুলোও থাকবে”।
arXiv তে এই গবেষণাটি পাওয়া যাবে, আর এটি ফিজিকাল রিভিউ লেটারস জার্নালে প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে। দলটি দুটো আয়োডিন এটম বা পরমাণু নিয়ে তৈরি ভাইব্রেটিং মলিক্যুলগুলো নিয়ে কাজ করেছে। এই মলিক্যুলগুলোকে ক্যাট স্টেটে ফেলা হয়, ঠিক শ্রডিংগারের বিখ্যাত থট এক্সপেরিমেন্টটির মত। তারা একই সাথে দুটো ভিন্ন অবস্থায় ছিল, এক্সাইটেড এবং আনএক্সাইটেড।
গবেষকগণ এদের দিকে এক্সরে নিক্ষেপ করেন এবং শক্তিশালী ফোটন একই সাথে এদের উভয় কনফিগারেশন বা অবস্থাতেই আঘাত করে। এর মাধ্যমে একটি এক্সরে হলোগ্রাম তৈরি হয় যা ছিল মোলিক্যুল বা অণুর এক্সাইটেড অবস্থার একটি ডিটেইলড ইমেজ বা বিস্তারিত চিত্র। এই পদ্ধতির দ্বারা বিজ্ঞানীগণ “দেখতে” সক্ষম হন যে এটমিক লেভেল বা আণবিক পর্যায়ে ঠিক কি কি ঘটছে।
বাকসবম ব্যাখ্যা করেন, “আমরা একে ভাইব্রেট করতে দেখি। এখানে দুটো পরমাণু একবার একে অপরের কাছে আসতে থাকে, আবার একে অপরের থেকে দূরে যেতে থাকে। একই সময় আমরা দেখতে পারি পরমাণু দুটোর মধ্যে বন্ড বা বন্ধনের ভাঙ্গন ঘটছে, এবং পরমাণুগুলো একে অপরের থেকে মুক্ত হয়ে ভয়েড বা ফাঁকা জায়গায় সরে যাচ্ছে। আবার একই সাথে আমরা এও দেখি যে এখনও তারা সংযুক্ত আছে, কিন্তু পুনরায় যুক্ত হবার আগে এরা কিছুক্ষণের জন্য একটু দূরত্বে অবস্থান করে। সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা দেখতে পাই ভাইব্রেশন কমতে কমতে শেষ হয়ে যায় এবং মলিক্যুল বা অণু পুনরায় রেস্ট বা স্থির অবস্থায় চলে আসে। এই সমস্ত সাম্ভাব্য ঘটনা ঘটে মাত্র এক সেকেন্ডের কয়েক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে।”
“শ্রডিংগারের বেড়াল” হল একটি বিখ্যাত প্যারাডক্স যার জন্ম হয়েছিল অস্ট্রিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী আরউইন শ্রডিংগারের মাথায়। এটা কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর সাথে ম্যাক্রোস্কোপিক বা বড় জগতের সম্পর্ক সৃষ্টিকে চ্যালেঞ্জ করে। ধীরে ধীরে এই এক্সপেরিমেন্টটি সুপারপজিশনে থাকা পার্টিকেলদের জন্য একটি ঘরোয়া উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন কিনা তারা একই সাথে দুটো অবস্থাতেই থাকতে সক্ষম। ঠিক যেমনটা শ্রডিংগারের বিখ্যাত বেড়ালটিকে একই সাথে জীবিত এবং মৃত হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
তথ্যসূত্র:
- https://arxiv.org/abs/1608.03039v2
- https://www6.slac.stanford.edu/news/2016-09-21-schroedingers-cat-molecules-give-rise-exquisitely-detailed-movies.aspx
Leave a Reply