২০১৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী ডেভিড থউলেস, ডানকান হ্যালডেন এবং মাইকেল কোস্টারলিটজ। তারা নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তাদের টপোলজিকাল ফেজ ট্রানজিশন এবং ম্যাটারের টপোলজিকাল ফেজ এর তাত্ত্বিক আবিষ্কারের জন্য।
নোবেল বিজয়ীগণ তাদের কৃতকার্যের জন্য ৮ মিলিয়ন সুউডিশ ক্রোনর (৯৪০,০০০ ইউএস ডলার) পাবেন, সেই সাথে এরকম পুরষ্কার প্রাপ্তির জন্য সম্মান তো আছেই।
পুরষ্কারের অর্ধেক দেয়া হবে থউলেসকে। তিনি হলেন উনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একজন কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিসিস্ট। বাকি অর্ধেকটা প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ফিজিসিস্ট হালডেন এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ফিজিসিস্ট কোস্টারলিটজ ভাগাভাগি করে নেবেন। নোবেল কমিটি থেকে বিবৃতি দেয়া হয় যে তাদেরকে “এক্সোটিক ম্যাটারের গোপন রহস্যের উদ্ঘাটনের জন্য নোবেল পুরষ্কার দেয়া হচ্ছে”। এক্সোটিক ম্যাটার এক ধরণের হাইপোথেটিকাল এবং ভীষণ অদ্ভূত পার্টিকেল।
তাদের এই কাজটি থিওরেটিকাল ফিজিক্স এর ক্যাটাগরিতে পড়ে। নোবেল কমিটি থেকে বলা হয় তাদের এই কাজটি ছিল “খুব গভীর এবং খুব চমৎকার একটি কাজ”। একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশনে নোবেল প্রাইজ বিজয়ীগণকে “গণিতে চমৎকার দক্ষতা এবং পদার্থবিজ্ঞানে গভীর অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী” হিসেবে ভূষিত করা হয়। সেই সাথে আরো বলা হয় যে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্র তাদের এই আবিষ্কারের দ্বারা ভীষণভাবে উপকৃত হবে।
একটি অদ্ভূত অনুষ্ঠানে, তারা থিওরি অব টপোলজিকে একজন প্যানেল মেম্বারের মধ্যাহ্নভোজ ব্যবহার করে বোঝান। এক্ষেত্রে তারা ব্যাগেলস এবং প্রেটজেলকে (দুটি বিশেষ খাদ্যবস্তু) ব্যবহার করেন। তারা বলেন, নোবেল লরিয়েটগণ বিভিন্ন স্টেটস অব ম্যাটারের ইন্টারনাল স্ট্রাকচারের জটিলতাকে অন্য যেকোন ব্যক্তির চেয়ে ভালভাবে বর্ণনা করতে পারেন।
আমাদের চারপাশের জগৎকে বোঝার জন্য স্টেটস অব ম্যাটার বা পদার্থের অবস্থাগুলো সম্পর্কে বিষদ ধারণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটিং এর অনেক অংশই এরকম গুরুত্বপূর্ণ থিওরিগুলো ছাড়া হারিয়ে যাবে।
ফোনের মাধ্যমে প্রফেসর হালডেন সমাবিষ্ট শ্রোতা এবং বিজ্ঞানীদের বলেন, “সকলের মতই আমিও অনেক বিষ্মিত এবং কৃতজ্ঞ হয়েছি। কেবল এখনই এই অসাধারণ কাজটির উপর ভিত্তি করে অনেক অসাধারণ নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কৃত হচ্ছে”।
যখন তাকে তার এবং বাকি দুজন নোবেল প্রাইজ উইনারদের কাজের তাৎপর্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল, তিনি বললেন, “এই কাজটি আমাদের শিখিয়েছে যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে আমরা আগে যতটা অদ্ভূত বলে ভেবেছিলাম আসলে এটা তার চেয়েও অনেক অদ্ভূত আচরণ করে। আর এই আবিষ্কারটি আমাদেরকে বলে যে, সাম্ভাব্য বিষয়গুলোকে আবিষ্কার করার জন্য আমাদেরকে আরও অনেক দূর পর্যন্ত যেতে হবে”। তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে এই থিওরিটিকে খুব বিমূর্ত বলে মনে হচ্ছে। এই থিওরির মধ্যে অনেক উপাদানই আছে যেগুলোকে প্রথম দিকে কেউ সম্ভব বলে মনে করেন নি”।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ভীষণভাবে নির্ভর করে আমরা অদ্ভূত এবং ব্যতিক্রম স্টেটস অব ম্যাটার সম্পর্কে কি বুঝি তার উপর। আর অনেকেই বলে থাকেন যে, যদি এটা বাস্তবে ভালভাবে বোঝা যায় তাহলে এর দ্বারা টেকনোলজি বা প্রযুক্তিতে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভবন হবে যা আগে কেউই কখনও ভাবে নি। এই নোবেল প্রাইজটি তাই এই পদার্থবিজ্ঞানীদের সেই কাজের স্বীকৃতি দিল যা আমাদেরকে ভবিষ্যৎ রেনেসাঁর দিকে নিয়ে যাবে।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply