মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রেই সহিংসতা প্রবণ। এই প্রবণতা এসেছে আমাদের প্রাইমেট পূর্বসুরীদের থেকে। এমনি বলছে একটি নতুন গবেষণা। একটু আরাম করে ভাবুন “আহ!, দেখুন—আমরা আসলে আট দশটা সাধারণ প্রাণীর মতোই প্রাণী”। কিন্তু এসব বিষয়ে প্রাণীদের অবদান হিসেবে মানি না। এটা কি করে হয়?
প্রথম দিকের মানুষেরা ফ্যামিলি ট্রি’র উপর ভিত্তি করেই তারা তেমনি সহিংস ছিল, গবেষকদের প্রতিবেদন ২৮ সেম্পেটম্বর নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞানীরা প্রাণঘাতী সহিংসতার মাধ্যমে উদাহরণ দিয়ে বিবেচনা করেন—প্রাণীরা অন্য প্রজাতিদের হত্যা করে না, যেমন শিকার এবং শিকারী, কিন্তু হত্যাকান্ড ঘটায় প্রজাতিগুলোর নিজেদের মধ্যে, হতে পারে তারা স্ব-প্রজাতি ভক্ষণ প্রথা, শিশুদের হত্যা অথবা আক্রমনাত্মক।
তারা সাক্ষ্য হিসেবে এক হাজারেরও বেশী বিভিন্ন মামালদের যেমন ইদুর সদৃশ থেকে প্রাইমেট স্তন্যপায়ীদের থেকে চার মিলিয়ন ডেথ রেকর্ড এর মধ্যে ভয়ানক কার্যকলাপ দেখতে পান। সর্বোপরি তারা মানুষের হনন করার ইতিহাস সংকলিত করেন।
একটা প্যার্টান পরিষ্কারভাবে দেখায়, প্রাণঘাতী সহিংস স্তন্যপায়ীদের মধ্যে বিবর্তনের পরিক্রমায় বাড়তে থাকে। যেখানে মাত্র প্রায় ০.৩ শতাংশ অন্যান্য সকল স্তন্যপায়ীরা নিজেদের প্রজাতির সাথেই ঝগড়া করে মরে, সেখানে এই হার প্রাইমেটদের ক্ষেত্রে ৬ গুন বেশী বেশী অথবা প্রায় ২ শতাংশ। আদি মানুষদেরও একইভাবে ২ শতাংশ হার—এবং এখানে এটাই বুঝায় প্যালিওলিথিক মানুষ এর মধ্যে সহিংসতার সাক্ষ্য বহন করে।
মধ্যযুগে নির্দিষ্ট হত্যাকারী ছিল, ডেথ রেকর্ডের ১২ শতাংশ মানুষে মানুষে সহিংসতাই দায়ী। কিন্তু গত শতাব্দীর জন্য আমরা তুলনামূলক শান্তিতে ছিলাম, কারন এ সময় হত্যার হার কমে ১.৩৩ শতাংশে এসেছে সারা বিশ্বে। এবং বর্তমান অংশে পৃথিবীতে সহিংসতা খুবই কম, আমাদের মধ্যে নরহত্যার হার কমে ০.০১ শতাংশে এসেছে।
জোস মারিয়া গোমেজ, (একজন অথর, স্পেনের আরিড জোন্স এক্সপেরিমেন্টাল স্টেশনের একজন গবেষক) বলেন “মানুষ পরিবর্তিত হতে থাকে এবং তার নিজ গতিতে পরিবর্তিত হতে থাকবে। আমাদের জিনের মধ্যে কতটা সহিংস বা শান্তিপ্রিয় এটা কোন বিষয় নয়, আমরা আমাদের সামাজিক পরিবেশ পরিবর্তনের দ্বারা আন্ত-ব্যক্তিদের সহিংসতার মাত্রার মডিউল পরিবর্তন করতে পারি। আমার যদি চাই, আমরা আরো শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে পারি”।
প্রাণঘাতী লেমুর
এবার চলুন, আমাদের সাথে আমাদের নিকট আত্মীয় স্তন্যপায়ী গোষ্ঠীর মাঝে সহিংসতার মাত্রার তুলনা করা যাক।
অবশ্য এটা অনুমান করা সহজ নয় বন্য প্রানীরা কতটা একে অপরকে হত্যা করে, কিন্তু গোমেজ এবং তার দল প্রজাতিদের সবচেয়ে বেশী এবং কম হত্যাকারীদের একটা ভাল ওভারভিউ পেয়েছেন। হায়নারা অন্য হায়নাদের হাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮ শতাংশ। ইয়েলো মংগুজের মাঝে এই হার ১০ শতাংশ। এবং লেমুর, কিউট লেমুর বা বাগ-আইড লেমুর এর মাঝে এই হার ১৭ শতাংশ।
এই গবেষণায় দেখায় যে স্তন্যপায়ী প্রজাতিদের ৬০ শতাংশ আদৌ একে অপরকে হত্যা করতেই জানে না, যতদুর সম্ভব এটা অনেকেই দেখে থাকতে পারে। খুবই সামান্য বাদুর (১২০০ প্রজাতিরও বেশী আছে) একে অপরকে হত্যা করে। এবং দৃশত প্যানগোলিন্স এবং পোরকিউপাইন্স প্রজাতিরা তাদের সদস্যদের কাছাকাছি না থাকাই পছন্দ করে।
তিমিদের সাধারণভাবে ভাবা হয় তারা নিজেদের মধ্যে হত্যাকান্ড ঘটায় না। কিন্তু ম্যাসাচুসেস্টস ইউনিভার্সিটির ডলফিন বায়োলজিস্ট রিচার্ড কননর এর ডার্টমাউথ নোটে বলেন যে একটি ডলফিন শিশুহত্যার প্রয়াস থাকে সম্প্রতি এমনটাই বলা হয়েছে, এবং তিনি সাবধান করে দেন যে তিমিরা আমরা যা ভাবি তার চেয়েও সহিংস হয় ডলফিনদের কাছকাছি প্রজাতি হওয়ায়।
তিনি বলেন, ডলফিনদের মাঝের সহিংসতার ব্যাপারটা পূর্বে ভালভাবে জানা যায় নি। কারন ভিকটিমরা সাঁতরিয়ে দূরে গিয়ে নিজেকে অক্ষত রাখে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে রক্তক্ষরণে মারা যায়।
‘প্রায়শই যদিও মানুষ মনে করে প্রাণীরা অনেক বেশি সহিংস তাদের দেখে যতটা মনে হয়’ বলেন প্রাণী আচরণ বিশেষজ্ঞ মার্ক বেককফ, কলরাডো বোল্ডারের বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটরস প্রফেসর।
বেকফের লম্বা বিতর্ক আছে মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীরা প্রধানত শান্তিপূর্ন হয়, এবং তিনি নির্দেশ করেন যে শুধু এটাই আমাদের অতীত প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া গেছে সহিংসতার মুল শেকর, তাই পরার্থপরতা ও সহযোগীতার শেকড়ও থাকতে পারে। তিনি প্রায়াত এনথ্রোপোলজিস্ট রবার্ট সুসমানের কাজের উদৃতি দেন, যিনি এমন কিছু প্রাইমেট পেয়েছেন যেগুলো সবচেয়ে আক্রমণাত্মক স্তন্যপায়ী, তাদের প্রতিদিনের লড়াইয়ে অথবা অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এক শতাংশেরও কম ব্যয় করে।
সর্বোপরি অন্য প্রাণীদের চেলেঞ্জিং দ্বন্দ্বটাও ঝুকিপূর্ণ, এবং অনেক প্রানীদের জন্যই সুবিধা হচ্ছে মৃত্যুর ঝুঁকি অতিক্রম না করা। অত্যন্ত সামাজিক এবং আঞ্চলিক প্রাণীদের পরস্পরকে মেরে ফেলার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী, নতুন গবেষণায় এটা পাওয়া যায়। অনেক প্রাইমেট হত্যা করায় উপযুক্ত, কিন্তু তাদের সকলের প্রোফাইল এটা বলে না, যদিও বিশেষজ্ঞরা নির্দেশ করেন। যেমন, বনোবোরা শান্তিপ্রিয়, নারী-শাসিত সামাজিকতা মেনে চলে। অন্যদিকে শিম্পাঞ্জিরা অনেক বেশী সহিংস।
এই পার্থক্যগুলো প্রাইমেটদের মধ্যে বিষয় হয়ে দ্বারায়, বলেন রিচার্ড রেংহাম, একজন বায়োলজিক্যাল এন্থ্রপোলজিস্ট হার্ভাড এর, উনি পরিচিত মানব কল্যানের বিবর্তনের উপর গবেষণার জন্য। শিম্পাঞ্জি এবং অন্য প্রাইমেটগুলো একে অপরকে হত্যা করে, তাদের শিশুদের হত্যা করা খুবই সাধারাণ। কিন্তু মানুষের মধ্যে পার্থক্য-তারা প্রায়শই বয়স্কদের মধ্যে একে অপরকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, “এই ‘এডাল্ট-কিলিং ক্লাব’ খুবই সামান্য”, এর সাথে সামান্য সামাজিক এবং আঞ্চলিক মাংশখাদক আছে যেমন নেকড়ে, সিংহ এবং স্পটেড হায়নারা।
ফ্যামিলিট্রির উপর ভিত্তি করে মানুষ কিছুটা প্রাণঘাতী সহিংসতার মাত্রা আশা করে, মানুষের সহিংসতার বিষয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই, এমনটা বলা ভুল হবে, বলেন রেনহাম।
যখন হত্যা করার প্রবণতার কথা আসে, তিনি বলেন, মানুষ এক্ষেত্রে সত্যি ব্যতিক্রমী”।
http://phenomena.nationalgeographic.com/2010/06/21/chimpanzees-murder-for-land/
http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1111/mms.12248/abstract
http://news.nationalgeographic.com/2016/09/human-violence-evolution-animals-nature-science/
http://www.huffingtonpost.com/marc-bekoff/humanlike-violence-animals_b_2330808.html
https://www.eurekalert.org/pub_releases/2002-02/wuis-hmn021202.php
Leave a Reply