ফ্রান্সের মেডিটেরিয়ান ইনস্টিটিউট অব নিউরোবায়োলজি এর গবেষকদের একটি দল দাবী করছেন যে তারা মস্তিষ্কে স্মৃতির উৎপাদন পদ্ধতি পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা তাদের এই আবিষ্কারকে সায়েন্স জার্নালে রিপোর্ট করেছেন। রিপোর্ট করা গবেষণাপত্রে গবেষকগণ প্রকাশ করেছেন কিভাবে তারা ইঁদুরের ব্রেইন এক্টিভিটিকে ট্র্যাক করার জন্য ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন ব্যবহার করেছেন এবং এর মধ্য দিয়ে কিভাবে নিউরোনরা একে অপরের সাথে ইন্টারেক্ট বা পারষ্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে স্মৃতি বা মেমোরির একটি বিল্ডিং ব্লক তৈরি করে তা পর্যবেক্ষণ করেছেন।
তাদের গবেষণায়, দলটি ব্যাখ্যা করেছে যে এটা অনেক আগেই অনুমান করা হয়েছিল যে, আমাদের মস্তিষ্কের মেজর কগনিটিভ প্রোসেসগুলো (মস্তিষ্কে কোন কিছু বোঝার যে প্রক্রিয়াগুলো চলে তাদের মধ্যে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ) “নিউরোনাল এসেমব্লি” বা নিউরনের সমষ্টির সক্রিয়করণের উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে নিউরোনগুচ্ছ কোন নির্দিষ্ট স্মৃতি তৈরির জন্য একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে উত্তেজিত হয়। এই নতুন গবেষণাটি প্রমাণ দিচ্ছে যে এই গুচ্ছ বা এসেমব্লিগুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ হয়ে যায় যেগুলো নিজেদের মধ্যে পারষ্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি বড় চেইন তৈরি করে যে চেইনের মধ্যে মেমোরি বা স্মৃতিটি এনকোডেড হয়ে থাকে বা লেখা থাকে।
গবেষণাটি পরিচালনার জন্য, দলটি ইঁদুরটির মস্তিষ্কে ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন ইনজেক্ট করে যার ফলে নিউরোনের মেমব্রেন বা ঝিল্লীতে যখন ক্যালসিয়াম আয়ন প্রবাহিত হয় তখন নিউরোন গ্লো করে বা উজ্জ্বল হয়। আর গবেষকগণ দেখেন ইঁদুরগুলোকে যখন ট্রেডমিলে হাঁটানো হয় তখন তাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের নিউরোনের গুচ্ছগুলো একটি সিকোয়েন্সে উত্তেজিত হয়। মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলটি স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত। ইঁদুরগুলোর হিপ্পোক্যাম্পাসে এই নিউরোনগুলোর একটি সিকোয়েন্সে উত্তেজিত হবার ফলে তারা কত দূর পর্যন্ত দৌড়েছে এই ব্যাপারে তাদের মস্তিষ্কে একটি স্মৃতির সঞ্চার ঘটে।
যখন পরবর্তীতে ইঁদুরগুলো বিশ্রাম নেয়, তখন তাদের একাকিত্বের সময়ে এই স্মৃতিগুলো তাদের মস্তিষ্কে আবার রিপ্লে করেছিল বা পুনঃপ্রচারিত হয়েছিল। যাইহোক, এক্ষেত্রে তাদের দৌড়ের সম্পূর্ণ সিকোয়েন্সের বদলে এদের মস্তিষ্ক সেই এসেমব্লি এর আলাদা আলাদা অংশকে পুনঃপ্রচারিত করে। গবেষকগণ মনে করে এগুলো তাদের দৌড়েরই বিচ্ছিন্ন অংশ ছিল।
গবেষণাটির কো-অথর রোজা কোসার্ট বলেন, “আমরা স্মৃতির আলাদা আলাদা বিল্ডিং ব্লককে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি”। যদিও বাস্তবে এই গবেষণাটিকে প্রয়োগ করার পূর্বে এই বিষয়ে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন, স্মৃতির গঠনের রহস্যের সমাধান সম্ভব হলে একদিন আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়া এর কিছু প্রকরণের ডিজর্ডারের চিকিৎসার এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্র:
পড়লাম, আমাদের পরের জেনারেশন হয়তো এটা পাবে।
আপনাদের কথা জানতে পেয়ে খুব আনন্দ পেলাম। আবশ্যই যোগাযোগ রাখবো।