গাছের প্রাণ আছে, বাঙালী বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কার করেছিলেন। নিশ্চই এই আবিষ্কার আমাদের সকলকে অবাক করে দিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা আরো কিছু আবিষ্কার করেছেন যে তাদের কুঁড়ি বা পাতা খেকোদের প্রতিরোধ করে পারে এমন কিছু। এতে বলা হচ্ছে গাছেরা ঝড়ো বাতাসে বা কোন হরিণদের দ্বারা আক্রান্ত হলে সেটা তারা বুঝতে পারে এবং প্রতিরোধ করতে পারে।
উদ্ভিদ এবং তার শিকারীর উদ্ভব হয়েছে একই ধাপে একে অপরের হাত ধরে যখন থেকে মাটিতে মস আর ফার্ন প্রথম জন্ম হয়েছিল। কাঁটা দিয়ে নিজেদের আচ্ছাদিত করা এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন করা তাদের বেশ ভাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কিন্তু উদ্ভিদেরা তৃণভোজীদের সাথে দ্বন্দ্বে আমরা যা ভাবি তার চেয়েও আরো বেশি সক্রিয়। নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে কঁচি চারাগাছ গুলো আবহাওয়া অথবা ঝড়ে তাদের কুঁড়িগুলো ক্ষতি হয়েছে কি না অথবা হরিণে খেল কি না তা বলতে সক্ষম।
যেহেতু তরুন গাছগুলো অতটা বড় থাকে না, একটি ক্ষুধার্ত হরিণের ধ্বংসাত্মক ক্ষুধা এদের ধ্বংস করে, এবং অবশেষে এদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানিতে পড়ে যায়। কিন্তু চারাগাছগুলো যুদ্ধ ছাড়া নিজেদের হেরে যেতে দেয় না, যেমন প্রতিরোধ হিসেবে এগুলো তৃণভোজী প্রাণীদের এস্ট্রিজেন টানিন রাসায়নিক নিঃস্বরণ করে, যাতে কুঁড়ির স্বাদ খারাপ হয়ে যায় এবং তৃণভোজী প্রাণীরা খাওয়া বন্ধ করে। কিন্তু গাছের জানার প্রয়োজন হয় তার কুঁড়িদেরকে হরিণ কোন ক্ষতি করছে কি না, অথবা ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে কি না।
যখন কুঁড়িটা নষ্ট হয় তখন তারা এই রাসায়নিকটা ছাড়ে। প্রাণীদের মুখের লালা কুঁড়ির ক্ষতে লেগে থাকা উদ্ভিদ বুঝতে পারে। যখন বুঝতে পারে, এটা চারাটি প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে এবং স্যালিসাইলিক এসিড নামক একটি হরমোন উৎপাদন করে। এ কারণে গাছের সেই অংশে ট্যানিনস এর ঘনত্ব বাড়তে থাকে। শুধু তাই নয়, হরিণে খাওয়ায় হারানো কুড়িগুলো গাছকে আরো উদ্দীপ্ত করে আরো হরমোন জোগাতে আর তার ফলে কুড়িগুলো পরবর্তীতে আরো শক্তিশালীভাবে বড় হয়।
এই গবেষণার লিড অথর লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেটিনা ওহসে ব্যাখ্যা করেন “যদি একটি পাতা অথবা কুঁড়িকে ক্ষুদ্র হরিণ ক্ষতি করা ছাড়াই ভেঙ্গে যায়, গাছটি স্যালিসাইলক এসিড সংকেত হরমোন উৎপাতি হতে উদ্দীপ্ত করে না, ট্যানিক পদার্থও না, এর পরিবর্তে প্রধানত ক্ষত হওয়ার হরমোন নিঃসরণ করে।” এই গবেষনাটি ফাংশনাল ইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়।
প্রাণীদের দ্বারা উদ্ভিদের খাওয়ার কাজটির জটিলতা কিছু মানুষকে অবাক করে দেয়। পরোক্ষভাবে জীবেদের শিকার করার চেয়ে বরং উদ্ভিদেরা শিকারীদের সাথে যুদ্ধ করতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরুপ আরেকটা গবেষণায় পাওয়া গেছে যে উদ্ভিদেরা তাদের কেউ খেলে তা বুঝতে পারে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় রাসায়নিক ছড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, উদ্ভিদেরা যখন তাদের পোকামাকর দ্বারা খাওয়া বুঝতে পারে, তখন তারা আশপাশের উদ্ভিদদের সাবধান করে দেয় যাতে তাদের ক্ষতি না করে।
প্রাথমিকভাবে তারা এটাকে সম্পূর্ণ প্রতারণা হিসেবে খারিজ করে। প্রাণীরা যখন পাতা চিবুতে শুরু করে উদ্ভিদ তখনই উদ্বায়ী জৈব যৌগ বাতাসে নিঃসরণ করা শুরু করে। এরফলে আশপাশের অন্যান্য উদ্ভিদেরা এই উদ্বায়ী জৈব যৌগ যথাযথ সনাক্ত করতে পারে এবং তৃণভোজী ও অন্যান্য পাতাখেকো কীটেরা খেতে আসার আগেই বিস্বাদ রাসায়নিক যেমন ট্যানিনসকে তাদের পাতায় ছড়িয়ে দেয়।
তাই পরবর্তীতে বাইরে বেড়াতে গেলে বিষয়টা খেয়াল রাখবেন যে, আশেপাশে যে নীরিহ গাছপালা দেখা যায় এরা সেরকমটা মোটেই নয়। বরং এরা প্রাণীজগতের সাথে তিক্ত যুদ্ধবিগ্রহে লেগে আছে।
উৎস্য:
Leave a Reply