যে সকল এন্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান দাবি করে তারা ৯৯,৯৯% ব্যাক্টেরিয়াকে মারতে পারে, তাদের দিন সময় শেষ হয়ে আসছে। আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এ ধরণের এন্টিব্যাক্টেরিয়াল অথবা এন্টিমাইক্রোবিয়াল জাতীয় পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। এফডিএর বক্তব্য হচ্ছে স্বাস্থ্যকর বিষয়টা মিথ্যা এবং সেগুলো সাধারণ সাবান বা গরম পানির চেয়ে উত্তম কিছু নয়।
‘ভোক্তাগণ মনে করতে পারে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল জাতীয় কিছু দিয়ে ধোয়ার কাজ করলে জীবাণু ভালভাবে প্রতিরোধ করে, কিন্তু এটায় কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যে এগুলো সাধারণ সাবান ও পানির তুলনায় সেগুলো উত্তম,’ এফডিএ’র সেন্টার ফর ড্রাগ ইভালুয়েশন এবং রিসার্চের পরিচালক জানেট উডকক এভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা করেন। বস্তুত আরো কিছু তথ্য সুপারিশ করে যে, এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান গুলো দীর্ঘ সময় ব্যবহারে ভাল ফল না দিয়ে, বরং ক্ষতি করে।
এফডিএ ২০১৩ সালেই এ-জাতীয় পণ্য গুলো নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে, যেহেতু নির্মাতাদের দাবি প্রমাণ দেওয়ার জন্য তিন বছর সময় দিয়েছিল, তাই তারা এই তিন বছর তাদের পণ্য বাজারে সরবরাহ করে। বাস্তবে দেখা গেছে, যেগুলো প্রমাণ তারা দিয়েছে তা সন্তোষজনক ছিল না অথবা কোম্পানি গুলো তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করেছে। আগের উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাদের সুপারিশে আরোকিছু যোগ করেছে, যেমন কিছু রাসায়নিক নির্দিষ্ট পণ্যে ব্যবহার হয় তা আমাদের হরমোনকে ব্যাহত করে। যে কোন ধরণের এন্টিব্যক্টেরিয়াল সাবান যার একটি অথবা বিশেষ ১৯ টি রাসায়নিকের চেয়ে বেশী থাকে সেগুলোর ক্ষেত্রে এফডিএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
সেই রাসায়নিক গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ট্রিক্লোসান। ট্রিক্লোসান ডেভেলপড করা হয়েছে ১৯৬০ সালে হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য, পরবর্তীতে এই এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ১৯৮০ দশকে লিকুইট সাবানে যোগ করা হয় এবং বাজারে ছাড়া হয় যাতে ভোক্তারা বাসাবাড়িতে ব্যবহার করে। কিন্তু সম্প্রতি গবেষণাতে দীর্ঘ ট্রিক্লোসানের ব্যবহারে মানুষের অন্ত্রে মাইক্রোবিয়ম (মাইক্রোবিয়ম কাজ হচ্ছে জীবানু প্রতিরোধ করা) পরিবর্তে আমাদের স্বাস্থ্যে প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে । শুধু তাই নয়, যখন এটা ব্যাক্টেরিয়াকে সফলভাবে মারে হাত ধোয়ার সময়ের চেয়ে বেশী সময় এই অর্গানিজম গুলোর রায়সায়নিকের স্পর্শে থাকার প্রয়োজন হয়।
এন্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান যতটুকু উপকারী বলে চিন্তা করা হতো, তা সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া রাসায়নিকের সাবলেথাল (কম প্রাণনাশক) মাত্রায় দেখা যায়, যেমন সঠিক ঘনত্বে ব্যবহারে সচরাচর ব্যাক্টেরিয়া মারা যায়। এই অর্গানিজম গুলো প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ব্যবহারে বরং এর অবাঞ্চিত প্রভাব রয়েছে, যেহেতু এগুলো রাসায়নিকের নিম্ন ঘনত্ব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম এবং তখন এরা সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। এটাই আসল উদ্বেগের কারন।
এফডিএ বলেনি লোকজন হাত ধোয়া বন্ধ করে দিবে, শুধু বলেছে সাধারণ সাবান এবং বিশুদ্ধ পানি দিয়ে হাত ধুবে তাতেই ভোক্তারা অসুস্থ হওয়া থেকে মুক্ত হতে পারে এবং জীবানু বিস্তারও ঘটাবে না। অনেক তৈরিকারক কোম্পানি যেমন প্রক্টর এন্ড গ্যামবল, ইতোমধ্যে তাদের পণ্য হতে রাসায়নিকের ব্যবহার উন্নত করা শুরু করেছে, কিন্তু তাদের এই নিয়ম আগামি বছরের মধ্যে অবশ্যই শেষ করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply