অনেকেই বলেন হাইপারলুপ ধারণাটি নতুন কিছু নয়, ৭০ দশকের সাইন্স ফিকশন মুভিতে এমন কিছু একটা দেখানো হয়েছে। আসল কথা হচ্ছে সাইন্স ফিকশনের ধারণা গুলো বাস্তবে রুপায়িত করতে বেশ সময় নেয়, আবার সব সাইন্স ফিকশনের ধারণা গুলোকে যে বাস্তবে রুপ দেওয়া সম্ভব হয় তাও নয়। যেমন টাইম মেশিন।
হাইপারলুপ হচ্ছে দ্রুত, নিরাপদ, কার্যকরভাবে পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন একটি নতুন উপায়। এই পদ্ধতিটিতে ব্যবহার হবে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন চালিত যান যেটি যাত্রী অথবা মালামাল বহনে সক্ষম একটি টিউবের মধ্যে নিম্ন বায়ুচাপ পরিবেশে। স্বয়ংক্রিয় গাড়িটি ট্রাক থেকে সামান্য ভাসমান এবং পিচ্ছিল অবস্থায় চলবে, ফলে লম্বা দুরত্বে এর গতি এরোপ্লেনের চেয়ে দ্রুততর হবে এবং এর ফলে ঘর্ষণ, শব্দ, দেরি, বা আবহাওয়ার সমস্যা অথবা পাইলটের ভুলের কোন সমস্যা ঘটা এসব বিষয় আর থাকবে না। তাই এই হাইপারলুপ হচ্ছে পরিবহন ব্যবস্থার পরবর্তী প্রক্রিয়া ।
হাইপারলুপ সম্পর্কে প্রথম প্রস্তাব করেন এলন মাস্ক। প্রত্যেকের প্রিয় পরিবহন ব্যবস্থার ফিউচারিস্টিক প্রক্রিয়া এই হাইপারলুপ। WIRED এর তথ্য মতে সামনে ইংল্যান্ড এর বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এতে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই, এটা শুধু মাত্র প্রস্তাবনা। মনে রাখবেন প্রস্তাবনাটি এসেছে এলান জ্যামসের কাছ থেকে যিনি হাইপারলুপ ওয়ানের বিজনেস ডেভেল্পমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট। দুই কোম্পানির একটি কাজ করতেছে বায়ুশুন্য টিউব পদ্ধতিটি নিয়ে।
নতুন কোম্পানি যুক্ত হওয়ার আগে, তিনি যুক্তরায্যের আল্ট্রাস্পীডের জন্য প্রভাবিত করেছিলেন। যারা এক সময় চীন ও জাপানের অগ্রগামী মেগলেভ নেটওয়াক ইউকের প্রধান শহর গুলোর সংযুক্ত করতে এই একই প্রস্তাব করেছিলেন। এখন সে বলতেছে যে সে খুবই আগ্রহী ইউকে তে হাইপারলুপ আনতে সরকারের অফিসিয়াল এবং প্রাইভেট কর্মীদের সাথে গঠনমূলক আলোচনা অংশগ্রহণ করার পর।
যুক্তরাজ্য সরকার ‘ইন্নোভেট ইউকে‘ নামক এক সংগঠন স্পন্সর করেছিল ব্রিটিশ আইলসে হাইপারলুপ নির্মাণে নেতৃত্ব দিতে। প্রথম দিকে সম্ভবত হাইপারলুপ ট্রাকটি লন্ডন এবং ম্যানচেস্টার মধ্যে থাকবে। ভ্রমণ সময় ধরা হয়েছিল মাত্র ১৮ মিনিট। WIRED এর জেমস বলছিলেন, হাইপারলুপ শুধু এই দুই শহরের মধ্যেই যুক্ত থাকবে না, বড় বড় প্রতিটা শহরের সাথে লন্ডন যুক্ত হবে, যেমন লিভারপুল, ম্যানচেস্টার, লীডস।
ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ARUP পরামর্শ দিয়েছেন সম্প্রতি নেভাডা মরুভূমিতে সফল পরীক্ষার সময় হাই–রাইজ পাইলনের পরিবর্তে সুরঙ্গ নির্মান করতে ।
ARUP এর একজন প্রকৌশলি জেমস মাইলস বলেছেন হাইপারলুপ হবে ম্যাগলেভ প্রজেক্টের চেয়ে সাশ্রয়ী, কার্যকর, সর্বোপরি আরো সস্তায় হাই–স্পীড–২ পরিবর্তে। একটি বিতর্কিত হাই স্পীড রেইলওয়ে প্রজেক্ট যেটায় দেখা গেছে প্রচুর সময় লাগতেছে এবং বাজেট সমস্যা তো আছেই।
জেমস মাইলস মন্তব্য করেন ‘হাই–স্পীড টু দিয়ে আমরা লন্ডন ও স্টকের মধ্যে এক ঘন্টা ২৪ মিনিট থেকে প্রায় এক ঘন্টায় আসবে, কিন্তু হাইপারলুপ দিয়ে এটা প্রায় ১৪ মিনিট কম করতে পারবো ‘।
হাইপারলুপ ট্রান্সপোর্টেশন টেকনোলজি বা এইচটিটি, দ্বিতীয় লস–এঞ্জেলস নির্ভর গ্রুপটি হাইপারলুপ ওয়ান কে নিজের স্বার্থেই পিছনে ফেলার লক্ষ্যেই ইউকে সরকারের সাথে কথা বলেছিল। এক মুখপাত্র বলেছিল তারা ৬৭ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ইন্নোভেট ইউকের মাধ্যমে এই প্রজেক্টটা করবে যদি তারা বলে তারা, তাহলে এই প্রজেক্টটার কার্যকরীতা প্রদর্শন করবে। কিন্তু ইউকে সরকার এতে কোন মন্তব্য করেনি।
হাইপারলুপ ওয়ানের পরীক্ষা এই বছরেই মে মাসে হয়ে যায় বিশ্বের মৌলিক পড ভ্রমণ প্রর্দশন, তাদের লক্ষ্য বায়ুশুন্য সুরঙ্গে মানুষকে ভ্রমণ করাবে ১২২০ কিলোমিটার(৭৬০ মাইলস পার আওয়ার) প্রতি ঘন্টায়। এটা অর্জন করতে তাদের প্রচুর কাজ করতে হবে এখনো।
এখনো এই পরীক্ষা স্লোভাকিয়া এবং ফ্রান্স উভয়ের থেকে কিছু বিনিয়োগের উপর অনুসরণ করা হয়, এতে অন্য দুটো দেশ এই প্রযুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ইউকের সাথে হাইপারলুপের ভবিষৎ যা বাস্তবিকই প্রতিদন্দ্বি হবে সারা ইউরোপের এয়ার প্লেইন ভ্রমণের যার সম্ভাবনার রাজ্যকে পিছনে ফেলে না দেয়?
বস্তুত এটা নিশ্চিত ঘটতে যাচ্ছে, কিন্তু একজনের অনুমান যখন প্রথম পাবলিক হাইপারলুপ ব্যবসার জন্য খোলা হবে—অথবা যেখানে শুরুতেই এটাই হবে। হাইপারলুপ ওয়ান নিশ্চিতভাবে পূর্ণ প্রয়োগত সংস্করণ জন্য আশা করেন ২০২০ সালের মধ্যে।
প্রথম প্রস্তাবটি আসে ২০১৩ সালে এলন মাস্ক কাছ থেকে, তিনি হিসাব করেছে যে এই ভ্রমণে লস এঞ্জেলস থেকে সান ফান্সিস্কো সময় লাগবে মাত্র ৩৬ মিনিট। টেসলা নিয়ে ব্যস্ততা, মানুষকে চাঁদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, এবং তার ৫ সন্তানকে বড় করার মধ্য দিয়ে সে তার পরিকল্পণা নিয়ে অন্যদের তাড়িয়ে বেড়ান। অন্যদিকে স্ক্যান্ডেল, অগণিত ভুল দিয়ে শুরু, মামলা, নাটক, এবং অত্যন্ত পৃথক কোম্পানি তত্ত্বের মধ্যে থেকেও হাইপারলুপ ওয়ান এবং এইচটিটি তাদের ভবিষতের রাস্তা বেশ সুন্দর করে শুরু করেছেন এবং তা প্রত্যেকে এর বাস্তবতাও দেখতে চায়।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply