আমাদের গ্রহের অনেক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যেটার সাথে জীবনের উদ্ভবও জড়িত তা হল, পৃথিবী আশ্চর্যজনকভাবে কার্বনে ভরপুর। কেন পৃথিবীতে এই কার্বনের এত প্রাচুর্য তা রহস্যমণ্ডিত। কিন্তু গবেষকগণ মনে করছেন পৃথিবীতে কার্বনের আগমন ঘটার কারণ হতে পারে বুধ গ্রহের আকারের কোন বস্তুত সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ।
একেবারে খুব তরুন বা প্রাথমিক পৃথিবী গলিত দশায় ছিল। এর অর্থ হল কার্বন এবং সালফারের হাতে মাত্র দুটো অপশন ছিল। হয় এদেরকে স্পেসে বাষ্পীভূত হয়ে যেতে হবে, অথবা পৃথিবীর কেন্দ্র বা কোর অঞ্চলে প্রবেশ করে ভারী ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে। আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল এরকম এক্সট্রিম কনডিশনকে সিমুলেট করেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন যে পৃথিবীতে কার্বনের এরকম প্রাচুর্য থাকার জন্য এই এলিমেন্টগুলোর অবশ্যই পরবর্তী সময়ে পৃথিবীতে আসতে হবে।
গবেষণাটির প্রধান অথর, চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্স এর গুয়াংঝউ ইনস্টিটিউট অব জিওক্যামিস্ট্রির উয়ান লি বলেন “একটি জনপ্রিয় ধারণা হল কার্বন, সালফার, নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন এর মত ভোলেটাইল বা উদ্বায়ী মৌলিক পদার্থগুলো পৃথিবীর কোর এর গঠনের পরে পৃথিবীতে আসে। মেটেওরাইট বা ধূমকেতুর মাধ্যমে আসা এই এলিমেন্ট বা মৌলিক পদার্থগুলোর মধ্যে কোন একটি সৌরজগত তৈরির ১০০ মিলিয়ন বছরের পর পৃথিবীতে এসে থাকলে ম্যাগমার প্রচণ্ড তাপ এড়িয়ে যেতে পারবে এবং পৃথিবীকে আবৃত করতে পারবে যার ফলে সেই এলিমেন্টের প্রাচুর্যতার সৃষ্টি হবে”।
এই ধারণাটির মধ্যে একটি ভুল আছে। কোন জানা মেটেওরাইটেই এরকম সঠিক পরিমাণে কেমিকেল এবানডেন্স বা রাসায়নিক প্রাচুর্যতা নেই যা দিয়ে বর্তমান পৃথিবীর ক্রাস্ট এবং ম্যান্টেলে থাকা এলিমেন্ট রেশিওকে ব্যাখ্যা করতে পারে। একারনে দলটি বিভিন্ন কোর কম্পজিশন সিনারিও নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সিদ্ধান্ত নিল। পৃথিবীর কোরকে আয়রন এবং নিকেল দ্বারা গঠিত বলে মনে করা হয়। কিন্তু গবেষকগণ সাজেস্ট করছেন যে এখানে একই সাথে সালফার ও সিলিকনেরও প্রাচুর্য থাকতে পারে।
যখন দলটি এই সিনারিও বা দৃশ্যপটকে রিয়ালিস্টিক কন্ডিশন বা বাস্তব অবস্থায় সিমুলেট করলেন, তারা আবিষ্কার করলেন যে, কার্বন গ্রহের আউটার লেয়ার বা বহিস্তরে থেকে যায়। এরফলে তারা উপসংহার টানেন যে, একটি বিশাল কার্বনে পরিপূর্ণ বস্তুই পৃথিবীতে কার্বনের প্রাচুর্যকে ব্যাখ্যা করতে পারে।
গবেষণাটির কো-অথর রাজদীপ দাসগুপ্ত বলেন, “পৃথিবীর কার্বন-সালফার অনুপাত এবং কার্বনের প্রাচুর্যতাকে একটা ঘটনাই এক্সপ্লেইন করতে পারে। আর রা হল একটি এমব্রায়োনিক প্লানেট যার মধ্যে ইতিমধ্যেই সিলিকন কোর গঠিত হয়ে গিয়েছিল, তার সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটে এবং পৃথিবী তাকে শোষণ করে নেয়। যেহেতু এটা একটা ভারি বস্তু ছিল, এর ডাইনামিক্স এমনভাবে কাজ করে যাতে সেই গ্রহটি সরাসরি পৃথিবীর কোরে চলে যায়, এবং এর কার্বন প্রাচুর্যে থাকা ম্যান্টল পৃথিবীর ম্যান্টেলের সাথে মিশ্রিত হয়ে যায়।”
গবেষণাটি নেচার জিওফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যদিও গ্রহটির সম্পূর্ণ গঠন ব্যাখ্যা করতে পারে না, তবুও এটা হয়তো কিভাবে পৃথিবীতে কার্বনের আবির্ভাব ঘটে তার ব্যাখ্যা দিতে পারে।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply