কিছুদিন হলো কফি পান করার সামর্থ্য অর্জন করেছি। সামর্থ্য অর্জন এই ক্ষেত্রে যে চায়ের তুলনায় কফির দাম বেশ বেশী, আর এটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আয়ের সাথে সামঞ্জস্য না থাকলে কফি পান করা অনেকটা বেমানান। শখ করে হয়তো একদিন দুইদিন, কিন্ত প্রতিদিন নয়। আর এখন কিনা শুনছি কফি পানকারীদের জন্য খারাপ খবর। অবশ্য আমার মতো কফি পানকারীর কোন সমস্যা নয়। কারন আমি তো বুঝেই উঠতে পারিনি পৃথিবীর সেরা কফি কোনটা। যারা কফির স্বাদ নিয়ে গবেষণা করেন এবং নিয়মিত স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য প্রতিদিন কফি পান না করলে হয় না, তাদের জন্য সত্যি দুঃসংবাদ বটে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে যারা সচেতন তারা তো সচেতনই আছেনই, মনে হয় উদ্বেগটা তাদেরই বেশী। বেশী নয় শুধু যারা বন ধ্বংস করার প্রয়াশে আছেন সামান্য লাভের আশায় এবং যারা গাছ কেটে মরুকরণে সাহায্য করছেন।
যাই হোক যেটা বলতে চেয়েছি। হ্যা কফি পানকারীদের, উৎপাদনকারী ও কফি ব্যবসায় যারা নিয়োজিত আছেন, জলবায়ু পরিবর্তন কফির উপরে প্রভাব ফেলেছে এবং ভবিষৎ ফেলবে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু প্রতিষ্ঠান একটা নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কফি শিল্পে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে—এবং কফি-লাভার, কফি-চাষী, কফি উৎপাদনকারী সম্প্রদায়গুলো সর্বোপরি বড় বড় কফি সপ গুলোর জন্য এটা সত্যি একটা দুঃসংবাদ।
ফেয়ারট্রেড অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড কমিশন গঠন করেছে ‘এ ব্রিউইং স্টর্ম’ নামে একটি প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে যে উঞ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির ধারার পরিবর্তন হয় এর ফলে ব্যপকভাবে কফির উৎপাদন, কীট, রোগ, গুণাগুন, এবং স্বাদ বদলে যায়। এর ফলে ধারনা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে কফি উৎপাদন অর্ধেক কমে যাবে সারা বিশ্বে। ২০৮০ সালের মধ্যে ‘ওয়াইল্ড কফি’ বা বুনো এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা বেশী। ওয়াইল্ড কফি ফার্মড কফি আবা উৎপাদিত কফির জেনেটিক ডাইভার্সিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীর অনেক কফি হাব বা কফির কেন্দ্র গুলো মধ্য আমেরিকা এবং পূর্ব আফ্রিকার মধ্যে অবস্থিত এবং এগুলো পরিচিত Bean Belt হিসেবে। এই কফি হাব গুলো ইতোমধ্যে প্রভাবিত হচ্ছে উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাতের ধারার পরিবর্তনের কারনে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় তানজানিয়ায় গত ৫০ বছরে কফি উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে যা এই প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রতি হেক্টরে প্রতি হেক্টরে ৩৭ কিলোগ্রাম কফি উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান শিকার এরাবিক কফি বিন। এরাবিক কফি বিন উৎপন্ন হয় ক্রান্তীয় পার্বত্যাঞ্চলে। এই কফি পৃথিবীর ৭০ শতাংশ চাহিদা পুরণ করে এবং মূল্যায়ন হয় এর গুণাগুন, সুগন্ধ, এবং স্বাদ এর জন্য। তথাপি ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার কারনে এর উৎপাদন, ফ্লেবার এবং সুগন্ধে বেশ প্রভাব পড়েছে মারাত্মকভাবে। এর বিপরিতে রোবাস্টা যেটা ইন্সট্যান্ট কফিতে সচরাচর ব্যবহার হয়; এটা সুগন্ধ কম এবং উঞ্চ তাপমাত্রাও এর প্রভাব কম পড়ে। তারপরও সম্ভবত ভবিষতে এরও স্বাদ, গন্ধের অনেক পালটে যাবে।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply