জিকা ভাইরাস (Zika Virus) বর্তমানে বহুল আলোচিত বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করেছে। বাংলাদেশও এই সতর্কতার বাইরে নয়। জিকা ভাইরাস ছড়ায় এডিস (Aedes aegypti) প্রজাতির মশার মাধ্যমে। এই মশা, ডেঙ্গু ভাইরাসও ছড়ায়। জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমেও সুস্থ মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
যখন জিকা ভাইরাস বহনকারী মশা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হলো, তখন পরোক্ষভাবে কিছু মারাত্মক ক্ষতি দেখা দিল। সাউথ ক্যারলাইনায় এরোপ্লেইন ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিটনাশক ব্যবহার করায় স্থানীয়রা দেখলো প্রচুর মৌমাছি মারা গেছে। সারা এলাকাজুড়ে আবর্জনা ছড়িয়ে থাকার মতো ছড়িয়ে আছে এরা। ফলে মৌমাছি সংক্রান্ত ব্যাবসাগুলো সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জিকা ভাইরাস সংক্রান্ত ৪টি কেস ধরা পর সাউথ ক্যারোলাইনার ডোর্চেস্টার কাউন্টি মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই কারনে আকাশ হতে প্রেস্টিসাইড “naled” ব্যবহারের অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত হয়। সাধারণভাবে পেস্টিসাইড নিয়ন্ত্রণে ক্যামিক্যাল ব্যবহার আমেরিকায় এই প্রথম। এই কাউন্টি সিদ্ধান্ত নেয় প্লেন হতে ছড়িয়ে দেওয়ার যে এলাকার মানুষ প্রস্তুত নয় তাদের বাদ দিয়ে। মনে রাখতে হবে যে এই ক্যামিক্যালে মৌমাছি মারা যায় এবং জলজ পরিবেশ ও আরো অনেক পোকামাকরের বেশ ক্ষতি সাধিত করে।
সাধারণত, প্রশাসন রাত ৯ টা হতে সকাল ৫ টা পর্যন্ত সপ্তাহজুড়ে ট্রাক দিয়ে স্প্রে করে, যখন মৌমাছিরা রাত্রে মৌচাকে থাকে। পেস্টিসাইড স্প্রে করার প্লেন টি সকাল সাড়ে ৬ টা হতে সকাল সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত স্প্রে করে, এই সময় মৌমাছিরা বাইরে মধু সংগ্রহে বেড় হয়। ডোর্চেস্টার প্রসাসন অবগত যে কিছু মৌমাছি পালনকারী এই অঞ্চলে থাকে এবং রবিবারে স্প্রে করার জন্য তাদের মৌচাক গুলো হারিয়েছে। বিভাগীয় প্রশাসক জয়সন ওয়ার্ড মঙ্গলবার জানিয়েছে কুরিয়ার মারফত যে ‘এত মৌমাছি মারা যাওয়ায় বিষয়টাতে বেশ দুঃখিত’’। তিনি অফিসিয়াল বক্তব্য দিয়েছেন যে স্প্রেয়াররা মৌচাষীদের এমন ক্ষতি ভুলবসত করে ফেলেছে।
মৌমাছি পালনকারী জুনিটা স্ট্যানলির মতে তাদের সঠিকভাবে জানানো হয়নি যে তারা আগে হতে সাবধান হবে এবং মৌমাছিদের রক্ষা করবে। এর ফলে ৪৬ টা চৌচাক হতে ২.৩ মিলিয়ন মৌমাছি মারা গেল।তিনি দুঃখ করে বলেন ‘আমার মৌমাছিরা ধ্বংস হয়ে গেল’।
এটা স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, মৌচাষীদের মৌমাছিরা ধ্বংস হয়ে গেল। কিন্তু এর প্রভাবটা আরো অনেকদূর পর্যন্ত গড়াবে। মৌমাছিরা হাজার হাজার ইনসেক্ট প্রজাতির মধ্যে একটা যেটা গাছের পরাগায়নে এবং অর্থনৈতিকভাবে ফসলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি এমন কীটনাশকের কারনে মৌমাছিদের উপর এমন প্রভাব পড়ে, তাহলে অন্যান্য পোকামাকড়ের উপরেও একই প্রভাব পড়বে এবং এটা পুনরুদ্ধার করতেও বেশ লম্বা সময়ও লেগে যাবে।
জিকা ভাইরাস নিয়ে ফ্লোরিডার কর্তৃপক্ষ বেশ উদ্বেগ। কারন এটা ছড়িয়ে পড়তেছে জিকা বহনকারী মশার দ্বারা। এটার উপশম করার উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে দক্ষিণের অঞ্চলে ক্যাম্পেইন ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেজ্ঞরা সতর্ক করেছে যে মাথাগরম করে প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেয়ে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত।
জিকা ভাইরাসটি সম্প্রতি পুরো আমেরিকা মহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে।
তথ্যসূত্র:
- http://edition.cnn.com/2016/09/01/health/zika-spraying-honeybees/
- https://www.washingtonpost.com/news/morning-mix/wp/2016/09/01/like-its-been-nuked-millions-of-bees-dead-after-south-carolina-sprays-for-zika-mosquitoes/
- http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/760006/%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%B8%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0
Leave a Reply