সিংগাপুর হতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রীয় গাড়ির শহর

যতই দিন যাচ্ছে প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ে আমাদের আগ্রহ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই স্মার্টফোন নিয়ে আমাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে এবং স্মার্টফোন প্রযুক্তি দিন দিন আরো অগ্রসর হচ্ছে। আর এখন আগ্রহ অনেকেটাই চলে গেছে অটোনোমাস গাড়ির দিকে আর এটা অপারেট করা যায় একটা স্মার্টফোন দিয়েই।

সম্প্রতি টেসলার একটা অটোনমাস বা স্ব-চালিত বা সেলফ ড্রাইভিং গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটে। তবু আমরা বলছি মনুষ্য-চালিত গাড়ির তুলনায় স্ব-চালিত গাড়ি গুলো আরো নিরাপদ । আর এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি আমরা জানলাম সিংগাপুর হতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম স্ব-চালিত গাড়ির শহর। যেখানে নুটনমি নামে একটি টেক্সি কোম্পানি স্ব-চালিত টেক্সি দিয়ে সেবা দিতে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে যাত্রীরা বিনামূল্যে তাদের স্মার্টফোনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করে এই গাড়ি গুলোতে চড়ার সুযোগ লাভ করছে। আর এই গাড়ি গুলো আনছে নুটনমি নামে একটা কোম্পানি। শুরুতেই তাদের নিজেদের ব্রান্ডের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি থাকবে।

নুটনমি স্বয়ংক্রীয় টেক্সি নামিয়ে গুগল, টেসলা এবং ফেরাডের ভবিষৎ কে ভালমতই পিছনে ফেলে দিয়েছে। এমনকি তারা উবারকে পিছন ফেলেছে। উবারের নিজেদের স্বয়ংক্রিয় গাড়ী ছিল এবং খুবই উচ্চাকাংক্ষা ছিল তাদের নিজেদের নিয়ে যদিও এই টেক্সি কোম্পানিটি বলেছিল তারা পিটার্সবার্গে অগাস্টেই পেসেঞ্জার সার্ভিস শুরু করবে। পেসেঞ্জারসদের পাশাপাশি দুই জন উবার সদস্য থাকবে আলফা টেস্টিং ফেজে।

সিংগাপুরের নুটনমি স্বয়ংক্রীয়ভাবে চালিত রেনল্ট এবং মিতসুবিশি ইলেক্ট্রিক ট্রেক্সি গুলো হবে বিশ্বের প্রথম, যদিও এই গাড়িগুলোতে মানুষ্য চালক থাকবে। প্রতিটা টেক্সিতেই লিডার (লেজার রশ্মির সাহায্যে রাডারের সাথে সংযুক্ত থাকার যন্ত্র) আছে, লেজারের মাধ্যমে সার্ভে করার প্রযুক্তি আছে এবং তা দিয়ে দুরত্ব মাপা যায়, গাড়ির বোর্ডে কম্পিউটার দিয়ে আশপাশের যা যা আছে সেগুলোর নেভিগেট করা যায়।

শুরুতে কোম্পানিটির ৬ টা কার এবং বছর শেষে সেবার জন্য ১২ টি পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে।  তাদের আসল লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৮ সালের মধ্যে পুরো সার্ভিসটাই অটোনমাস করা।  এটা শুধু দেখার মতোই হাই-টেক হবে না, এটা রেগুলার টেক্সির তুলনায় নিরাপদ হবে। সিংগাপুরের অসম্ভব ব্যস্ত, লোকজনে গিজগিজ করা রাস্তার জ্যাম কমাবে। নুটনমি’র চিপ অপারেটিং অফিসার ডৌগ পার্কার দাবি করেন শেষমেষ ৬ লাখ কার রাস্তায় থাকবে।

পার্কার এসোসিয়েট প্রেস বলেন “যখন অনেক কার রাস্তায় নামানোর সক্ষমতা থাকবে, তখন অনেক সম্ভাবনা তৈরি হবে। আপনি ছোট ছোট রাস্তা তৈরি করতে পারবেন, আপনি অনেক ছোট ছোট গাড়ির পার্ক তৈরি করতে পারবেন,” । “আমার মনে হয় শহর উন্নত হওয়ার সাথে সাথে লোকজনের প্রতিক্রিয়াও এর সাথে পরিবর্তন হবে।“

বর্তমানে টেক্সিগুলো চলবে সাড়ে ৬ কিলোমিটার উপশহরের আবাসন ও বাণিজ্যিক এলাকায়। গাড়ি হুইলের পিছনে অবশ্যই একজন কর্মী থাকবে যদি কোন ইমার্জেন্সি প্রয়োজন পড়ে এবং গবেষকরা কম্পিউটার স্ক্রীনে এসব পর্যবেক্ষণ করবে। আপাতত প্যাসেঞ্জার উঠানো নামানো সীমিত এলাকায় হবে, এবং প্যাসেঞ্জারদের ব্যক্তিগতভাবে নুটনমি থেকে তাদের সেবা নেওয়ার জন্য অবশ্যই আমন্ত্রণ জানাবে।

এটা শুনতে বেশ খারাপ লাগছে, কিন্তু এর সব কিছুই নিরাপত্তার স্বার্থেই। স্ব-চালিত প্রযুক্তিবিদ্যা এখনো যথাযত নয়, এবং যদিও অনেক কিছুই স্বয়ংক্রিয় এবং হাইওয়ে, ছোট রাস্তায় কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই নেভিগেইট করতে পারে , এখনো অনেক পরীক্ষানিরিক্ষা ও ট্রায়ালের প্রয়োজন আছে –বিশেষ  করে যখন যাত্রীরা এই গাড়ি ভেতরে থাকবে।

ইতোমধ্যে এসোসিয়েট প্রেসের এক রিপোর্টার টেস্ট রাইডিং করছিল, হঠাৎ করে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ অশ্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয় এবং প্রশ্ন দেখা দেয়। অবশ্য সম্ভাব্য দুর্ঘটনা আটকানোর জন্য নিরাপত্তা চালক জোড়ে ব্রেকে পা দেয়। যেহেতু সব স্বয়ংক্রিয় চালনা গাড়ি গুলোর প্রোগ্রাম গুলো শেখার প্রয়োজন আছে, অনেক অন্তর্নিহিত গাণিতিক ভাষা আছে সেগুলো অবশ্য তাদের ধীরে ধীরে শিখে নিতে হবে। নুটনমি CEO কার্ল ল্যাগনেমা এসোসিয়েট প্রেসের দিকে মন্তব্য করেন যে আপনি এমনটা আশা করবেন না যে এই সময়ের মধ্যে, আমরা যথেষ্ট্য শিখেছি।

মানুষজন এখনো স্ব-চালিত গাড়িতে উঠা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে যখন স্টিয়ারিং হুইলে কেউ থাকবে না। একজন আগ্রহী রাইডার, ওলিভিয়া শিও গত সপ্তাহে স্বল্প পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ির প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে। তিনি উঠতে বেশ ভয় পান। যখন স্টিয়ারিং হুইলটা নিজে নিজেই ঘুড়তে থাকে, উনার কাছে মনে হয়েছে যেন কোন ভুত গাড়িটা চালাচ্ছে। যাত্রা শেষ তিনি অবশ্য বেশ স্বস্তিবোধ করেন।

তবে যাই বলুন ট্রায়াল হয়তো ঠিক আছ, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিবিদ্যার এটা চমৎকার প্রদর্শনী বটে। যদিও সামান্য কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি, ইন্টারনেট যোদ্ধারা মন্তব্য করে, এগুলো এখনো আংশিক স্বয়ংক্রিয় এবং সামনে এদের আরো অনেক দূর যেতে হবে। তারপরও বলতে হয় এই গাড়ি গুলো মানুষ-চালক গাড়ির চেয়ে বেশ নিরাপদ।

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.theverge.com/2016/8/25/12637822/self-driving-taxi-first-public-trial-singapore-nutonomy
  2. http://www.telegraph.co.uk/technology/2016/08/25/singapore-starts-trial-of-worlds-first-self-driving-taxis/

1 Trackback / Pingback

  1. আমেরিকায় উবারের চালকবিহীন টেক্সির যাত্রা শুরু – বিবর্তনপথ

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.