শিম্পাঞ্জিদের মধ্যেও পাওয়া গেছে মানুষের মত সহযোগীতার মনোভাব

একসারিতে ফ্রুট প্লেইট পেতে আগ্রহী শিম্পাঞ্জিরা, যারা শিখে গেছে মারামারি করে সময় নষ্ট করার তেমন প্রয়োজন নেই। ফ্রান্স দ্যা ওয়াল, ইয়ার্ক্স নেশনাল প্রাইমেট রিসার্চ সেন্টার

প্রাণীজগতে মানুষের নিকট আত্মীয় বা মানুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যারা রয়েছে, তারাও অনেকটা আমাদের মতই সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করতে চায় এবং সহযোগীতার মাধ্যমেই বিভিন্ন কাজ করার চেষ্টা করে।শিম্পাঞ্জিরাও এর ব্যতিক্রম নয়।বিজ্ঞানীদের ধারণা বিবর্তনের কারণে প্রাইমেটদের গ্রুপ টাস্ক সম্পন্ন করার পদ্ধতি মানুষের মতই হওয়ার কথা।

শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে সহযোগীতার প্রবনতা কিরূপ তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ‘Yerkes National Primate Research Center’ এর প্রখ্যাত প্রাইমেট গবেষক প্রফেসর ‘Frans de Waal’ ১১টি পূর্ণবয়স্ক শিম্পাঞ্জির একটি গ্রুপকে একত্রে করার মত একটি কাজ দিলেন।কাজটি ছিল এরকম, শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে একজন যদি পথের বাঁধা সরায় তাহলে আরেকজন খাবারের প্লেট নিতে পারবে। শুধুমাত্র একজনের ক্ষেত্রে এই কাজ করা সম্ভব না। পরবর্তীতে কাজের ধরনটি আরো একটু চেঞ্জ করে তৃতীয়, চতুর্থ শিম্পাঞ্জিদেরও কাজের সাথে যুক্ত করা হল। শুরুতে সবগুলো এপের জন্যই কাজটি নতুন। তাই কিভাবে কি করলে খাবার নাগালে পাওয়া যাবে তা বুঝতে এপদের একটু সময় লাগলো। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা ব্যাপারটি বুঝে ফেললো।

প্রোসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস  জার্নালের একটি রিপোর্টে বলা হল কিছু শিম্পাঞ্জি অন্যদের সহযোগীতা করার বদলে অন্যরা যখন কাজে ব্যস্ত ছিল তখন খাবারটি চুরি করে নিয়ে ফেললো এবং খাবারের শেয়ার কাউকে দিলো না। কিন্তু এই কাজের জন্য যখন শাস্তির ব্যবস্থা করা হল, তখন দেখা গেল এক হাজার বারের পরীক্ষায় খাবার চুরির ঘটনার চেয়ে সহযোগীতার মাধ্যমে খাবার নেওয়ার ঘটনা বেশি বার ঘটছে। যাই হোক এক ঘন্টা ধরে চলা এই পরীক্ষায় খাবারের প্লেট খালি হওয়ার সাথে সাথেই আবার প্লেটে খাবার দিয়ে দেয়া হচ্ছিল।ফলে শুরুতে দেখা গেল শিম্পাঞ্জিদের কিছু সংখ্যকের মধ্যে বেশি ফ্রুটস খাওয়ার জন্য মারামারি হয়ে গেল।

তবে সেই ঘটনা খুব বেশি ঘটে নি। ৯৪ বারের পরীক্ষায় ৩৬৫৬ সংখ্যক ফ্রুট কাড়াকাড়ি না করেই নেয়া হল। যদিও তখনও এপরা পরষ্পরকে ভালো করে চেনেনি এবং তাদের মধ্যে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে সামাজিক অবস্থান শক্ত করার ব্যাপার স্যাপার রয়েছে। পূর্বের পরীক্ষণে শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে সহযোগীতার চেয়ে প্রতিযোগীতা বেশি দেখা গিয়েছিল । কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা এই পরীক্ষায় তাদের মধ্যে গায়ের জোর বা প্রভাব খাটানোর কোনো সুযোগ ছিল না। চুরি বা চিট করার জন্য যদি শাস্তির ব্যবস্থা না থাকে তাহলে চুরি করার ঘটনাই বেশি বার ঘটবে এটা নতুন কিছু নয়। এই পরীক্ষায় দেখা গেল যারা নিজের ভাগের কাজ না করেই খাবার চুরি করার ধান্দায় ছিল তাদেরকে বেশ কয়েকভাবে মোকাবিলা করা হল সেটা গর্জন করে বা আঘাত করার ভয় দেখিয়ে যাই হোক না কেন।

৮% ক্ষেত্রে তৃতীয় এপ মধ্যস্ততার মাধ্যমে বিষয়টা সমাধানের চেষ্টা করলো। তবে অন্য সব ঘটনার চেয়েও এই পরীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল পার্টনার বাছাই করা। একবার যখন তারা টিমে কাজ করে ঠিক মত খাবার সংগ্রহ করতে পারলো , তখন সহযোগীতাই হয়ে গেল অন্য শিম্পাঞ্জির কাছে নিজের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর একমাত্র উপায় এবং যারা চুরি করেছিল তখন তারা বিপদে পড়লো কারণ কেউ তাদের পার্টনার হিসেবে নিতে চাইলো না।

যদিও শুরুতে এই পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল অংশগ্রহণকারী শিম্পাঞ্জিরা সুযোগ পেলেই ফল ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছিল। কিন্তু তারা শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে সহযোগীতা করাটাই বরং বেশি ভাল। দেখা যায় গবেষণার দ্বিতীয়ার্ধে আর কেউই কোন রকম চিটিং করল না।

এই ফলাফলটি বিজ্ঞানের পূর্বের একটি ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। ধারণাটি হল প্রাণীজগতে মানুষের সহযোগীতা একটি বড় ধরণের ব্যতিক্রম। কিন্তু এখন এভিডেন্স দেখাচ্ছে কিভাবে অন্যান্য প্রজাতিও খুব সরল বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে নিজেদের সুবিধার জন্য একে অপরকে সহযোগীতা করে।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.pnas.org/cgi/doi/10.1073/pnas.1611826113
  2. https://www.ted.com/speakers/frans_de_waal
About rashmin007 1 Article
natural selection crucial brutal but yet the actual way of evolution cause nothing was ever planned

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.