কিভাবে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল তা আমাদের সময়ের সবচেয়ে বিতর্কিত একটি প্রশ্ন এবং সৌরজগতকে বুঝতে পারার জন্য দারুণ একটা উপায়ও বটে।এই ক্ষেত্রে,ধূমকেতু খুবই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু মহাশূন্যচারীরা এখনও নিশ্চিত হতে পা্রেননি যে,ধুমকেতুগুলো কি পূর্ববর্তী সৌরজগতের অবিশিষ্টাংশ নাকি পরবর্তীকালে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট খন্ডিতাংশ।তবে এইক্ষেত্রে এস্ট্রনমি এবং এস্ট্রফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষনা হতে আমরা খুব নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, এটা পূর্ববর্তী প্রথম দিকের সৌরজগতের। জেট প্রপুলেশন ল্যাবরোটরির বিয়র্ন ডেভিডসন এই গবেষণাটির পরিচালক। তিনি বলেন, “সৌরজগতের উপাদানের বস্তুগুলো মূলত ধূমকেতু এবং ট্রান্স-নেপচুনিয়ান(TNOS)বস্তু যা নেপচুনের বাইরে সৃষ্টি হয়েছিল”।
ESA এর রোজেটা স্পেসক্যাফটের ডাটা হতে জানা গেছে যে, 67P/Churyumov-Gerasimenko নামক ধূমকেতুটি অসংখ্য ছিদ্রবিশিষ্ট অন্য কথায় বলতে গেলে, এটিতে অসংখ্য ফাঁকা স্থান রয়েছে। যদি ধূমকেতুটি সংঘর্ষের মাধ্যমে গঠিত হয় তাহলে, এই সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট চাপ পদার্থগুলোকে কাছাকাছি থাকতে বাধ্য করবে। যার ফলে তাদের মধ্যবর্তী ছিদ্রগুলো হ্রাস পাবে।
ডেভিসনের গবেষণাটি সাজেস্ট করে যে, ট্রান্স নেপচুনিয়ান অবজেক্ট বা TNOs সৌরজগতের প্রথম মিলিয়ন বছর আগেই গঠিত হয়েছে,পরবর্তী ৪০০ মিলিয়ন বছর ধরে ক্রমশ পদার্থগুলো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। তারপর ঠাণ্ডা পরিবেশে এই ট্রান্স নেপচুনিয়ান অবজেক্ট এর অবশেষ থেকে সৃষ্টি হয়েছে ধূমকেতুর। তারা ধীরে ধীরে বিভিন্ন মেটারিয়াল জড়ো করতে থাকে এবং এর ফলে উচ্চমাত্রার ছিদ্রযুক্ত এবং ঘন বস্তুর আবির্ভাব ঘটে যা আমরা আজ দেখতে পাই। আর এটা করার সময় তারা নেবুলা থেকেও কিছু পুরনো মেটারিয়াল সংগ্রহ করেছিল।
ডেভিডসন বলেন, “ধূমকেতুগুলোর বৈশিষ্ট্য দেখে বোঝা গেছে যে এগুলো বিভিন্ন TNOs এর সংঘর্ষের কারণে সৃষ্টি হয় নি। বরং এর আবির্ভাব ঘটেছে TNOs এর হাত ধরে অনেক ধীরে ধীরে, যেই TNOs ৪.৫ বিলিয়ন বছর সময় ধরে অবিকৃত অবস্থায় টিকে ছিল”।
এই গবেষনাটি এইজন্য গুরুত্বপূর্ন যে, এটা আমাদের পূর্ববর্তী সৌরজগতে 67P এর মতো ধুমকেতু সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে।
পৃথিবীতে পানির উৎস হিসেবে ধুমকেতুর অবদান থাকতে পারে বলে মনে করা হত। যাইহোক,রোসেটা খুঁজে পান যে, 67P হতে প্রাপ্ত পানি পৃথিবীর পানি হতে আলাদা ছিল। কিছু থিওরি সাজেস্ট করে যে হয়তো বা গ্রহাণু থেকে আমাদের সাগর এবং মহাসাগরগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি 67P হতে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান পাওয়া গেছে। যা এমন ধারণা প্রদান করে যে, হয়তো ধুমকেতুগুলোই পৃথিবীতে প্রানের সঞ্চার করেছে।
ESA Rosetta Project এর বিজ্ঞানী ম্যাট টেইলর বলেন “সৌরজগতে ধুমকেতুগুলো সত্যিই রহস্যময়”।“এগুলো আমাদেরকে,পূর্বে কিভাবে গ্রহ গঠিত হয়েছিল এবং যে গ্রহগুলো আমরা এখন দেখতে পাই সেগুলো কিভাবে সৌরজগতের সাথে সম্পর্কিত এই ব্যাপারে আমাদের অনুপম অন্তদৃষ্টি প্রদান করে”।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply