দুর্ঘটনার পর অটোনোমাস গাড়ির উপর আস্থার প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে

গত একযুগেরও বেশী সময় ধরে আমরা স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রযুক্তির বিষয় নিয়ে অবগত। মাইক্রোপ্রসর, মেমরি চিপস, সেন্সর এর কার্যক্ষমতা স্বয়ংক্রিয় চালিত গাড়িগুলিতে ব্যবহার বেশ বেড়েছে, সেই অনুযায়ী এর যন্ত্রাংশের দাম কমছে দিন দিন। নেভিগেশন এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সফটওয়ার গুলো আরো বেশী উন্নত করা হয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতি আগের তুলনায় যতই উন্নত হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির উন্নতি আরো বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এই শিল্প উদ্যোগতারা আশাবাদী, আশাবাদী প্রযুক্তির একাডেমিক শিক্ষা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আরো সাফল্য আনতে।

সাফল্য যে হচ্ছে সেটা বাস্তবেও আমরা দেখতে পাচ্ছি। ১৫০ মাইলের মোজাভ মরুভূমিতে ২০০৪ সালে ১০ মেইল স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশনে DARPA প্রতিটা গাড়ির গ্রান্ড চ্যালেঞ্জ শেষ করে। ১৯ মাস পর পাঁচটি গাড়ি কার্যক্ষমতার শীর্ষে ছিল। ২০০৭ সালে DARPA এর ৬ জনের একটি দল আরো বেশী কঠিণ পরীক্ষার জন্য সুপারিশ করে ক্যালোফোর্নিয়ার গাড়িচালনা আইন মেনে। এ সময় তারা শহরে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির নেভিগেশন এবং মানব-চালিত গাড়ির অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় বিষয় গুলো টেস্টের জন্য যুক্ত করে।

পরবর্তীতে গুগল স্বয়ংক্রিয় গাড়ির দক্ষতা বাড়াতে গ্রান্ড চ্যালেঞ্জ দল হতে তাদের টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেয়। বড় বড় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি গুলো যেমন আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপানের কোম্পানি গুলো প্যাসেঞ্জারদের জন্য স্বয়ংক্রিয় গাড়ির অগ্রগতিতে উঠে পরে লাগে। তবে দেখার বিষয় ছিল টেসলা কারের নির্মাতারা শুরু হতেই দাবী করে আসছিল যে তাদের গাড়ির সেন্সর এবং সফটওয়ার সজ্জিত হাইওয়েতে চালনা সহ আরো বেশ কিছু মোডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানো যাবে। স্বয়ংক্রিয় চালিত গাড়ি আমেরিকার রাস্তায় ইতোমধ্যে এক মিলিয়েরও বেশী মাইলস চলেছে।

যাহোক, সম্প্রতি একটি টেসলা মডেল এস এর কার মারাত্মকভাবে দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। কারটি অটোপাইলট মুডে চলছিল এবং অনেকেই বলতেছে নতুন প্রযুক্তি এই দুর্ঘটনার কারন। যেহেতু আমরা আগেও দেখেছি যখন কোন নতুন প্রযুক্তি বা উদ্ভাবন ব্যবহারকারীদের মৃত্যুর কারন হয় সেই প্রযুক্তির প্রতি পরবর্তীতে সাধারণের আগ্রহ কমে যায়—কিন্তু অনেক সময় নতুন প্রযুক্তিগত সমস্যা প্রযুক্তিকে আরো সামনে নিয়ে যায়।

মৃত্যু প্রযুক্তি উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ হতে পারে

দুর্ঘটনায় কবলিত হলে নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এর ফলাফল বিভিন্ন রকম হয়। সাধারণ জনগণ বেশ আশাবাদী স্পেস ভ্রমণ নিয়ে যখন স্পেসশীপওয়ান ২০০৪ সালের জুনে সাফল্যলাভের পর। কিন্তু এই আশাবাদ দ্রুত ফিকে হয় যায় যখন ২০১৪ সালে ভার্জিনিয়ার স্পেসশীপ টু ক্রাস করে। এখানে অবশ্য কো-পাইলট মারা যায়। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল যে, টেসলা দুর্ঘটনা ও ভার্জিনিয়া গ্যালাটিক স্পেসশীপ টু দুর্ঘটনা দুইটা আলাদা। এখানে দুই ধরনের সামাজিক লোকেদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত। স্পেস-টুরিজম থ্রিলিং ভ্রমনে খুবই কম সংখ্যক অংশগ্রহণ করতে পারে। এখানে ব্যয় প্রচুর বলে সাধারণত ধনীদেরই দখলে এটা। তাই যখন এখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে, এখানের আগ্রহটা কমে যাবে তাতে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই। (গত জুলাইয়ের শেষে, কোম্পানিটি টেস্ট ফ্লাইট চালানোর জন্য লাইসেন্স পেয়েছে, তবে ২০১৭ সালের আগে প্যাসেঞ্জার বহন করতে পারবে না)।

অপরপক্ষে বলা যায় স্বয়ংক্রিয় গাড়ি মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের প্রাণ বাচায় প্রতিবছর শুধু আমেরিকাতেই। ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রান্সপোর্ট সেফটি এডমিনিস্ট্রেশন (NHTSA) ২০১৫ সালের ড্রাইভারের কারনে আমেরিকাতেই ৩৫ হাজারের উপর বলা যায় ৯৪ শতাংশ মৃত্যু হয়েছিল বলে অনুমান করে। এত নিষ্ঠুর মৃত্যু টেসলা অটোপাইলট গাড়ির দুর্ঘটনায় কিছুই না। ফলে অটোপাইল সম্পন্ন গাড়ির প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ কমার কোনো কারন নেই।

 কার্যকর শিক্ষা দ্রুত উন্নয়নের সহায়ক

আসল ঘটনা হচ্ছে টেসলা চালকের মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে মূলত গাড়িটির গতি বৃদ্ধির কারনে। NHTS এডমিনিস্ট্রেটর মার্ক রোজকিন্ড জুলাই মাসে অটোমেটেড ভিহিকল সিম্পোজিয়াম ২০১৬ উল্লেখ করেছেন এভাবে “যখন কোন ভুল ধরা পরে এ ধরণের উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন অটোমেটেড গাড়ি গুলোয়, ধরে নিতে হবে এখানে কিছু একটা প্রোগ্রাম করা হয়নি, এর পর ডাটা নিয়ে তা বিশ্লেষণ করে সেখান থেকে শিখতে হবে, এটা সব অটোমেটেড গাড়ির ক্ষেত্রেই। নতুন চালকেরা অবশ্যই পূর্বের চালকেরা যা ভুল করেছে সেখান থেকে শিখতে হবে”

প্রথম দিকে অটোমোবাইলে এয়ারব্যাগ দেওয়া হয় ১৯৯০ সালের দিকে। এয়ারব্যাগ শুরু হতেই অনেক প্রাণ বাচিয়েছে। যাইহোক, প্যাসেঞ্জার সাইড ব্যাগ অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়েছে, বিশেষ করে রেয়ার ফেসিং শিশুর আসনের যেটাকে edge cases বলা হয় সেটার নিরাপত্তা প্রযুক্তিগত সমস্যার কারন হতে পারে।

নিয়ন্ত্রকদের এবং কার নির্মাতাদের চটপট জবাব ছিল তারা প্যাসেঞ্জারের ওজন সেন্সর লাগিয়েছে এবং যদি প্যাসেঞ্জার খুবই হালকা হয় তাহলে এর এয়ারবেগের সিস্টেমটা অকেজো হয়। পাবলিক সার্ভিসের ঘোষণায় সতর্কবার্তায় নিশ্চিত করেছিল যে শিশুদের সেই রেয়ার আসনে বসালে সিটবেল বাধতে অথবা তাদের নিরাপদ আসনে বসিয়ে রাখতে হবে। এই ঘোষণার পর এয়ারব্যাগের কারনে  ১৯৯৬ হতে ২০০১ সালে ৯৬ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর হার কমে গেছে। যদিও এয়ারব্যাগ সম্বলিত গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে ঐ ৫ টা ফ্যাক্টরের অনুসরণ না করায় ৪ শতাংশ মৃত্যু ঘটে।

টেসলা বিপর্যয়ের প্রভাবটাও ঐ একই। আপাত কারন হচ্ছে টেসলাটি উজ্জ্বল আকাশের কারনে সাদা ট্রাকটিকে সনাক্ত করতে পারেনি এবং চালক ও গাড়ি দুইটা সময়মত বুঝে উঠতে পারেনি। দুর্ঘটনাটা ঘটেছে আগের এয়ারব্যাগ গুলোর মতোই, কার ক্রাসটি নিরাপত্তা উন্নত করতে সিস্টেম ডিজাইনের অনিচ্ছাকৃতর ফল বলেই এটা ঘটেছে।

যেহেতু দুর্ঘটনার সব কিছু বেরিয়ে এসেছে, নির্মাতারা পুনরায় সিস্টেমকে প্রয়োজনীয়ভাবে ডিজাইন করতে পারে। প্রযুক্তি ব্যাবহারকারীরা যত কম সন্তুষ্ট হবে এবং নির্মাতাদের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আরো বেশী জানা যাবে।

আস্থার প্রভাব

টেসলা ক্রাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে যে এইসব সিস্টেম গুলোর উপর লোকজনের আস্থা কমে যাবে। “টেসলা দুর্ঘটনাটি এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আস্থার উপাদানটি অত্যন্ত ঠুনকো” J.D. Power ফার্মের হিউম্যান-মেশিন ইন্টারফেস এর বাজার গবেষক Kristin Kolodge অটোমেটেড ভিহিকল সিম্পোজিয়ামে এভাবে মন্তব্য করেছেন ।

দুর্ঘটনায় এয়ারব্যাগ যাদের জীবন বাচিয়েছে এটা পারতপক্ষে সহজ। কিন্তু অটোনোমাস গাড়ির উপকার নির্ণয় করা খুবই কঠিন বেপোরোয়া গাড়ি চালানো, ড্রাংক এবং অন্যান্য অদক্ষ চালকের পরিবর্তে এবং বলা যায় এর ফলাফল এইযে অটোনোমাস গাড়ি দুর্ঘটনা কমিয়েছে।

তবুও, বেপোরয়া গাড়ি চালানো, ড্রাংক অবস্থায় চালানো, বিভ্রান্তকর অবস্থায় চালানো, অদক্ষতার সাথে, অতিরিক্ত স্পীডে এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে চালানোর মানে হচ্ছে দুর্ঘটনার প্রধান কারন, এবং অটোমেডেট গাড়ি দুর্ঘটনা ও হতাহত অনেক কমিয়েছে। বলা যায় সামনের বছর গুলো আরো অনেক কমাবে। ইউ এস এর ট্রান্সপোর্ট সেক্রেটারি এন্থনি ফক্স সম্প্রতি বলেছেন “ অটোমেটেড গাড়ি আসছে, আপনারা চান বা না চান।”

তথ্যসূত্র: 

  1. http://www.nhtsa.gov/people/injury/research/6thAnnualBUAReport/pages/Status.htm
  2. https://www.tesla.com/blog/tragic-loss
  3. https://cleantechnica.com/2016/03/15/tesla-autopilot-outdistances-google-cars/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.