কোন জায়গায় নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি থাকলে মনে হতে পারে, অধিক টেস্টোস্টোরেন এবং স্বল্পসংখ্যক নারী সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থায়ীত্ব বা স্ট্যাবিলিটি কমিয়ে দেবে। কিন্তু নতুন এক গবেষণা দেখাচ্ছে বিষয়টি ঠিক সেরকম নয়।
গবেষকেরা দেখিয়েছেন যে, আমেরিকার যেসব কাউন্টিগুলোয় নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি সাধারণত সেখানে বিয়ের মাত্রাও বেশী, বিয়ে বহির্ভুত সন্তানের জন্মও কম এবং সিংগেল নারীর সংখ্যাও কম। আর গবেষকদের মতে এগুলোই পরিবারের অধিক স্থিতিশীলতা বা ফ্যামিলি স্ট্যাবিলিটির লক্ষণ।
ইউনিভার্সিটি অব ইউটা এর এনথ্রোপলজি এর গবেষক এবং এই গবষণাটির লেখক রায়ান শাচট বলেন, “নিউমারিকাল এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী পুরুষের সংখ্যা বেশি থাকা অর্থ হল তাদের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে নারী না থাকা, তাই এক্ষেত্রে পুরুষদের কম বিয়ে করার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বাস্তবে মানব আচরণ বেশ ফ্লেক্সিবল বা নমনীয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে রেসপন্সিভ।”
বেশীরভাগ অপরাধ, বিশেষ করে সহিংস অপরাধগুলো পুরুষের দ্বারা সংঘঠিত হয়। উপরন্তু অনেক গবেষণায় ইঙ্গিত করেছে সিঙ্গেল পুরুষেরা সঙ্গীর সাথে থাকতে চায়, কারণ সম্পর্ক গঠন এবং সন্তান-সন্ততি সহিংস সহ অন্যান্য বিষয়ে ঝুকির প্রবণতা কমায়। সুতরাং এক্ষেতে আশা করাই যায় যে যেসব অঞ্চলে অধিক পরিমাণে সঙ্গীহীন পুরুষের সংখ্যা বেশি, অর্থাৎ নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি, সেসব এলাকায় ভায়োলেন্স বা সহিংসতার মাত্রাও অনেক বেশি হবে।
এশিয়ার দেশগুলোয় নারী শিশু হত্যা এবং সেক্স সিলেক্টিভ এবরশন এর চর্চা থাকার কারণে (বা লিঙ্গ ভিত্তিক গর্ভপাত অর্থাৎ গর্ভে কণ্যা ভ্রূণ থাকলে গর্ভপাত করা) সেখানকার নারী ও পুরুষ জনসংখ্যার অনুপাত যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়ে যায়। এটা ঘটার অনেক কারণই থাকে। কিন্তু ভয়ের বিষয় ছিল এটা যে এশিয়ার দেশগুলোতে এগুলোর ফলে পুরুষের সংখ্যা এত বেড়ে যাওয়ায় সেখানে ক্রাইম রেট এবং সোশ্যাল স্ট্যাবিলিটিকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাবে কিনা।
ডঃ রায়ান শাচট এবং ডঃ ক্যারেন ক্রেমার এই থিওরিটিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন প্লস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হওয়া একটি পেপারে। তারা দাবি করেন, যেখানে নারীর সংখ্যা কম , সেখানে বিষমকামী পুরুষদের স্থায়ী সম্পর্ক তৈরি করার সম্ভাবনা বেশী থাকে। আর এক্ষেত্রে সামাজিকভাবে অনভিপ্রেত কার্যকলাপ কমে যাওয়া উচিৎ। কারণ এই পরিস্থিতিতেই পুরুষেরা মনে করে যে ডেটিং মারকেটের জন্য তাদের দোষগুলো ভাল না। আর এই পরিবেশেই তারা আরও বেশি স্ট্যাবিলিটি বা স্থিতিশীলতা পছন্দ করে। অন্যদিকে যেখানে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশী, সেখানে পুরুষেরা মনে করে তাদের জন্য যথেষ্ট নারী আছে, আর তাই তাদের জীবনে এরকম স্থিতিশীলতার প্রয়োজন নেই। আর তাই এরকম অবস্থায় সমাজে পুরুষ কর্তৃক সহিংসতাও বৃদ্ধি পায়।
শাচট বলেন, “যদি সমাজে আপনার লিঙ্গের মানুষের পরিমাণ কম হয়, তাহলে আপনি আপনার পার্টনারের প্রতি বেশি ডিমান্ডিং হতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার পার্টনারকে নিজে পছন্দ করে ঠিক করতে পারবেন এবং আপনাদের সম্পর্কে আপনি যেরকমটা আশা করেন সেরকমটা সহজে পেতে পারবেন”।
শাচট একটি হাইপোথিসিজ দাঁড় করিয়েছেন, যেটা বলে সেক্স রেশিও বা যৌনানুপাত দীর্ঘসময়ের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষের আগ্রহকে পরিবর্তিত করে। তিনি গায়নার ৮টি গ্রামে ৩০০ জনের বেশি লোকের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। মাইগ্রেশনের কারণে এইসব গ্রামে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
তিনি রিপোর্ট করেন, গ্রামে নারী পুরুষের ভারসাম্যের উপর ভিত্তি করে পুরুষের আচরণ বিভিন্ন হয়। শাচট দেখেন তার এই হাইপোথিসিজ বৃহৎ পরিশরেও সত্য। লেখক আমেরিকার আদমশুমারির থেকে পাওয়া যৌনানুপাত বা নারী ও পুরুষের জনসংখ্যার অনুপাত এর সাথে মেরেইজ রেট এবং পরিবারের স্থিতিশীলতার তুলনা করেন। এক্ষেত্রেও তারা শাচটের গায়নায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে যে ফলাফল পেয়েছিলেন, ওই একই ফল পান।
গবেষকগণ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির ডেটা পৃথিবীর অন্য যেকোন অঞ্চলের আদমশুমারির ডেটা থেকে বেশি সঠিক। আর তাই তাদের গবেষণাও ভুল হবার কথা না। তবুও তাদের এই গবেষণাটিকে আরও ভাল ভাবে চেক করে দেখা হবে যে তারা কোন ভুল করেছেন কিনা। দারিদ্র্যের মত অনেক ব্যাপারই আছে যা একইসাথে সেক্স রেশিও এবং মেরেইজ রেট বা বৈবাহিক হারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তারা বলেছেন, তাদের এই প্যাটার্ন এক্সট্রিম রেশিও (অর্থাৎ একটি লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা যদি অন্য লিংগের সংখ্যার মানুষের চেয়ে অনেক বেশি হয়) এর ক্ষেত্রে খাটবে না।
তথ্যসূত্র:
- http://www.livescience.com/55892-how-gender-ratio-affects-marriage-rates.html
- http://www.iflscience.com/brain/men-more-likely-to-marry-when-there-are-fewer-women/all/
- http://journals.plos.org/plosone/article?id=10.1371/journal.pone.0160320
- http://abcnewsradioonline.com/health-news/study-places-with-more-men-have-higher-marriage-rates.html
Leave a Reply