এটা খুব ভালভাবেই প্রতিষ্ঠিত যে, এই গ্রহে মানুষের মস্তিষ্ক অন্য যেকোন স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়ে বড়। আর নতুন একটি গবেষণা সাজেস্ট করছে যে, অন্য মানুষদের বিচার করার জন্য আমাদের এই মস্তিষ্কটি এত বড় হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে।
বিখ্যাত সোশ্যাল ব্রেইন হাইপোথিসিজ অনুসারে, হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স বা মানব বুদ্ধিমত্তা বিবর্তিত হয়েছে জটিল সামাজিক গঠন বা কমপ্লেক্স সোশ্যাল স্ট্রাকচার এর সাথে সাথে। এর এভিডেন্স একটি পাওয়া যায় একটা ফ্যাক্ট থেকে। আমাদের সোশ্যাল ইন্টারেকশনের সাথে জড়িত বেশিরভাগ ব্রেইন রেজিওন থাকে সেরেব্রাল কর্টেক্সে। আমাদের সেরেব্রাল কর্টেক্স অন্যান্য প্রাণীদের সেরেব্রাল কর্টেক্স এর চেয়ে বড়।
হাইপোথিসাইজ করা হয় যে, যখন প্রাইমেটরা আরও বেশি জটিল সমাজ গঠন করতে থাকল, গ্রেটার সোশ্যাল কগনিশন বা অধিক সামাজিক পরিচিতির চাহিদা আমাদের বড় মস্তিষ্ক গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করল। যাই হোক, গবেষকগণ এতদিন পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারেন নি যে আমাদের সোশ্যাল ইন্টারেকশনের ঠিক কোন বিষয়টি সেরেব্রাল এক্সপ্যানশনের প্রয়োজন সৃষ্টি করেছিল।
সাইন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় গবেষকগণ “ইনডিরেক্ট রিসিপ্রোসিটি” এর আবির্ভাব নিয়ে অনুসন্ধান করেন। মানুষ কখনও কখনও তাদের নন-রিলেটিভ বা অনাত্মীয়দেরকে সাহায্য করে যদিও এক্ষেত্রে সাহায্যের সরাসরি প্রতিদানের কোন গ্যারান্টি থাকে না। এই ফেনমেননকে ইনডিরেক্ট রিসিপ্রোসিটি বলা হয়। গবেষণাটির লেখক প্রস্তাব করেন, মানুষের মাঝে এই ইনডিরেক্ট রিসিপ্রোসিটি বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে কেবল তাদের অনন্য ক্ষমতা “সোশ্যাল কমপারিজন” এর ফলেই। সোশ্যাল কমপারিজন বা সামাজিক বিচার বলতে সেই প্রক্রিয়াকে বোঝায় যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে আমরা আমাদের বিরুদ্ধে একজনের সোশ্যাল স্ট্যাটাস কিরকম তা দেখে তার সাথে কিরকম ব্যবহার করতে হবে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেই।
কম্পিউটার মডেলিং প্রোগ্রাম ব্যবহার করে, একটি দল একটি হাইপোথেটিকাল বা অনুকল্পিত সমাজ তৈরি করেন যেখানে বিভিন্ন মানুষের সোশ্যাল র্যাংকিং বিভিন্ন রকম। তারপর তারা সেখানে কয়েকবার “ডোনেশন গেম” চালনা করেন যেখানে প্রত্যেকেই র্যান্ডমলি অন্য কাউকে কিছু ডোনেশন দিতে হবে বলে নির্ধারিত হন। যাকে নির্ধারণ করা হয়েছে তার সোশ্যাল স্ট্যাটাস বা সামাজিক পদমর্যাদা এবং কিভাবে এরকম ডোনেশন এই স্ট্যাটাস বা পদমর্যাদাকে প্রভাবিত করবে তার উপর ভিত্তি করে গবেষকগণ সমাজের সকল সদস্যের জন্যই সবচেয়ে বেশি উপকারী ডিসিশন মেকিং ট্যাকটিক্স বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ কৌশল নির্ণয় করতে সক্ষম হন।
গবেষণার ফলাফল বলছে, প্রত্যেকে এবং সমাজ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে যখন সমাজের জনগণ তাদের নিজেদের সোশ্যাল স্ট্যাটাস বা নিজেদের চেয়ে উচ্চ সোশ্যাল স্ট্যাটাসের কাউকে ডোনেশন বা অনুদান দান করবে। আর এটা ইনডিরেক্ট রিসিপ্রোসিটি ফেনোমেননকেই ব্যাখ্যা করছে। আর একারণেই একটি জোতিল সমাজের সকল সদস্যদের জন্যই সোশ্যাল কমপারিজন বা সামাজিক বিচার একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
যদিও কিভাবে সোশ্যাল কমপ্লেক্সিটি বা সামাজিক জটিলতার বৃদ্ধির চাহিদার কারণে মানুষের মস্তিষ্ক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে এব্যাপারে কোন বায়োলজিকাল এভিডেন্স নেই, তবুও গবেষকগণ প্রস্তাব করছেন যে, টিকে থাকার জন্য নিজেদেরকে সোশ্যাল কমপারিজন বা সামাজিক বিচারে যুক্ত করার কারণেই মানুষের সেরেব্রাল কর্টেক্স বিবর্তিত হয়ে বড় হয়েছে। অন্য কথায় বলতে হয়, জাজমেন্টাল বা খুঁতখুঁতে হওয়া বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
তথ্যসূত্র:
- http://www.nature.com/articles/srep31459#introduction
- http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19575315
- http://www.nature.com/nrn/journal/v7/n4/full/nrn1884.html
- http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2375957/
খুবই আগ্রহ উদ্দীপক টপিক। ✌