১৮০ বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষই দায়ী

গত দুই শতাব্দী ধরে বিশ্ব উঞ্চায়নের কারন হিসেবে মানুষেরই কর্মকান্ডকে দায়ী করেছেন একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রজেক্ট। মনুষ্য-কর্মকান্ড যে শুধু ২০ শতকের পর আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী তা নয়। সেই গবেষণা রিপোর্টে  উঠে এসেছে, প্রাথমিকভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ কয়লা পোড়ানোর ফলে ১৮৩০ সাল থেকেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। রিপোর্ট বলছে, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি আগে যা ভাবা হয়েছিল, এটা তারও আগে শুরু হয়। যদিও একেবারে সঠিকভাবে বলতে চাইলে বলতে হয় জলবায়ু পরিবর্তন এর শুরু হয় হাজার হাজার বছর আগে কৃষিকাজের উন্নতির ফলেই। আর মানুষ সারা বিশ্বেই এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লিড রিসার্চার এবং এসোসিয়েট প্রফেসর নেরিলিই আব্রাহাম বলেছেন, গবেষণাটি বলছে  জলবায়ু শিল্প বিপ্লবের আগে থেকেই উঞ্চ হতে শুরু হয়েছিল এবং ১৮৩০ দশকে আর্কটিক এবং ট্রপিক্যাল সমুদ্রে ব্যাপারটি প্রথম সনাক্ত করা গেছে। আসলে এটা যে বেশ আগেই হয়েছিল তা বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন।

প্রফেসর আব্রাহামের ভাষায় “আমরা একটা অসাধারণ বিষয় পেয়েছিলাম। সেই মুহুর্ত এটা আমাদের অবাক করেছিল। কিন্তু ফলাফল একেবারে পরিষ্কার ছিল। যে জলবায়ুর উষ্ণায়নের ব্যাপারে আমরা আজকে সাক্ষ্য দিচ্ছি তা শুরু হয়েছিল ১৮০ বছর আগেই”।

গবেষকদের দলটি গত ৫০০ বছরের জলবায়ুর বিস্তারিত পূর্নগঠনের উপর গবেষণা করেছিল যাতে তারা বর্তমান উঞ্চতার প্রবণতার শুরুর সময়টাকে চিহ্নিত করতে পারেন। তারা মূলত ট্রপিক্যাল মহাসাগরের কোরাল এবং নন ট্রপিক্যাল অঞ্চলের সেডিমেন্ট, গুহা সামগ্রী, গাছের গুড়ি এবং বরফ কোরস পরীক্ষা করেছিলেন।

ইউএনের ইন্টারগর্ভনমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (IPCC) এর দ্বারা গবেষকদল হাজার বছর আগের জলবায়ুর মডেল স্যিমুলেশন করে বিশ্লেষণ করেন। সেই সাথে তারা নতুন এক্সপেরিমেন্ট রিপোর্টগুলোর উঞ্চতার সঠিক কারন নির্ধারণ করেন।

তথ্য ও সিম্যুলেশনে জয়বায়ুর উঞ্চতার সুত্রপাত ১৮৩০ সালের দিকে নিদির্ষ্ট করা হয়েছে এবং পূর্বের উঞ্চতার গ্রীন-হাউস গ্যাসের মাত্রাবৃদ্ধির আচরণ কেমন ছিল তা পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ছিল অনেক কম মাত্র ২৮০ পিপিএম (Parts Per Million) থেকে ২৯৫ পিপিএম। সেই তুলনায় বর্তমান মাত্রা হচ্ছে ৪০৩ পিপিএম। সে সময় সারাবিশ্বে কার্বন উৎপন্ন হয়েছিল খুবই কম। বর্তমান তথ্য গুলো দিয়ে প্রকৃতির অস্থিরতা হতে এর প্রভাব পৃথক করা যায়না। অপরপক্ষে সুমেরু ও ক্রান্তীয় জলের মধ্যে আব্রাহাম যা কিছু পেয়েছিলেন তা অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রভাব ছাড়া সেটা ব্যাখ্যা করা যায়।

সহ-গবেষক ডক্টর হেলেন ম্যাগ্রেগর বলেন, ১৮০০ সালের দিকে মানুষের কারনে বায়ুমন্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাসের মাত্রা খুবই কম বৃদ্ধি পেয়েছিল। পৃথিবীর জলবায়ু প্রভাবিত হওয়ায় এই গবেষনায় পূর্বের উঞ্চতা নির্ণয় করা যায় এবং কার্বন নিঃসরণ কম হলেও তা শিল্প যুগ আরম্ভ হওয়ার সময় পরিমাপ করা যায় ।

গবেষকগণ ১৮০০ সালের দিকের গুরুত্বপূর্ণ আগ্নেগীরির অগ্নুৎপাত পরীক্ষা করেন এবং দেখতে পান এগুলো পূর্বের জলবায়ু উঞ্চতার একটি মাত্র ছোটখাট কারন ।

যাই হোক, এন্ট্রাকটিকার জলবায়ুর উঞ্চতা বেশ দেরীই করে দৃশ্যমান হয়েছে। এর কারন সম্ভবত সামুদ্রিক স্রোত উঞ্চ-জলকে উত্তরের দিকে ঠেলে হিমায়িত মহাদেশ থেকে দূরে পাঠিয়ে দেয়।

অতিরিক্ত কার্বন আসে অনেক উৎস্য থেকে, যেমন বন ধ্বংস এবং তিমিদের দ্বারা সমুদ্রের পরিবর্তন। তথাপি আব্রাহাম বলেন বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সইডের হালকা ও ভারী আইসোটপের মিশ্রণ দেখাচ্ছে যে শিল্প বিপ্লবের পর হতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানীই কার্বন ডাই অক্সাইডের উৎস্য।

তথ্যসূত্র:

  1. http://phys.org/news/2016-08-humans-climate-years.html
  2. http://www.anu.edu.au/news/all-news/humans-have-caused-climate-change-for-180-years
  3. http://science.sciencemag.org/content/349/6245/246.2
  4. http://www.eurekalert.org/emb_releases/2016-08/anu-hhc082316.php
  5. http://www.nature.com/nature/index.html

 

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.