সিন্থেটিক বায়োলজির সাম্প্রতিক সময়ের অর্জন তাক লাগিয়ে দেয়ার মত। নতুন নতুন টেকনোলজি বায়োলজিস্টদের দিয়ে ডিএনএ পরিবর্তন করার ক্ষমতা যা মাত্র পাঁচ বছর আগেও ভাবাই যেত না। সম্প্রতি গবেষকগণ কোন অর্গানিজমের ডিএনএতে এপর্যন্ত সবচাইতে বড় রিইঞ্জিনিয়ারিং (জিনের পরিবর্তন) এর কাজটি করেছেন। গবেষণাটি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়। এখানে দেখানো হয় কিভাবে হারভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকদের একটি দল E.coli ব্যাক্টেরিয়ার জিনের ৬০,০০০ অঞ্চলকে প্রতিস্থাপন করেছেন।
প্রত্যেকটি অর্গানিজমেরই জেনেডিক কোড একেকটি একক এমিনো এসিডকে কোড করে। এই একটি এমিনো এসিডকে কোড করা জেনেটিক কোডকে বলা হয় কোডন। আর এই একেকটি এমিনো এসিড একত্রে যুক্ত হয়ে প্রোটিন গঠন করে। এই সিস্টেমে একটা বিল্ট ইন বা আগে থেকেই তৈরি কৃত ফেইল-সেফ বা ব্যর্থ হলে পরিত্রাণের উপায় থাকে। যার ফাইল কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন কোডন একই রকমের এমিনো এসিড তৈরি করতে পারে। এর ফলে কোন ন্যাচারাল মিউটেশন তৈরি হলেও তা উৎপাদিত প্রোটিনকে প্রভাবিত করতে পারে না। এই একই এমিনো এসিড তৈরিকারী সিনোনিমাস বা সদৃশ কোডনগুলো বায়োলজিস্টদের কাজের ভিত্তি তৈরি করেছে যে কাজের ফলে পুরোপুরি সিন্থেটিক জিনোম প্রস্তুত করা হলেও তা সম্পূর্ণ ফাংশনিং ব্যাক্টেরিয়ার জন্যই কোড করতে সক্ষম হবে, কিন্তু এরপর সেটাকে নিজেদের প্রয়োজনে পরিবর্তিত করা যাবে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটি এর ফ্যারেন ইসাক বলেছেন, “এটা জেনেটিক কোডের নমনীয়তা এবং কিভাবে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের বায়োলজিকাল ফাংশন বা কার্যাবলি এবং প্রোপার্টি বা বৈশিষ্ট্যগুলোকে অর্গানিজমগুলো থেকে রিকোড করা জিনোমের মধ্য দিয়ে বের করে আনা যায় তা দেখানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ”। এই ফলাফলটি পাবার জন্য প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না এমন সিন্থেটিক কোডন তৈরি করতে গবেষকগণ ব্যাক্টেরিয়ার নরমাল বা সাধারণ জেনেটিক্সকে পরিবর্তিত করে দেন। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে তারা E.coli ব্যাক্টেরিয়ার ডিএনএ এর সাতটি ভিন্ন ভিন্ন কোডনের ৬০,০০০টি ইন্সিডেন্সকে পরিবর্তিত করে দেন, এবং এটা করে তারা দেখেন যে এদের জেনেটিক ফাংশন বা বংশগতিয় কার্যাবলি অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। এখনও তাদের এটার সাথে ডিএনএ এর মিলিয়ে দেখা এবং সেটাকে একটি জীবিত কোষে প্রবেশ করানো বাকি, তবে গবেষণার ফলাফল একটি বড় রকমের আশা দেখাচ্ছে যে, এটাও কার্যকরী হবে।
এই গবেষণার সাথে জড়িত থাকা দলটি এটাও দেখান যে এউ গবেষণাটি আমাদের কতটা উপকার করতে পারে। তার E.coli ব্যাক্টেরিয়াকে একারণে ইঞ্জিনিয়ারিং করেন যাতে তারা এমন সব এমিনো এসিড প্রস্তুত করতে পারে যেগুলোর অস্তিত্ব প্রকৃতিতে নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে, এটা এই ব্যাক্টেরিয়াকে ভাইরাস এবং ইনফেকশনের প্রতি আরও বেশি রেজিস্টেন্ট করে তুলবে। কারণ যে ভাইরাসগুলো এই ব্যাক্টেরিয়ার সেলুলার মেশিনারিকে ব্যবহার করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে, এমিনো এসিডের পরিবর্তন হবার কারণে তারা এই ব্যাক্টেরিয়াদেরকে চিনতেই পারবে না এবং তার ফলে তাদেরকে ইনফেক্ট করতে পারবে না। এর ফলে ডিজিস রেজিস্টেন্ট বা রোগ প্রতিরোধী ব্যাটেরিয়া তৈরি করা যাবে। আর এই রোগ প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়াদেরকে অনেক কাজে বিজ্ঞানীগণ ব্যবহার করতে পারবেন।
যাই হোক, এটা ব্যাক্টেরিয়াগুলোর জন্য কেবলমাত্র সুবিধাই বয়ে আনছে না, এতে তাদের জন্য কিছু অসুবিধাও আছে। তাদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এমিনো এসিডের বদলে তৈরিকৃত বা সিন্থেটিক এমিনো এসিড থাকে। এরফলে তারা এই সিন্থেটিক এমিনো এসিডের উপরেই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে যায়। যদি বিজ্ঞানীদের তৈরি এই সিন্থেটিক ব্যাক্টেরিয়াগুলো কোন কারণে পালিয়ে বাইরে চলে যায়, তাহলে তারা বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান না পাওয়ার কারণে মারা যাবে।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply