কেন অনেকে সেক্সটিং ও নিজেদের ন্যুড ছবি আদান প্রদান করে?

ন্যুড ছবি তুলে তো কেউ বসে থাকে না, বা তুলেই রেখে দেয় না, কাউকে না কাউকে দেখানোর ইচ্ছা পোষণ করা স্বাভাবিক, যেমন একটা সেলফি তুলি মোবাইলে আমরা রেখে দেই না, আর যতক্ষণ না স্যোসাল মিডিয়ায় পোস্ট হচ্ছে, এবং লাইক কমেন্ট না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাবলিক শান্তি পায় না।

যৌনতার বিষয়গুলো কমবেশী সকলকেই আকৃষ্ট করে। কেন করে এর সঠিক উত্তর আমার মতো পাবলিকের জানা না থাকারই কথা। তবে একটু নিজেকে দিয়ে ভেবে দেখলে মানবজাতির অনেক কিছু বোঝা সম্ভব।

গবেষক ডারা গ্রীনউড Vassar এর সাইক্লোজির এসোসিয়েট প্রফেসর। তিনি ম্যাস মিডিয়ার উপর আমাদের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন, একই সাথে বর্তমান টেকনোলজির সাথে সক্ষমতা, সেলফি তোলার (নুড সেলফি) অপরিহার্য্যতা উপরেও গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, “আমাদের মাঝে আদিমতার সাথে যুক্ত থাকার একটি আকাঙ্ক্ষা থাকে, কিন্তু আমাদের প্রাত্যহিক জীবন শারীরিকভাবে তার সাথে সংযুক্ত নয়।”

ফলে সহজেই অনুমেয় যে, আমরা বাহ্যিক দিক দিয়ে যতটা সভ্য হইনা কেন , মানসিক দিক দিতে ততটা নয়। কেউ হয়তো তার নিজের ন্যুড ছবি তুলে তার ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামে দিয়ে দিল আর দেওয়ার সাথে সাথে তা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে গেল। এটা বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এটা যদি হয় কোন স্টার বা স্ব-নামধন্য কোন ব্যক্তির তাহলে সেটা আরো বেশী পপুলারিটি পায়। দেখা যাচ্ছে এই প্র্যাকটিসটা আমেরিকায় প্রায় ৫৪ শতাংশ। আবার এডাল্টদের মধ্যে সেক্সটিং করার প্রবণতাও বেশি। দুই আড়াই বছর আগে ম্যাকাফির সিকিউরিটি সফটওয়ার ফার্মের একটা গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্নবিদ্বেষ টেক্সমেসেজ পাঠানো, ন্যুড ফটো অথবা ঝকঝকে ভিডিও পাঠানো ১৮ থেকে ২৪ বছরের বয়সীদের মধ্যে খুবই স্বাভাবিক এবং এদের মধ্যে মধ্যে ৭০ শতাংশই বলেছে তারা এ ধরণের মেসেজ গ্রহণ করে।

ন্যুড ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় দেওয়া একটা ঝুকিপূর্ণ কাজ বটে, কিন্তু তা জেনেও অবলীলায় তারা এটা কেন করে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এটা মানবজাতির মৌলিক বা সহজাত প্রবৃত্তি।

গ্রীনউড বলেন, “আমরা এসব ছবি দেখার পর নিজের সম্পর্কে এক ধরণের ধারণা পোষণ করি এবং আক্ষরিক এবং রুপক অর্থে নিজেদেরকে একটি আইডেন্টিটি দিয়ে নিজেদের বিশেষভাবে মুল্যায়িত করি। তাই ছবির মাধ্যমে নিজেকে প্রচারের একটু বেশী প্রেরণা পাই। কিছু উপায়ে ছবি নেওয়ার সার্বিকতা এবং শেয়ারের জন্য আচরণে অতিরিক্ত কিছু করে পোষণ করা হয়। আসলে আমরা এ ধরণের সেলফি তুলি, আমরা পারি বলেই।”

লাইফ ও লাভ কনসালটেন্ট এমিলি স্ট্রবেল এই বিষয়ে সম্মত এবং তিনি বলেন “যৌন সম্পর্ক প্রকাশে সেক্সটিং একটি ইতিবাচক পদ্ধতি হতে পারে—আলোচনার মাধ্যে চাওয়া-পাওয়ার আদর্শ নিয়ম গুলো যত দ্রুত প্রতিষ্ঠিত করা যায়”। তিনি আরো বলেন, ‘এই জিনিসগুলো মৌলিক মানবিক প্রকৃতি হতেই চালিত হয়, এটা তরুনদের কোন একচেটিয়া প্রতারণা নয়। মৌলিক মানবিক বৈশিষ্টগুলোর দারাই এগুলো অনুপ্রেরণা পায়”।

এভাবে সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এগুলো নিরাপদ মনে হয়। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই ধরণের সম্পর্ক অনেকই বিশ্বাসের সাথেই করে, তারা আর কোন ঝুঁকি নেয়া প্রয়োজন মনে করে না, এটা জাস্ট খেয়ালিপনা হিসেবেই করা।  ইঙ্গিতপূর্ণ ও প্রদর্শনীপূর্ণ বার্তা এই দুয়ের মধ্যে সুক্ষ্ম ব্যবধান আছে। সেলফি একটা জিনিস, যৌনাবেদন ছবি আরেক জিনিস, কিন্তু সম্পূর্ন উলঙ্গ সেলফি সম্পূর্ণ আলাদা কিছুকে নির্দেশ করে।”

সব শেষে প্রযুক্তি হতে পারে সামাজিক যোগাযোগের ও নিজেকে বিচার করার ভাল একটা মাধ্যম। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কত গুলো কাজ আমাদের আলাদা করে দেয়, আমাদের আরো ভাল যোগাযোগ হতে এবং আরো মাল্টি-ডাইমেনশনাল উপায়গুলো হতে আমাদেরকে এগুলো সরিয়ে রাখে।

গ্রীনউড এবং স্ট্রবেল বলেন, ‘ছবিনির্ভর ব্যক্তিত্বপূর্ণ বিষয়টা স্যোশাল মিডিয়া ট্রেন্ডে চলে এসেছে’। আমরা যে এগুলো করি, কারন এইসব আচরণ গুলো মানব প্রকৃতির গোড়ায় বিদ্যমান যদিও বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন এই ট্রেন্ড চলতেই থাকবে।

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.seeker.com/why-do-people-take-nude-photos-of-themselves-1769036206.html
  2. https://techcrunch.com/2014/11/29/the-psychology-of-the-naked-selfie/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.