প্রথমত, এটা একটা ভাল খবর যে আপনি ব্ল্যাকহোল দ্বারা মারা যান নি।
অবাক করার খবরটি হল, সম্ভাবনা আছে যে মহাবিশ্ব সময়ের শুরুতে তৈরি হওয়া মাইক্রোস্কোপিক ব্ল্যাকহোলে পরিপূর্ণ। এগুলো স্পেসে কসমিক বুলেটের মত ছুটে চলেছে। এদের কয়েকটির ভর চাঁদের ভরের সমান হতে পারে, কিছু হতে পারে এস্টারয়েডের ভরের সমান, আবার কিছু হতে পারে এদের ভরের মাঝামাঝি। কিন্তু এদের ভর যতই হোক না কেন, বেশিরভাগই হবে এই বাক্যে লেখা “র” এর ব এর নিচের ফোটার চেয়েও ছোট!
একে সায়েন্স ফিকশনের মত শোনাচ্ছে হয়তো। কিন্তু এটা ফিকশন নাও হতে পারে।
মহাবিশ্বের বেশিরভাগ বস্তু কি নিয়ে গঠিত, এস্ট্রোফিজিসিস্টদের হাতে এই প্রশ্নের উত্তরের অপশন আস্তে আস্তে কমে আসছে। তারা জানেন যে, বস্তুগুলোর শতকরা ৮০ ভাগই গঠিত ডার্ক ম্যাটার দিয়ে যা বাদবাকি ২০ ভাগ সাধারণ বা নর্মাল ম্যাটারে গ্র্যাভিটেশনাল পুল প্রয়োগ করে। এখনও এই ডার্কম্যাটার ৮০ বছর ধরে এক্সপেরিমেন্টের পরও অদৃশ্য হয়ে আছে।
স্পেস এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা ডিভাইসগুলো অনেক বছর ধরেই ডার্ক ম্যাটারের অনুসন্ধান করে চলেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত ডার্ক ম্যাটেরে র কোন সন্ধান মেলে নি। আর তাই বিজ্ঞানীরা ভীত হয়েই এই ধারণাটি করছেন যে, আমাদের চারপাশে প্রচুর সংখ্যক ব্ল্যাকহোল আছে যা তৈরি হয়েছিল ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে।
নাসার কসমোলজিস্ট আলেকজান্ডার কাশলিনস্কি বলেছেন, “স্পেকট্রামের ডার্ক ম্যাটার পার্টিকেল সাইডের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাগুলোর রেঞ্জ দ্রূত ছোট হচ্ছে। যদি সেখানে কিছুই না পাওয়া যায়, এবং ব্ল্যাকহোলেও কিছুই না পাওয়া যায়, তাহলে আমরা হয়তো বিজ্ঞানের একটি সমস্যার মধ্যে আছি”।
মিনি ব্ল্যাকহোলের আশা এবং ক্ষতি
আগেই বলে রাখছি, পদার্থবিদগণ এই ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোলের উপর যে অনেক বেশি আস্থা রাখছেন এমনটা নয়। বর্তমান বিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাষগুলোর মধ্যে একটি হল ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব। আর এর সন্ধান করাও পূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আর কাশলিনস্কি সহ যেসব বিজ্ঞানীগণ এনশিয়েন্ট ব্ল্যাকহোল এর অনুসন্ধান করে চলেছেন, তারা মনে করেন এই সব ব্ল্যাকহোল যথেষ্ট ভারি, এগুলোর ভর সূর্যের ভরের ২০ থেকে ১০০ গুণ। সাম্প্রতিক আলোচিত গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভের ওয়েভের আবিষ্কারের পরে এই ধারণাটির আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দুটো আনইউজুয়াল বা অস্বাভাবিক ব্ল্যাকহোলের (সূর্যের ভরের ৩০ গুণ বেশি ভরের) মধ্যকার সংঘর্ষের ফলে এই গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ তৈরি হয়।
প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাকহোলের উপর একটি আনপাবলিশড রিসার্চ আছে। এই প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাকহোলগুলো বিগব্যাং এর পর নক্ষত্রের ভেঙ্গে পড়া ছাড়াই বিগব্যাং এর হট পার্টিকেল স্যুপে তৈরি হয়েছিল। এই রিসার্চটি সাজেস্ট করছে, এই ব্ল্যাকহোলদের মধ্যে অনেকগুলো ক্ষুদ্র ব্যাসের ব্ল্যাকহোল দল বেঁধে থাকতে পারে। যদি এই মিনি ব্ল্যাকহোলের নির্দেশনা সত্যি হয়, কাশলিনস্কির মতে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভারিটির ভর চাঁদের ভরের চেয়েও কম হবে, কিন্তু এদের ব্যাস সংকুচিত হয়ে প্রায় ০.২৫ মিলিমিটার অথবা মানুষের চুলের প্রস্থের সমান হয়ে যাবে।
ইনস্টিটিউট ফর এডভান্সড স্টাডির এস্ট্রোফিজিসিস্ট টিমোথি ব্রান্ট বলেন, “খুব হালকা, এস্টারয়েড এর ভরের ব্ল্যাকহোলগুলোর আকার একটি এটমের চাইতেও ছোট হবে। কারণ ব্ল্যাকহোল এত ঘন যে, একটি নির্দিষ্ট বাউন্ডারির পর এর ম্যাটারগুলো এত ঘনসন্নিবিষ্টি হয়ে সংকুচিত হয়ে যায় যে সেখান থেকে এদের আর বের করে আনাও সম্ভব হয় না। এই বাউন্ডারিটি গোলকীয় এবং একে ইভেন্ট হরাইজন বলা হয়। আর এটা অতিক্রম করে গেলে সবচেয়ে দ্রুতগামী পার্টিকেল আলোর ফোটনও আর বেরিয়ে আসতে পারে না।”
এস্টারয়েডে ভরের চেয়ে কম ভরের যেকোন ব্ল্যাকহোল অনেক আগেই হকিং রেডিয়েশনের কারণে নিঃশেষিত হয়ে যাবে। হকিং রেডিয়েশন হল প্রকৃতির নিয়মের একটি চমৎকার ফলাফল যা হকিং কর্তৃক ১৯৭৪ সালে প্রস্তাবিত হয়েছিল।
তাহলে কি হবে যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোলগুলো আসলেই সেখানে থাকে? তারা কতক্ষণ পর পর আসে, আর এরা কীই বা করতে পারে?
ব্রান্ট বলেন, ‘এস্টারয়েডের ভরের ব্ল্যাকহোলগুলো যদি ডার্ক ম্যাটার দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে তারা প্রতি এক হাজার বছরে একবার করে পৃথিবী অতিক্রম করে চলে যায়। তাই এদের সনাক্ত করা অনেক অনেক কঠিন। যদি ঠিক সেই জায়গায় কেউ থাকেন তাহলে হয়তো তিনি সেটা পর্যবেক্ষন করতে পারবেন’।
তবে এস্টারয়েডের ভরের ব্ল্যাকহোলগুলো বিপজ্জনক হবে কিনা এই বিষয়ে ব্র্যান্ডট সন্দেহবাদী। কী হবে যদি চাঁদের ভরের সমান ব্ল্যাকহোল পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে আসে? এক্ষেত্রে ব্র্যান্ডট বলেন, “যদি এরকম একটা পৃথিবীর কাছ দিয়ে চলে যায় তাহলে অবশ্যই আমরা সেটা টের পাব, কারণ এটা আমাদের স্যাটেলাইটের অরবিটকে প্রভাবিত করবে, আর জিপিএস এর কাজেও বাঁধার সৃষ্টি করবে”।
ভাল খবরটা হল, ব্রান্ট জানান, এই চাঁদের ভরের মিনি ব্ল্যাকহোল পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝ দিয়ে প্রতি ১০০ মিলিয়ন বছরে একবার করে অতিক্রম করবে। তিনি আরও বলেন, “এই পৃথিবী দিয়ে এরকম ভরের কোন ব্ল্যাকহোল অতিক্রম করা দেখতে হলে আমাদের গড়ে এই মহাবিশ্বের বয়সের চাইতেও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। আর তাই এরকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই কম”।
যাই হোক, তিনি কিন্তু এটাও বলে দিয়েছেন যে, এরকম ঘটনা যদি ঘটেও যায় তাহলে অবশ্যই কেউ না কেউ মারা যাবে। কারণ এটা একটি বুলেটের মত হলেও এর ফলে আসা টাইডাল ফোর্স অবজেক্টকে ডিফর্ম করে দেবে এবং প্রচুর তাপের সৃষ্টি করবে।
কিন্তু এটাই ব্রান্ট এবং কাশলিনস্কির মত বিজ্ঞানীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার নয়। ভীতিকর ব্যাপারটা হল এই সুপার টাইনি এবং সনাক্ত করতে প্রায় অসম্ভব এই ব্ল্যাকহোলগুলো বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কী অর্থ বহন করে।
ব্রান্ট বলেন, “সম্ভাবনা আছে যে ডার্ক ম্যাটার ও নরমাল ম্যাটারের মাঝে গ্র্যাভিটি ছাড়া আর কোনরকম ইন্টারেকশনই হয় না। যদি তাই হয়, তাহলে এটা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক বড় সমস্যা। আমরা তাহলে কখনই এক্সপেরিমেন্টালি বুঝতে পারব না যে আসলেই ডার্ক ম্যাটার আছে কিনা, কারণ আমাদের এক্সপেরিমেন্টে এটা এখনও অদৃশ্য”।
তথ্যসূত্র:
- http://www.businessinsider.com/dark-matter-primordial-black-holes-2016-7
- http://www.businessinsider.com/macho-black-holes-dark-matter-problem-2016-8
- http://www.space.com/33497-dark-matter-search-comes-up-empty-lux-detector.html
- http://arxiv.org/abs/1607.06077v2
Leave a Reply