চারটি মৌলিক বলের মধ্যে গ্র্যাভিটি বা মহাকর্শের সাথেই আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এটাই সূর্যের চারদিকে পৃথিবীকে ঘোরায় এবং প্রতি সকালে যখন আমরা বিছানা থেকে উঠি তখনও এর প্রভাব আমরা বোধ করি। গ্র্যাভিটি খুব পরিচিত হলেও এখনও এটাই চার প্রকার বলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহস্যের।
গ্র্যাভিটি অনেক দুর্বল একটি বল। হ্যাঁ, আমাদের কাছে এটাকে অনেক শক্তিশালী বলে মনে হয় কারণ পৃথিবীটা বিশাল। কিন্তু সামান্য একটি ম্যাগনেটও গ্র্যাভিটিকে ওভারকাম করতে পারে। গ্র্যাভিটির এই দুর্বলতা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের, কারণ এর জন্যই গ্রহ এবং নক্ষত্রের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পার্টিকেল ফিজিক্সে এটাকে খুব একটা ভালভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। গ্র্যাভিটি এত দুর্বল কেন আমাদের কাছে এটা ব্যাখ্যা করার কোন উপায় জানা নেই।
N naturalness নামে একটি নতুন থিওরি উইক গ্র্যাভিটি এর একটি চমৎকার সমাধান দিতে পারে। আর এই থিওরি অনুসারে পার্টিকেলের তিনটি ফ্যামিলির বদলে (প্রত্যেকটি ফ্যামিলি যেখানে দুটো কোয়ার্ক, একটি নিউট্রিনো এবং একটি ইলেক্ট্রন সদৃশ পার্টিকেল নিয়ে গঠিত) প্রকৃতিতে আসলে ১০ কোয়াড্রিলিয়ন (1016) ফ্যামিলি রয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব ওরেগন এর গবেষক এবং গবেষণাটির কো-অথর টিম কোহেন বলেন, ‘এই আইডিয়াটি একটু ক্ষেপাটে। লার্জ হেড্রন কলাইডারে নতুন ফিজিক্সের অভাব আমাদেরকে কিছু নতুন পার্টিকেল এর পরিচিতি করাতে অনুপ্রাণিত করেছে, অর্থাৎ 1016 টি নতুন পার্টিকেল এর পরিচিত করাতে অনুপ্রাণিত করেছে।’
এই মডেলটির জন্য বিগব্যাং এর প্রথম মূহূর্তগুলোতে এক ধরণের পার্টিকেলের কাজের প্রয়োজন হয়। এর নাম হল রিহিয়েটন (reheaton)। এরপর সময়ের সাথে সাথে কসমিক ইনফ্লেশনের ফলে এই পারটিকেলের ক্ষয় হতে থাকে। আর যেহেতু পার্টিকেলগুলো সর্বনিম্ন সম্ভাবনার এনার্জি স্টেট বা লোয়েস্ট পসিবল এনার্জ স্টেটে থাকতে পছন্দ করে, তাই তৈরি হওয়া এই “অনুমোদিত” পার্টিকেলগুলো হল স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সেই চিরচেনা সদস্য যা উইক গ্র্যাভিটেশনাল ইন্টারেকশনের জন্য দায়ী হয়ে থাকে।
কোনদিন এই বিলিয়ন বিলিয়ন পার্টিকেলকে দেখা যায় নি বলে এই ধারণাটিকে এবসার্ড বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই প্রথম থিওরেটিকাল আইডিয়া নয় যেখানে একটি উপযোগী সমাধান খোঁজার জন্য বিশাল সংখ্যক প্যারামিটার ব্যবহার করা হয়েছে। বলাই বাহুল্য যে মহাবিশ্বের ধ্রুবক এবং নিয়মগুলো একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জের পরে গিয়ে ভেঙ্গে পড়ে, আর সেই ধ্রুবক বা নীতিতে যখন অসঙ্গতি দেখা দেয় (যেমন এক্ষেত্রে উইক গ্র্যাভিটি), তখন তা আমাদের ইঙ্গিত করে যে সেই দিকে আমাদের অনুসন্ধানের জন্য আরও বিজ্ঞান লুকিয়ে আছে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল আমাদেরকে পার্টিকেল ফিজিক্স এর সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যাটি প্রদান করে। কিন্তু আমরা জানি যে এটা সীমাবদ্ধ। তাই পদার্থবিজ্ঞানীগণ থিওরি এবং এক্সপেরিমেন্ট উভয়দিক থেকেই এই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ঊর্ধ্বে দৃষ্টিপাত করেন। এই N naturalness থিওরির কিছু দাবীকে ল্যাবে এক্সপেরিমেন্ট এর মাধ্যমে টেস্ট করা যাবে। সুতরাং আমরা খুব শীঘ্রই বুঝতে পারব যে এই আইডিয়াটির পেছনে সত্যতা কতখানি।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply