২০১০ সালে পদার্থবিজ্ঞানীগণ প্রোটনের আকারে একটি সমস্যা আবিষ্কার করেছিলেন। তারা হাইড্রোজেন পরমাণু নেন এবং তার ইলেক্ট্রনকে সরিয়ে মিউওন (ইলেক্ট্রনের ভারি কাজিন) বানিয়ে দেন। এরপর তারা দেখেন কোন অজানা কারণে প্রোটনটির ব্যাসার্ধ কমে গেল। এই ঘটনার নাম দেয়া হয় “প্রোটন রেডিয়াস পাজল”।
এরপর দলটি পরীক্ষাটি আবার করলেন হাইড্রোজেনের একটি আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম ব্যবহার করে। এবং যখনই ইলেক্ট্রনকে মিউওন দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হল তখনই আবার বিজ্ঞানীগণ নিউক্লিয়াসের আকারে বৈষম্য খুঁজে পেলেন। বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারটি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করা হয়।
মিউওন একটি মৌলিক কণিকা বা এলিমেন্টারি পার্টিকেল যা ইলেক্ট্রনের চাইতে ২০০ গুণ বেশি ভারি। এত ভারি হবার কারণে এটা কোন পরমাণুতে যুক্ত করলে তা ইলেক্ট্রন আগে নিউক্লিয়াসের যত কাছে ছিল তার চাইতেও বেশি কাছাকাছি চলে আসে। আর এটার নড়াচড়া বা মুভমেন্ট এটোমিক নিউক্লিয়াসে পার্টিকেলদের বৈশিষ্ট্যগুলোর গবেষণায় ব্যবহার করা হয়।
যাই হোক, অবাক করার ব্যাপার হল এটার নিউক্লিয়াসকে পরিবর্তন করার কথা না। ইলেক্ট্রন এবং মিউওনের একই ইলেক্ট্রিক চার্জ থাকে যা তাদেরকে নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি এনে রাখে। কিন্তু এতে প্রোটনের আকারের পরিবর্তন হবার কথা না।
প্রোটনের আকারের এই গড়মিলের জন্য বেশ কিছু ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে। এদের একটি হল আমরা একটি অজানা বলের এভিডেন্স দেখতে পারছি, যদিও এর সম্ভাবনা অনেক কম।
দলটি মনে করছে, এই গড়মিলটা হয়তো নতুন মেজারমেন্টের না, বরং আগের মেজারমেন্টেরই। হাইড্রোজেন স্পেকট্রোস্কোপি ব্যবহার করে করা পূর্বের প্রোটন এবং ডিউটেরন (ডিউটেরিয়ামের নিউক্লিয়াস) এর হিসাবই হয়তো একই ডিগ্রী অব প্রিসিশনে পৌঁছতে পারে নি।
সুইজারল্যান্ডের পল শেরের ইনস্টিটিউট (PSI) এর গবেষক এবং গবেষণাটির কো-অথর এল্ডো এন্টোগনিনি বলেন, “প্রাকৃতিকভাবেই প্রোটনের মত ডিউটেরনের প্রোটনের মত দুটো ভিন্ন আকার থাকতে পারে না। এই রহস্যটি খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব যদি আমরা হাইড্রোজেন স্পেকট্রোস্কোপির একটি সর্বনিম্ন এক্সপেরিমেন্টাল প্রবলেম ধরে নেই”।
এই প্রোটনের ফলাফলের জন্য বিশ্বের সব জায়গার ল্যাব তাদের মিজারিং এপারেটাসগুলোকে আপগ্রেড করছে যাতে আরও বেশি নিখুঁত ফলাফল লাভ করা যায়। তবে এখনও এই ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যায় নি যে এই গড়মিলটি আসলেই কম প্রিসাইজ মেজারমেন্টের বা কম নিখুঁত পরিমাপের কারণে হয়েছে। কিন্তু দলটি এইই ভেবে খুশি যে তাদের এই আবিষ্কারটির কারণে বিশ্বের সব ল্যাবরেটরি তাদের যন্ত্রপাতি আপগ্রেড করছে।
গবেষণাটির প্রধান অথর এবং PSI এর গবেষক র্যানডলফ পল বলেন, “যদি আমাদের লব্ধ মান পূর্বের হিসাবের মানের সাথে মিলে যেত, তাহলে প্রোটনের ব্যাসার্ধ নিয়ে এত বড় রহস্যের দ্বারে এসে আমরা উপস্থিত হতাম না। কিন্তু সেই সাথে আমরা সারা বিশ্বের বিজ্ঞান মহলে এরকম এত নিখুঁত মেজারমেন্ট সেটাপের জন্য তোড়জোড়ও দেখতে পেতাম না”।
আশা করা যায়, নতুন মেজারমেন্ট খুব শীঘ্রই এই রহস্যের ঘোলাটে জলকে পরিষ্কার করে দেবে। আমরা জানতে পারব আসলেই এটা কেবল হিসাবের ভুল নাকি কোন নতুন রহস্যের হাতছানি।
তথ্যসূত্র:
- http://science.sciencemag.org/content/353/6300/669
- https://www.psi.ch/media/the-deuteron-too-poses-a-mystery
Leave a Reply