মাইটোকন্ড্রিয়াবিহীন ইউক্যারিয়ট!

যেসব অর্গানিজমে ডিএনএ কোন মেমব্রেন বা ঝিল্লী দিয়ে আবৃত থাকে তাদেরকে ইউক্যারিয়ট বলা হয়। আমাদের চারপাশে দেখা যত জীবন আছে তার প্রায় সবই ইউক্যারিয়ট। অনেক দিন ধরেই ভাবা হয়ে আসছে যে ইউক্যারিয়টদের অবশ্যই মাইটোকন্ড্রিয়া থাকতে হবে। মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ারহাউজ বলা হয়। কোষের এই ছোট অঙ্গাণুটি অর্গানিজমটিকে শক্তি প্রদান করে এবং তাই একে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তারা প্রয়োজনীয় নাও হতে পারে কেননা গবেষকগণ প্রথমবারের মত মাইটোকন্ড্রিয়াবিহীন ইউক্যারিয়ট আবিষ্কার করেছেন।

পূর্বেও এরকম মাইটোকন্ড্রিয়াবিহীন কিছু ইউক্যারিয়টের কথা শোনা গিয়েছিল যেমন গাট বা অন্ত্রের মাইক্রোব Giardia intestinalis। কিন্তু আরও পরে গবেষণায় দেখা যায় এদের অনেক ক্ষুদ্র মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে যাকে সনাক্ত করা খুব কঠিন। কিন্তু Monocercomonoides গণের বেলায় গবেষকগণ মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনের একটি জেনেটিক এনালাইসিস করে দেখেন যে এর মধ্যে মাইটোকন্ড্রিয়ার কোন ট্রেসই নেই।

এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয় কারেন্ট বায়োলজি  জার্নালে। গবেষণাটির কো অথর আনা কার্নকোস্কা জানান, “নিম্ন অক্সিজেনের পরিবেশে, ইউক্যারিয়টদের প্রায়ই ছোট আকৃতির মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে। কিন্তু এরকমটা বিশ্বাস করা হত যে মাইটোকন্ড্রিয়ার কিছু কাজ ইউক্যারিয়টদের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটা ছাড়া ইউক্যারিয়টের অস্তিত্বকে কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু আমরা এমন একটা ইউক্যারিয়টিক মাইক্রোব পেয়ে গেলাম যাতে কিনা কোন মাইটোকন্ড্রিয়নই নেই”।

অন্ত্রের পরিবেশ একটি নিম্ন অক্সিজেনের পরিবেশ। আর তাই এখানকার অনেক মাইক্রোবেরই মাইটোকন্ড্রিয়া ছোট। আবার সেই সাথে তারা যে পরিবেশে থাকছে তা নিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। আর তাই গবেষকগণ ভাবছেন, এই এখানকার Monocercomonoides দের এই মাইটোকন্ড্রিয়ার কোন প্রয়োজন হয় না, আর তাই তারা এটাকে হারিয়ে ফেলেছেন। এই মাইক্রোবরা বরং মাইটোকন্ড্রিয়া দিয়ে নিজেদের জন্য শক্তি উৎপাদন না করে তাদের আশেপাশের পুষ্টিবহুল পরিবেশ থেকে সরাসরি পুষ্টি নিয়ে সেগুলোকে ভেঙ্গে নিজেদের জন্য শক্তি প্রস্তুত করে ফেলে।

তবুও একটা সমস্যা থেকে যায়। কারণ মাইটোকন্ড্রিয়া কোষে শক্তি প্রদান ছাড়াও আরেকটি কাজ করে। তারা কোষকে প্রয়োজনীয় আয়রন এবং সালফারও প্রদান করে যা বিভিন্ন প্রোটিনের জন্য দরকার হয়। এটার সমাধানের জন্য  Monocercomonoides মাইক্রোবরা সম্ভবত ব্যাক্টেরিয়া থেকে জিন ধার করেছে যার ফলে তারা সাইক্লোস্টিক সালফার মোবাইলাইজেশন সিস্টেম এর দ্বারা মাইটোকন্ড্রিয়ার সালদার, আয়রন প্রদানের মেকানিজমের কাজ চালিয়ে নিতে পারে।

যেখানে সব এভিডেন্সই পাওয়া হয়ে গেছে, তখন কেউ কেউ বললেন গবেষকদের বিষয়টি ডাবল চেক করে নেয়া দরকার। কিন্তু সে যাই হোক, টেক্সটবুকগুলো যে পরিবর্তন করতেই হবে এটার সম্ভাবনাই এখন অনেক অনেক বেশি। গবেষকরা বলছেন, এটা ছাড়াও আরও মাইটোকন্ড্রিয়বিহীন মাইক্রোব এর সন্ধান মেলার সম্ভাবনা আছে। কার্নকোস্কা জানান, “এই অদ্ভুত অর্গানিজমটি এমন একটি কোষের উদাহরণ যা টেক্সটবুকের আদর্শ কোষের মডেলের নিয়মটিকে অস্বীকার করেছে। আর আমরা মনে করছি এই মাইক্রোবিয়াল ইউক্যারিয়ট বা প্রোটিস্টের জগতে এরকম আরও শতশত লুকানো বৈচিত্র্য রয়েছে”।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.cell.com/current-biology/abstract/S0960-9822(16)30263-9?_returnURL=http%3A%2F%2Flinkinghub.elsevier.com%2Fretrieve%2Fpii%2FS0960982216302639%3Fshowall%3Dtrue
  2. http://phys.org/news/2016-05-eukaryote-lacks-mitochondria.html

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.