ভারতবর্ষে শাকাহারী বিষয়টা নতুন নয়, বরং বেশ পুরানোই। ছোটবেলা আমি নিজেও মাছ মাংশ হতে বিরত ছিলাম। তবে স্বভাবে নয়, অভাবে। বলা যায় একদিকে মাছ মাংশ ডিম দুধ কেনার টাকা ছিল না, অন্যদিকে রান্না করার বিষয়টি। ২০০১ সাল হতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ঢাকায় একলা একলা এভাবেই জীবন যাপন করেছিলাম। অবশ্য বাইরে কেউ খাওয়ালে মাছ মাংশ খাওয়ালে না করতাম না। যেমন প্রাইভেট টিউশনি বাসায় মাঝে মাঝে আমন্ত্রণ পাওয়া যেত, তবে নিজে রান্না করা খুবই দায় ছিল বলেই।
হাতে একটু পয়সা কড়ি আসতেই আবার মাছ মাংশ সহ অন্যান্য প্রানীজ খাদ্য খাওয়া শুরু, ফলাফল পেটে চর্বি জমে এখন উঠতে বসতেই অস্বস্তিবোধ হয়। এবং ভাবছি কেন যে আবার এই সব প্রাণীজ খেতে শুরু করলাম, মনে হচ্ছে আগেই তো ভাল ছিলাম।
তবে পশ্চিমা বিশ্বে নিরামিষভোজী বা ভিগানদের সংখ্যা এখন বেশ বাড়ছে, কারণ হিসেবে বলা যায় প্রাণী রক্ষা অধিকার কর্মীদের আন্দোলন এবং স্টেরিওটাইপ ভেগানদের একগুয়েমি। না, এটাই মূখ্য কারণ হয়। আসল কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পর্কে-সচেতনতা বাড়ছে তরুণদের মধ্যে।
যেমন পনের বছরের ইসাবেলা গার্ডিয়ানকে জানায় তার ভিগান হওয়ার কারন “প্রধান কারন হচ্ছে আমি সব প্রাণীদের বন্ধু হিসেবে দেখি এবং শুকর খেতে চাই না, যেমন চাইনা একটা কুকুরকে খেতে পারি না। প্রত্যেক প্রাণীই বাঁচতে চায়, নিঃশ্বাস নেয়, অনুভূতি প্রবণ এবং তারা মরতেও চায় না, আমি তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে চাই না”।
জার্মানি, ইউকে এবং আমেরিকায় ভিগানদের (শাকাহারী বা যারা প্রাণীজ খাবার খান না) বৃদ্ধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তরুণরাই এটার লিডিং পজিশনে।
একগুয়ে শাকাহারীদের (যারা প্রাণীজ দ্রব্য খায় না) দশকের পর দশক ধরে লক্ষ্য ছিল সকলেই শাকাহারী হোক। তাদের সময় মনে হয় এসে গেছে। যারা প্রাণীজ দ্রব্য মুক্ত ডায়েট করতে পছন্দ করতেন, তারাই শেষ হাসিটা হাসছে এবং হাসবে।
ভিগানিজম বর্তমানে পশ্চিমা দেশ গুলোয় বাড়ছে, বিশেষ করে ৩৪ বছরের নিচে যারা এবং বেশ প্রশংশনীয় হারে নতুন নতুন শাকাহারীতে রুপান্তর হচ্ছে।
বার্লিনকে বিবেচনা করা হচ্ছে ইউরোপে ভেগানদের রাজধানী প্রায় ৮০ হাজার ভেগান শাকাহারী বিদ্যমান যা জার্মানির টোটাল সংখ্যার ১০% নিউজ এজেন্সি ফ্রান্স ২৪ এর রিপোর্ট অনুসারে। বার্লিন হচ্ছে ইউরোপে ভিগান আন্দোলনের প্রথম সারির দিকের সাথে প্যারিস এবং লন্ডন খুব বেশী দূরে নয় অবশ্য। এই শহরে ৬০ টা ভিগান রেস্টুরেন্ট এবং প্যারিসে ২৪ টা ও লন্ডনে ৪০ টার মতো যেখানে সুস্বাধু টিপিক্যাল ভিগান খাবার পাওয়া বা পছন্দ করা যায় এমনি সয়া আইসক্রিমের দোকান ও শতভাগ ভিগান পিজ্জাও পাওয়া যায়।
এক ব্লগার লিখেছেন বার্লিন বার্ষিক ভিগানিজদের সামারফেস্টে ভিগান দোকানীরা এবং প্রাণী অধিকার কর্মীরা আসেন এবং তাদের লাইফস্ট্যাইল প্রাণীজ দ্রব্য মুক্ত হওয়াকে অভিবাদন জানান।
উনি লিখেছেন ফেস্টিভলে একটা তথ্যচিত্র দেখার পর আমার মনে হয়েছে এটা ছাড়া আর কোন অপশন নেই, যদি আমি আমাকে সত্যিকার অর্থে মূল্যায়ন করতে চাই, তাহলে আমাকে ভিগান হতে হবে। আমার জন্য প্রথম ও সর্বোপরি নৈতিক পছন্দেরও, তিনি আরো বলেন।
তিনি বলেন বার্লিনে ভিগান হওয়া খুবই সহজ, কারন এখানে সহজেই ভিগান রেস্টুরেন্ট এবং গ্রোসারি স্টোর পাওয়া যায় । এই জন্যই বার্লিনকে বলা যায় ইউরোপের ভিগানের কেন্দ্রবিন্দু বা রাজধানী।
জার্মানি জাস্ট ইউরোপের একটা দেশে সম্প্রতি বছর গুলোয় ভিগানিজমদের সবচেয়ে বেশী দেখা যাচ্ছে। গার্ডিয়ানের মতে ইউকে তে ২০০৬ সালে দেড় লাখের মতো ছিল, বর্তমানে ভিগানদের সংখ্যা ৩৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
নর্দানম্পশায়ারের সতের বছরের Euan Reece গার্ডিয়ানকে বলেছিল স্যোসাল মিডিয়া এবং খোলামনের ইয়াংরা ভিগান ডায়েটের ব্যাপারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্যসূত্র:
http://www.france24.com/en/20160816-berlin-goes-vegan-with-butcher-shops-singles-night
http://www.thelocal.de/20160811/how-berlin-helped-me-go-vegan
Leave a Reply