প্রকৃতির পঞ্চম বলের অস্তিত্বের সম্ভাবনা

কয়েক মাস আগে, কয়েকজন হাঙ্গেরিয়ান বিজ্ঞানী একটি গবেষণায় কিছু বেরিলিয়াম এটমের নিউক্লিয়ার ডিকে এর ফলে একটি নতুন পার্টিকেল ডিটেক্ট করেন। এরপর কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এই বিষয়টি ঘেটে দেখেন এবং ধারণা করেন যে এই উপাত্তটি প্রকৃতির একটি নতুন বলের সম্ভাবনার একটি এভিডেন্স।

দলটি সম্প্রতি একটি পেপার প্রকাশ করেছে। এটা প্রকাশিত হয়েছে ফিজিকাল রিভিউ লেটারস জার্নালে। এই পেপারে তারা এই নতুন বলের জন্য একটি ম্যাথমেটিকাল মডেল তৈরি করেছেন। বর্তমানে প্রকৃতিতে থাকা বলগুলো নিয়ে যে থিওরিটি প্রচলিত তার নাম হল স্ট্যান্ডার্ড মডেল অব পার্টিকেল ফিজিক্স। তাদের এই মডেলটি এই থিওরিটির একটি সংযোজন। এই মডেলটি ডার্ক ম্যাটার সহও আরও বেশ কিছু জিনিসের ব্যাখ্যা দিতে সাহায্য করতে পারে যেগুলো বর্তমান থিওরি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। গবেষকগণ বিশ্বাস করছেন যে, এটা নতুন ফোর্সের জন্য প্রথম সূত্র।

মহাবিশ্বে চারটি বল আছে। এগুলো হল স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স, উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স, গ্র্যাভিটি এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম। স্ট্যান্ডার্ড মডেলটি গ্র্যাভিটি ছাড়া অন্য বলগুলোর ইন্টারেকশনকে ব্যাখ্যা করতে পারে। এটা এমন একটি ফিজিক্সের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয় যা আমরা আগে কখনও দেখিনি। এই নতুন সম্ভাবনাময় পঞ্চম বলটি ডার্ক ম্যাটারের সাথে ইন্টার‍্যাক্ট করতে পারে। ডার্ক ম্যাটার হল একটি অদৃশ্য উপাদান যা মহাবিশ্বের ৩০ শতাংশ, যদিও এর অস্তিত্ব এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায় নি।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার গবেষক এবং গবেষণাটির লিড অথর জোনাথন ফেং বলেছেন, “গবেষকগণ এটা যে একটি নতুন ফোর্স, তা দাবী করতে সক্ষম হন নি। তারা কেবল একটি নতুন ইভেন্ট দেখেছেন যা একটি নতুন পার্টিকেলকে ইঙ্গিত করেছে। কিন্তু এখনও তাদের কাছে এটা পরিষ্কার নয় যে এটা আসলে একটি ম্যাটার পার্টিকেল নাকি কোন ফোর্স-কেরিং বা বলবাহী পার্টিকেল”।

হাঙ্গেরিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস এর কয়েকজন নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট ২০১৫ সালে ডার্ক ফোটন এর সন্ধানে গবেষণাটি করেছিলেন। ডার্ক ফোটন হল একধরণের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পার্টিকেল যা ডার্ক ম্যাটারের সাথে ইন্টারেক্ট করে। তারা বিরিলিয়ামের রেডিওএক্টিভ ডিকেতে একটি এনোমালি বা বিশৃঙ্খলা দেখতে পান। এই বিশৃঙ্খলাটি ইলেক্ট্রনের চেয়ে ৩০ গুণ ভারি একটি নতুন পার্টিকেলকে নির্দেশ করে।

এরপর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া ও ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকি এর গবেষকগণ একটি ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রস্তাব করেছেন। তারা বলেছেন, এই পার্টিকেলটি আসলে একটি ফোর্স কেরিয়ার, ঠিক যেমন ফোটন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স বহন করে। এই নতুন “এক্স বোজন” একটি নতুন রহস্যময় পঞ্চম বল বহন করতে পারে যা কেবলমাত্র ডার্ক ম্যাটারের সাথে ইন্টারেক্ট করবে।

ফেং জানান, “যদি এটা সত্যি হয় তাহলে এটা হবে একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার। কয়েক দশক ধরে আমরা জেনে আসছি যে, মৌলিক বল মোট চারটি: গ্র্যাভিটেশন, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ও সবল নিউক্লিয়ার বল। আরও গবেষণার দ্বারা যদি নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে, এই পঞ্চম বলের আবিষ্কার মহাবিশ্ব নিয়ে আমাদের ধারণা সম্পূর্ণভাবে বদলে দেবে। এর ফলে বলগুলো এবং ডার্ক ম্যাটারের ইউনিফিকেশন বা একীভূতকরণও সম্ভব হবে”।

মাত্র একটি এক্সপেরিমেন্টের ফলে আমরা হয়তো এই সম্ভাবনাময় নতুন বল সম্পর্কে অনেক কমই জেনেছি। কিন্তু ভাল খবরটি হল এই নতুন পার্টকেলের শক্তি পৃথিবীর বেশিরভাগ ল্যাবরেটরিতেই এক্সেসিবল। আর তাই এই নতুন বিষয়টির সত্যিকারের প্রকৃতি উদ্ঘাটন করার জন্য আরও অনেক পরীক্ষা যে অচিরেই হতে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়তো আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের মহাবিশ্বের অনেক অজানা জ্ঞানের দরজা খুলে দিতে চলে চলেছি।

 

তথ্যসূত্র:

  1. http://www.iflscience.com/physics/have-we-detected-hint-new-force/
  2. http://journals.aps.org/prl/abstract/10.1103/PhysRevLett.117.071803
  3. https://news.uci.edu/research/uci-physicists-confirm-possible-discovery-of-fifth-force-of-nature/

 

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.